চালু নয়া ব্যবহারবিধি

চা গাছে কীটনাশক ব্যবহার নিয়ে নজরজদারির উদ্যোগ

চা গাছে ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গের বাগানগুলিতে নজরদারি চালাবে রাজ্যের কৃষি দফতর। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে চা গাছে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে নানা মহল থেকে সাম্প্রতিক কালে অভিযোগ ওঠার কারণেই এই উদ্যোগ। তাদের অভিযোগ, হয় গাছে ক্ষতিকারক বা অননুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। অথবা অনুমোদিত কীটনাশক সহায়ক মাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৪ ০১:১৭
Share:

চা গাছে ক্ষতিকারক কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে উত্তরবঙ্গের বাগানগুলিতে নজরদারি চালাবে রাজ্যের কৃষি দফতর।

Advertisement

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে চা গাছে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে নানা মহল থেকে সাম্প্রতিক কালে অভিযোগ ওঠার কারণেই এই উদ্যোগ। তাদের অভিযোগ, হয় গাছে ক্ষতিকারক বা অননুমোদিত কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। অথবা অনুমোদিত কীটনাশক সহায়ক মাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয়।

চায়ে ক্ষতিকারক কীটনাশকের উপস্থিতি মিললে দেশীয় বাজারেই নয়, স্বাস্থ্যহানির কারণে রফতানি বাজারেও নতুন করে প্রশ্নের মুখে পড়বে ভারতীয় চা। এর আগেও ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়ার বাজারে এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছিল ভারতীয় চা। যদিও সার্বিক ভাবে চা শিল্পের দাবি, তারা নিয়ম মেনেই কীটনাশক ব্যবহার করে।

Advertisement

তবুও কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে আশঙ্কা উড়িয়ে দিতে পারছেন না সরকারি কর্তারা বা চা শিল্পমহলের কেউই। কারণ চা উৎপাদনের বিষয়টি এখন আর শুধু বড় বা সংগঠিত বাগানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। প্রায় ৩৫% চা তৈরি করেন ক্ষুদ্র চাষিরা। তাঁদের কাছ থেকে অনেক বটলিফ কারখানা যেমন চা পাতা কেনে, তেমনই বড় বাগানও পাতা কেনে চা তৈরির জন্য। ফলে বড় বাগান যদি কীটনাশক ঠিকমতো ব্যবহার করেও, ক্ষুুদ্র চা চাষিরা নিয়ম মেনে না-চললে তাঁদের বাগানের পাতায় কীটনাশক থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা এড়ানো যায় না।

যে-কোনও চাষের মতোই ক্ষতিকারক পোকার হাত থেকে চা গাছ বাঁচাতে কীটনাশক ব্যবহার স্বাভাবিক। সব চাষের ক্ষেত্রেই কোন কীটনাশক কতটা ব্যবহার করা যাবে, তার বৈজ্ঞানিক মাপকাঠি রয়েছে। চা গাছের ক্ষেত্রেও কীটনাশক ও তার ব্যবহারের মাত্রা নির্দিষ্ট। এ জন্য সরকার ও চা শিল্প যৌথ ভাবে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে পৃথক ভাবে গবেষণা চালায়। পাশাপাশি কেন্দ্রেরও এ নিয়ে নির্দেশিকা রয়েছে। গবেষণা ও সেই নির্দেশিকা মেনেই নানা পোকামাকড়, ছত্রাক, আগাছা ইত্যাদি মারার জন্য ৩৭টি কীটনাশকের ব্যবহার অনুমোদন করেছে সেন্ট্রাল ইন্সেক্টিসাইড বোর্ড। কী ভাবে, কতটা মাত্রায় সেগুলির ব্যবহার গাছের পক্ষে ক্ষতিকারক নয়, চা শিল্পের গবেষণার পরিপ্রেক্ষিতে যৌথ ভাবে তা নির্দিষ্ট করেছে টি বোর্ড।

অনুমোদিত কীটনাশক ও তার ব্যবহারবিধি কার্যকর হয়েছে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে। কিন্তু বিভিন্ন স্তরে এখনও এ নিয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। তাই কর্মশালা ও সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করছে টি বোর্ড। পাশাপাশি, নজরদারির জন্য কৃষি দফতরের সাহায্য চেয়েছিল টি বোর্ড।

সরকারি সূত্রের খবর, কীটনাশকের ব্যবসা করার লাইসেন্স দেয় রাজ্য কৃষি দফতর। ওই দফতরের প্রধান সচিব সুব্রত বিশ্বাস জানান, খোলা বাজারে অনেক সময়েই অননুমোদিত কীটনাশক বিক্রির অভিযোগ পাওয়ার কথা জানিয়ে টি বোর্ড তাঁদের সাহায্য চেয়েছে। অনুমোদিত কীটনাশকের তালিকা ও তার ব্যবহারবিধি রাজ্যকে দিয়েছে টি বোর্ড। সেই অনুযায়ী বাগানগুলিতে নজরদারির পাশাপাশি সচেতনতা কর্মসূচিও হাতে নেবে কৃষি দফতর।

ক্ষুদ্র চা চাষিদের সংগঠন সিস্টা-র প্রেসিডেন্ট বিজয়গোপাল চক্রবর্তী অবশ্য কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। তবে তাঁদের বক্তব্য, এ নিয়ে আগে সচেতনতার অভাব ছিল। প্রশাসনিক স্তরেও সচেতনতা বৃদ্ধির উদ্যোগ যথেষ্ট ছিল না। তিনি বলেন, “আমরাও চাই নিয়ম মেনে চা চাষ করতে।”

কীটনাশক ও তার ব্যবহারবিধি নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে টি বোর্ডের অধীন ‘স্মল টি গ্রোয়ার্স ডেভেলপমেন্ট ডিরেক্টরেট’ জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, উত্তর দিনাজপুর ও কোচবিহারে ১০২টি প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করবে। পরের ধাপে বিদ্যুতিন মাধ্যম এবং এসএমএসে বার্তাও পাঠানো হবে। বড় বাগান ও বহুজাতিক সংস্থাগুলিও ক্ষুদ্র চা চাষিদের এ নিয়ে প্রশিক্ষণ দেবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement