আগামী রবিবার দিল্লিতে সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই জিএসটি পরিষদের বৈঠক হবে। জানালেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
জিএসটি চালুর পরে যে সমস্ত ক্ষেত্র ধাক্কা খেয়েছিল, সেগুলির মধ্যে প্রথম সারিতে ছিল আবাসন। ফলে এই শিল্পের কারবারিরা ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কেন্দ্রের উপর। লোকসভা নির্বাচনের আগে তাঁদের ক্ষোভে জল ঢালতেও সক্রিয় হয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। চাইছে এই ক্ষেত্রে জিএসটির হার সরল করে চাহিদা ফেরাতে। বুধবার জিএসটি পরিষদের বৈঠকে সেই চেষ্টাও হয়েছিল। কিন্তু বিরোধী শাসিত রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা একজোট হয়ে তা রুখে দিলেন। ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে হওয়া বৈঠক দু’পক্ষের বাদানুবাদে উত্তপ্ত হয়ে উঠল।
মোদী সরকার তথা বিজেপির এই চেষ্টা রুখতে বিরোধী রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের লড়াইয়ে আজ নেতৃত্ব দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তাঁর সঙ্গে গলা মেলায় কেরল, পঞ্জাব, মধ্যপ্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ, দিল্লি, কর্নাটক-সহ আরও আটটি রাজ্য। চাপের মুখে পিছিয়ে এসে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি জানান, আগামী রবিবার দিল্লিতে সব রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর উপস্থিতিতেই জিএসটি পরিষদের বৈঠক হবে।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অমিত মিত্র জেটলিকে চিঠি লিখে বৈঠকের প্রক্রিয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। তাঁর যুক্তি ছিল, আবাসন শিল্প সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ঠিকই। কিন্তু এ রকম জটিল বিষয় নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সে আলোচনা করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে গেলে আরও সমস্যা বাড়বে। তা ছাড়া জেটলিই নিয়ম ঠিক করেছিলেন, ভিডিয়ো কনফারেন্সে বড় সিদ্ধান্ত আলোচনা হবে না। আজ সেই অনুযায়ীই রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা প্রশ্ন তোলেন, কেন আবাসন শিল্পে জিএসটির হার রদবদলের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে হবে?
ঘটনা হল, আবাসনের জিএসটির বিষয়টি নিয়ে সুপারিশ করার জন্য গুজরাতের অর্থমন্ত্রী নিতিন পটেলের নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। সেই মন্ত্রিগোষ্ঠীর সুপারিশ ছিল, নির্মীয়মাণ আবাসনে জিএসটির হার ৫% করা হোক। সস্তার আবাসনে জিএসটি-র হার হোক ৩%। কিন্তু কাঁচামালে মেটানো কর ফেরত বা ‘ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট’-এর সুবিধা তুলে দেওয়া হোক। এই সমস্ত সুপারিশ যে শীঘ্রই কার্যকর হতে পারে, তা ঠারেঠোরে বুঝিয়েও দিচ্ছিল কেন্দ্র। কিন্তু এ দিন সেই চেষ্টা আটকে দিলেন বিরোধীরা।
গোটা প্রস্তাবের বিষয়ে অমিতের দাবি ছিল, কেন্দ্র যে প্রস্তাব আনছে, তাতে মধ্যবিত্তের ধরাছোঁয়ার মধ্যে থাকা অপেক্ষাকৃত কম দামি ফ্ল্যাটে করের বোঝা বাড়বে। বেশি দামের ফ্ল্যাটে কর কমবে। আবার রাজনৈতিক স্তরে কংগ্রেসের অভিযোগ, বিজেপি আসলে লোকসভা ভোটের আগে প্রোমোটার, আবাসন শিল্পপতিদের সুবিধা করে দিতে চাইছে। যাতে তাঁরা উপুড়হস্ত হয়ে বিজেপিকে চাঁদা দেন।
পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী মনপ্রীত বাদল অভিযোগ তোলেন, কেন্দ্র ঘুরপথে জমির উপরেও জিএসটি বসাচ্ছে। জেটলি এর পরেও সিদ্ধান্ত নিতে গেলে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা বলেন, আপনি কি ভোটাভুটিতে যেতে চাইছেন? এর পর আর এগোননি জেটলি।