nano

টাটা ন্যানোর মৃত্যুঘণ্টা: স্বপ্নের অপমৃত্যু না ভবিতব্য?

তবে কি ন্যানোর যাত্রা শেষের পথে! শুরু হয়েছে জল্পনা। কিন্তু এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল?

Advertisement

ঋত্বিক দাস

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৮ ১৩:৫৭
Share:

কল-কব্জা বেরিয়ে পড়েছে ন্যানো ব্যবসারও। নিজস্ব চিত্র।

গত জুনে মাত্র একটাই টাটা ন্যানো উৎপাদন হয়েছে। বিক্রি হয়েছে তিনটে। গত বছরের জুন থেকে রফতানির সংখ্যাটা এক ধাক্কায় নেমে এসেছে ২৭৫ থেকে শূন্যতে। তবে কি ন্যানোর যাত্রা শেষের পথে! শুরু হয়েছে জল্পনা। কিন্তু এমনটা কি হওয়ার কথা ছিল?

Advertisement

দশ বছর আগের কথা। হাজারও ফ্ল্যাশবাল্‌বের ঝলকানির মাঝে নয়াদিল্লির অটো এক্সপোতে জনসমক্ষে আসে টাটা ন্যানো। স্টিল কালারের ছোট্ট গাড়িটায় সওয়ার স্বপ্নের কাণ্ডারী রতন টাটা। টাটা গ্রুপের তৎকালীন চেয়ারম্যান।

খানাখন্দ, ধুলোবালি, জলকাদা এড়িয়ে মধ্যবিত্ত ভারতীয় গাড়িতে চড়ে ঘুরবে। চার সদস্যের পরিবারটাকে আর জোর করে স্কুটার বা বাইকে চাপতে হবে না। মাত্র এক লাখ টাকাতেই মিটবে নিজের গা়ড়ির সাধ। স্বপ্ন ছড়ানো হয়েছিল এটাই। রতন টাটা নিজে এই স্বপ্নে বিশ্বাস করতেন। ২০০৮ সালের আর্থিক মন্দার মধ্যে, সিঁদুরে মেঘ দেখা মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকেও এই স্বপ্ন দেখাতে চেয়েছিলেন।

Advertisement

টাটা মোটরস কর্তাদের অনুমান ছিল এক লাখি ন্যানোর বার্ষিক বিক্রি সহজেই পৌঁছে যাবে ৫ লাখে। কিন্তু অভাগীর স্বর্গের কাঙালির মা হোক বা রতন টাটা, স্বপ্ন কি আর অত সহজে সত্যি হয়! শুরুতেই গোঁত্তা খায় সেই স্বপ্ন। সে বছরই সেপ্টেম্বরে নানা টানাপড়েনের পর সিঙ্গুর থেকে ন্যানো কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় গুজরাতের সানন্দে। এক লাফে বেড়ে যায় উৎপাদন খরচ। আর স্বপ্ন ভাঙার বোধহয় সেটাই শুরু।

আরও পড়ুন: অম্বানীর চালকের মাইনে ২ লক্ষ টাকা, গাড়ি আছে ১৬৮টি! জানতেন?

কেন মুখ থুবড়ে পড়ল ন্যানো?প্রথমত, উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় এক লাখ টাকায় গাড়ি বিক্রি করা ছিল কার্যত অসম্ভব। কিন্তু টাটা মোটরস তথা রতন টাটা কিছুতেই প্রতিশ্রুতিভঙ্গ করতে চাননি। তাই জোর করেই এক লাখ টাকার কাছাকাছি মূল্যেই বাজারে আসে ন্যানো। লোকসানের সেই শুরু।
এর পর প্রথম দিকের কিছু গাড়িতে চলন্ত অবস্থায় আগুন লেগে যায়। সমালোচকরা বলতে শুরু করেন, দাম কমাতে গিয়ে গুণগত মানের সঙ্গে আপস করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই যে গাড়িগুলোতে উৎপাদন সংক্রান্ত ত্রুটি ছিল, তা নয়। কিন্তু মাঝরাস্তায় আগুন লাগার ঘটনা গাড়িটি সম্পর্কে জনমানসে মারাত্মক নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে।
এ দেশে গাড়ি থাকা মানে স্টেটাস সিম্বল। কিন্ত সস্তার গাড়ি কথাটার মধ্যে একটি নাক সিঁটকানো ব্যাপার আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শহুরে নাগরিকদের এই সেন্টিমেন্টটা বুঝতে ভুল করেছিলেন টাটা মোটরসের স্ট্র্যাটেজি মেকাররা। তাঁদের কৌশলে যুক্তির থেকেও বেশি ছিল আবেগ।

২০০৮ -এ এই ছবিতেই ভরসা করে গাড়ি কেনার স্বপ্ন দেখেছিল মধ্যবিত্ত? নিজস্ব চিত্র।

সস্তা বলেই কি বিক্রি হবে না?
বড় শহরে না হোক, ছোট টাউন কিংবা মফস্বলে তুলনামূলক ভাল বিক্রিবাটার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু বড় শহরের বাইরে সংস্থার ডিলারশিপ নেটওয়ার্ক ভাল না হওয়ায় সেই সম্ভাবনাও ধাক্কা খায়। বছর পাঁচেকের মধ্যে যখন বার কয়েক গাড়িটির নতুন মডেল আনা হয়, তত দিনে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। একটা সময়ে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা গাড়িটির জনপ্রিয়তা তখন তলানিতে।

আরও পড়ুন: আবেদন সত্ত্বেও বাগানে জমাট ধর্মঘটের বরফ

তা হলে ন্যানোর ভবিষ্যত্?

ন্যানো গাড়িটি বাজার থেকে তুলে দেওয়া হচ্ছে ঘোষণা না করলেও সংস্থায় কানাঘুষো— রণকৌশল খোলনলচে না বদলে ফেললে কোনও ভাবেই ২০১৯ সালের পর আর গাড়িটির উত্পাদন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
২০১৬ সালে টাটা সন্স থেকে বিতাড়িত হওয়ার আগে তৎকালীন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রি দাবি করেছিলেন, ন্যানো গাড়িটির জন্যই হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে সংস্থার। গাড়িটি নিয়ে কোনও দূরদর্শিতা ছিল না, দিনের পর দিন স্রেফ আবেগ আঁকড়েই গাড়িটি উৎপাদন করা হয়েছে।

ঘটনাচক্রে, যে বছর ন্যানোর আবির্ভাব, তার ঠিক ৭০ বছর আগে বাজারে এসেছিলে আরও একটা পিপলস কার। ভক্সওয়াগেন বিটল। ১৯৩৮ সালে, দেশের মানুষকে সস্তায় গাড়ি চড়ানোর স্বপ্ন সত্যি করেছিলেন অ্যাডল্ফ হিটলার। যদিও বিশ্বের সৌভাগ্য, এই মানুষটির আসল স্বপ্নগুলো সত্যি হয়নি। রতন টাটার সঙ্গে হিটলারের তুলনা করার কোনও অর্থ হয় না। তবে ন্যানোকে নিয়ে তাঁর মেগা স্বপ্নের যে এমন পরিণতি হবে, দুঁদে শিল্পপতি তা কল্পনাও করতে পারেননি বোধহয়।

আরও পড়ুন: ‘অচ্ছে দিনে’ পাওনা শুধু মন বদলের তৃপ্তি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন