বিমানের আসন ভরানোর জন্য পর্যাপ্ত যাত্রীর দেখা নেই। ফলে এ বারের শীতে কলকাতা থেকে উড়ান কমিয়ে দিচ্ছে এমিরেটস। একই কারণে ৩০ বছর একটানা উড়ান চালানোর পরেও এই শহর থেকে সেই সংখ্যা বাড়াচ্ছে না সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স। যারা ১৯৮৬ সালে সপ্তাহে চারটি করে উড়ান দিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল এখান থেকে। পরে বাকি তিন দিন উড়ান চালু করে তাদের সহযোগী সংস্থা সিল্ক এয়ার। এবং দুই সংস্থা মিলিয়ে এখন যাদের প্রতিদিন একটি করে উড়ান চলে কলকাতা-সিঙ্গাপুর রুটে।
বিমান সংস্থাগুলির দাবি, কলকাতা থেকে বিদেশে যাওয়ার যাত্রী পাওয়া গেলেও, বিদেশ থেকে এখানে আসা পর্যটকের সংখ্যা হাতে গোনা। কারণ হিসেবে তারা দায়ী করছে শহরের যানজট, অপরিচ্ছন্ন ও অনুন্নত রাস্তা-ঘাট, আধুনিক মানের যানবাহন না-থাকা ইত্যাদিকে। আঙুল তুলছে ১৫-২০ জন পর্যটককে নিয়ে ঘোরার জন্য টেম্পো ট্রাভেলারের মতো গাড়ির অভাবের দিকে। তাদের অভিযোগ, রাজ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে উঁচু মানের হোটেলও তেমন নেই।
সার্বিক পরিকাঠামোর এই অভাবের কথা মানছেন প্রশাসনের কর্তারাও। তবে একেবারে কিছু হচ্ছে না— তা মানতে নারাজ একাংশ। তাঁদের কথায়, ‘‘আপনি যদি সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকার সঙ্গে কলকাতার তুলনা করেন, তা হলে সত্যিই সেই মানের পরিকাঠামো নেই।’’ এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পর্যটন সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন যেমন টেনে আনছেন গঙ্গার বুকে ক্যাটাম্যারান পরিষেবার কথা। যার মাধ্যমে কলকাতা থেকে নদীবক্ষে বারাণসী পর্যন্ত পৌঁছনো যাচ্ছে। কিংবা ম্যারিয়টের মতো সংস্থার শিলিগুড়িতে হোটেল গড়ার কথা। অজিতবাবুর কথায়, ‘‘পুরুলিয়াতেও লেমন-ট্রির মতো হোটেল হয়েছে। ফলে, ধীরে ধীরে পরিকাঠামো বাড়ছে। ৩-৪ বছর আগের থেকে রাস্তাও ভাল হয়েছে।’’
তবে বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই পরিকাঠামো পর্যটক বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট নয়। তাঁদের মতে, রাস্তা-ঘাট, পরিবেশ, যাতায়াত, থাকা, ঘোরার ব্যবস্থা ইত্যাদির আরও উন্নতি হলে, তবেই সংখ্যাটা বাড়বে। আর পর্যটক বাড়লে বিমান ভরবে। সিঙ্গাপুর এয়ারের ভারতীয় জিএম ডেভিড লিম -ও স্পষ্ট জানিয়েছেন, যাত্রী বাড়লে, তবেই বাড়ানো হবে উড়ান। তাঁর কথায়, ‘‘ভারতের ১১টি শহর থেকে সপ্তাহে মোট ৯৬টি উড়ান চালাচ্ছি। এই বছরেই আরও ১০টি বাড়বে। তালিকায় মুম্বই, আমদাবাদ, কোচি, কোয়ম্বত্তুর রয়েছে। কিন্তু কলকাতা নেই।’’ তবে এখানকার নতুন টার্মিনাল ও ইন-লাইন ব্যাগেজ সিস্টেম সম্পর্কে প্রশংসা করেন লিম। একই সঙ্গে দেন অভিবাসন কাউন্টার ও যাত্রীদের লাউঞ্জের সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শও।
যে সূত্রে ফের উঠে আসে যাত্রীর অভাবের ছবি। কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিত বলেন, ‘‘যাত্রী সংখ্যা বাড়লে লাউঞ্জ বাড়বে। এখন যা পরিষেবা দিচ্ছি, তা-ই পুরো ব্যবহার হচ্ছে না।’’ এই মুহূর্তে প্রতিদিন গড়ে কলকাতা থেকে আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ৪,০০০ যাত্রী যাতায়াত করছেন। তাঁদের জন্য অভিবাসন দফতরের ২৪টি কাউন্টার। সেই সংখ্যা বাড়ানোর আর্জিও কেন্দ্রের কাছে পেশ করা হয়েছে বলে বিমানবন্দর সূত্রে খবর।