সংগৃহীত চিত্র
দীপান্বিতা অমাবস্যার রাত। দিকে দিকে আলো, উৎসব আর নতুন প্রাণের সুর। কিন্তু এই আলোর মাঝেই বাঁকুড়া জেলার ইন্দাসের মির্জাপুরে এক অন্য ছবি। না, কোনও প্রতিমা নয়, এ পুজোয় দেবীর আসনে বসেন রক্ত-মাংসের মানুষ। তিনি সাঁতরা পরিবারের বড় বউ, হীরাবালা সাঁতরা। এ যেন চিরাচরিত কালী পুজোর ভিড়ে এক টুকরো লোককথা, এক গভীর বিশ্বাস আর ভালবাসার বুনন।
বহু প্রজন্মের প্রথা এটি। শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও এই সাঁতরা পরিবারে বড় বধূই কালী রূপে পূজিতা হন। বংশপরম্পরায় চলে আসা এই নিয়ম, এই নীতি। সাঁতরা পরিবারের পূর্বপুরুষদের কেউ নাকি স্বপ্নে এই আদেশ পেয়েছিলেন স্বয়ং দেবীর কাছ থেকে— বাড়ির বড় বধূকে কালী রূপে পুজো করতে হবে। সেই থেকে শুরু। দেখতে দেখতে ৪০ বছর পেরিয়ে গেছে, আজও পরিবারের গৃহবধূ হীরাবালা সাঁতরা সেই ঐশ্বরিক ভূমিকায়।
কালী পুজোর দিন তাঁকে দেবীর আসনে বসানো হয়। কেবল রক্তজবার মালা আর কপালে রক্তচন্দনের তিলক, এইটুকুই তাঁর বেশভূষা। এই বেশেই তিনি পূজিতা হন ‘জ্যান্ত মা মুণ্ডমালিনী’ রূপে। পরিবারের বিশ্বাস, পুজোর সময়টুকু স্বয়ং দেবী তাঁর শরীরে ভর করে থাকেন। পুরোহিত তাঁকে দেবী রূপে পুজো করেন, আর এই অলৌকিক দৃশ্য দেখতে আশপাশের গ্রাম থেকে ভিড় জমান দর্শনার্থীরা। এ যেন মানুষের মধ্যে দেবীর প্রকাশ, এক মানবিক ও আধ্যাত্মিক সেতু। পুজো এখানেই শেষ নয়। কালী পুজোর পরদিনও নিয়ম মেনে আরও এক বার জ্যান্ত ‘দেবী’কে পুজো করে বরণ করা হয়। তার পরে বিসর্জন হয় তাঁর ঘট। এই পুজো কেবল রীতিনীতি নয়, এই পুজো আসলে মানুষের গভীর বিশ্বাস আর পরম্পরার এক জীবন্ত দলিল।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।