Bonedi Bari Durga Puja

পুজোয় ‘হিট’ বনেদি বাড়ির সফর! কী কী জিনিস মাথায় রাখছে আয়োজক ভ্রমণ সংস্থারা?

কেবল বনেদি বাড়ি নয়, খ্যাতনামা পুজো মণ্ডপও নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন একাধিক ভ্রমণ সংস্থা। যে সংস্থাগুলি এই আয়োজন করছেন তাঁরা কোন কোন দিক মাথায় রাখছেন?

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৮:৩৯
Share:

সংগৃহিত চিত্র

আজকাল অনেকেই এই ভিড় ঠেলে, পায়ে হেঁটে ঠাকুর দেখতে যান না। বিশেষ করে বয়স্করা। তাঁরা সেই তুলনায় পছন্দ করেন কোনও ভ্রমণ সংস্থার সঙ্গে হাতে গোনা কয়েকটি খ্যাতনামা পুজো দেখে আসতে। আরও ভাল করে বললে, বনেদি বাড়ির পুজো দেখতে।

Advertisement

কী সুবিধা হয়? এতে, এক তো ভিড় ঠেলা, ধাক্কাধাক্কির কোনও ব্যাপার থাকে না। বরং আরাম করে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গাড়ি করে সেই বাড়িগুলির ইতিহাস জানতে জানতে পৌঁছে যাওয়া যায়। সঙ্গে সেই বাড়ির প্রতিমার কাছে যেখানে সাধারণত অবাধ প্রবেশের ব্যবস্থা থাকে না, তার কাছে পৌঁছানো যায়। বাড়ির লোকের মুখ থেকে সেই বাড়ির সঙ্গে জড়িত ইতিহাস শোনা যায়।

কেবল বনেদি বাড়ি নয়, খ্যাতনামা পুজো মণ্ডপও নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকেন একাধিক ভ্রমণ সংস্থা। বলা যায়, আজকালকার পুজোয় ব্যাপারটা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। কলকাতা তো বটেই, জেলার পুজোও মানুষ এ ভাবেই দেখতে যাচ্ছেন। সেখানে দাঁড়িয়ে যে সংস্থাগুলি এর আয়োজন করছেন তাঁরা কোন কোন দিক মাথায় রাখছেন?

Advertisement

এই বিষয়ে একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার বিনায়ক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি আনন্দবাজার ডট কমকে বলেন, “খুব একটা ‘হেকটিক’ না করার চেষ্টা করি। কিন্তু পুজোর সময় যেহেতু ট্রাফিক নিয়ম বেশি থাকে, সেহেতু কিছু ক্ষেত্রে যেমন, শোভাবাজার রাজবাড়ির ক্ষেত্রে কিছুটা হাঁটতে হয়। তবুও আমরা চেষ্টা করি যতটা কম হাঁটিয়ে, বা হাঁটতে হলেও যথাযথ সাহায্য করে, খেয়াল রেখে নিয়ে যাওয়ার। আমাদের টিম থাকে, যাঁরা ওঁদের সাহায্য করেন। বাড়ির লোকের জন্য যে ভাবে আমরা করি, তাঁদের খেয়াল রাখা, যত্ন রাখা সবটাই করি।” তিনি জানান প্রয়োজন হলে প্রাথমিক চিকিৎসা থেকে হাসপাতালে ভর্তি করা পর্যন্ত সবটাই তাঁরা করে থাকেন, এবং সেই ব্যবস্থাও রাখেন।

প্রায় একই সুর শোনা গেল আরেক আয়োজক তন্ময় সাহার মুখে। তিনি বলেন, “আমাদের একটা ফর্ম থাকে যেখানে আমরা অতিথিদের থেকে কিছু জিনিস জেনে নিই, যেমন কারও কোনও রোগ আছে কিনা, হুইলচেয়ার লাগবে কিনা। অনেকে হুইলচেয়ার চান, অনেকে বলেন একটু হাত ধরে নিয়ে গেলেই হবে। এ ছাড়া আমাদের তরফে বলে দেওয়া হয় যে তাঁদের যেগুলি জরুরি ওষুধ সেগুলি যেন তাঁরা সঙ্গে রাখেন।”

এমন পুজো সফরের ক্ষেত্রে আর কী কী আয়োজন রাখেন তাঁরা? বিনায়ক বলেন, “আমরা একটা রেকর্ড চালাই , যেখানে যাচ্ছি সেখানকার ইতিহাস থাকে তাতে। এ ছাড়া, সেই সময়ের গান, সেই সময়ের গল্প শোনানো হয়। আর বাড়ি যাওয়ার পর সেখানকার লোকজনরা নিজেরাও তাঁদের বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে জানান। অতিথিরা পুজোর পদ্ধতি বসে দেখতে পারেন। সেখানকার ইতিহাস নিজের চোখের সামনে দেখতে, ছুঁতে পারেন। এ ছাড়া আমাদের তরফে প্রাতঃরাশ এবং মধ্যাহ্নভোজের ব্যবস্থা থাকে।” শুধু তাই নয়, তিনি জানান, অন্যান্য সাপোর্ট যেমন মহিলা বা বয়স্কদের বাথরুমে যাওয়ার ব্যবস্থা, এগুলি তাঁরা যেখানে যান সেখানেই ব্যবস্থা থাকে। সে ভাবেই পরিকল্পনা করা হয়।

আরেক পুজোর সময় এমন বনেদি বাড়ির সফর করানো আয়োজক সংস্থার তরফে পাপড়ি দাস রায় জানান, তাঁদেরও কম বেশি একই আয়োজন থাকে। তাঁর কথায়, “আমরা কোনও বাড়িতে ঢোকার আগে তাঁদের সেই বাড়ি সম্পর্কিত ইতিহাস, গল্প বলে দিই, যাতে অতিথিদের এটা না মনে হয়, যে সেই বাড়িটা কেবলই একটা ইট, কাঠ, পাথর দিয়ে তৈরি কোনও জায়গা। যাতে তাঁরা সেই যোগসূত্র পান সেই চেষ্টা করি। যদি কোনও বাড়ির পুজোতে কোনও অঘটন ঘটে থাকে, বা তেমন কোনও স্মরণীয় ঘটনা ঘটে থাকে সেটাও বলার চেষ্টা করি। প্রত্যেককে আমরা ‘গাইড’ করে নিয়ে যাই। আমরাও সঙ্গে যাই। প্রথমে একজন, শেষে একজন থাকে।” তন্ময় জানান তাঁরা, এ ছাড়া তাঁদের তরফে ক্যুইজের ব্যবস্থাও করে থাকেন অতিথিদের জন্য। সেখানে তাঁরা মূলত, বাংলা ও বাঙালি, যে বনেদি বাড়ি যাচ্ছেন অতিথিদের নিয়ে সেখানকার নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সফর শেষের বিজয়ীদের উপহার দেন।

কোন কোন ঠাকুর ঘুরিয়ে দেখান এই আয়োজক সংস্থাগুলি? পাপড়ি বলেন, “উত্তর কলকাতার মিত্র বাড়ি, রাসমণির বাড়ি, ইত্যাদিতে নিয়ে যাই আমরা অতিথিদের। আর এ বার হুগলি জেলার বনেদি বাড়ির পুজো দেখাতে নিয়ে যাব।” অন্যদিকে বিনায়ক জানান তাঁরাও কলকাতা, কলকাতার বাইরে দুই জায়গাতেই এ বার অতিথিদের নিয়ে যাচ্ছেন বনেদি বাড়ির ঠাকুর দেখাতে। কলকাতার মধ্যে তাঁরা মতিলাল শীলের বাড়ি, ঠনঠনিয়া দত্ত বাড়ি, চোরবাগান চট্টোপাধ্যায় বাড়ি, শোভাবাজার রাজবাড়ি, খেলাত ঘোষের বাড়ির, বন্দুকওয়ালা দাঁ বাড়ি, ইত্যাদি দেখাবেন।

এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement