উৎপাদন শুল্কে ছাড় বহাল থাকবে কি না, তা নিয়ে দোলাচলের ফসল অনেকটাই ঘরে তুলল দেশের অধিকাংশ গাড়ি সংস্থা। মূলত সেই সূত্রেই জুন মাসে তাদের গাড়ি বিক্রি বেড়েছে বলে ইঙ্গিত সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের। কেন্দ্রের নতুন সরকার এই ছাড় ডিসেম্বর পর্যন্ত না-তোলায় সংস্থাগুলি আসন্ন উৎসবের মরসুমে তার ফায়দা তুলতে পারবে বলেই আশাবাদী তারা।
ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী বাজেটে গাড়ির উৎপাদন শুল্ক হ্রাসের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পূর্বতন ইউপিএ সরকার। সেই সুবিধার সময়সীমা ছিল ৩০ জুন পর্যন্ত। ক্ষমতায় এসে নতুন সরকার ওই সীমা বাড়াবে না কি ফের শুল্ক বাড়ানো হবে, তা নিয়ে আশা-আশঙ্কার দোলাচলে ছিলেন আগ্রহী ক্রেতা থেকে গাড়ি সংস্থা, উভয়পক্ষই।
বস্তুত, জুনের পরে উৎপাদন শুল্ক বাড়তে পারে এবং সে ক্ষেত্রে গাড়ির মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনা নিয়ে বাজারে বার্তাও ছড়িয়েছিল। কিছু সংস্থা তেমন ইঙ্গিতও দেয়। আগ্রহী ক্রেতাদের অনেকেই তাই দেরি করতে চাননি। জুনের মধ্যেই গ্যারাজে গাড়ি ঢুকিয়ে ফেলার পর্ব সাঙ্গ করেছেন। না-হলে যদি আবার জুলাইয়ে গাড়ির দাম বেড়ে যায়!
দেশের বৃহত্তম গাড়ি সংস্থা মারুতি-সুজুকির বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৩৩%। মারুতি ৮০০, অল্টো, এ-স্টার, ওয়াগন আর-এর মতো ছোট গাড়ির বিক্রি বেড়েছে প্রায় ৫২%। জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি, চড়া সুদ ইত্যাদির জেরে এ ধরনের গাড়ি বিক্রির উপরেই কোপ পড়ে সবচেয়ে বেশি। সেই শ্রেণির ক্রেতার আগ্রহ ফের ঊধ্বর্র্মুখী। সংস্থার সুইফট, রিৎজ ও এস্টিলোর মতো ‘কমপ্যাক্ট’ গাড়ি বিক্রি বেড়েছে ৬.২%। সুইফট ডিজ্যায়ারের ক্ষেত্রে তা ২৭%। দ্বিতীয় বৃহত্তম সংস্থা হুন্ডাই মোটরের বিক্রি জুনে বেড়েছে প্রায় ৯.৫%। সংস্থার কর্তা রাকেশ শ্রীবাস্তবের আশা, শুল্ক ছাড়ের সময়সীমা বৃদ্ধির জেরে আগামী দিনে তা আরও বাড়বে।
হোন্ডার বিক্রি বেড়েছে ৭৫%। শুল্ক ছাড় ও নতুন গাড়ি আনাও এই সাফল্যের অন্যতম কারণ বলে দাবি সংস্থার। এ মাসের শেষেই সাত আসন বিশিষ্ট তাঁদের নতুন ‘মোবিলো’ গাড়িটি বাজারে আসবে বলে জানান সংস্থার অন্যতম কর্তা জ্ঞানেশ্বর সেন। বিক্রি বেড়েছে টয়োটা কির্লোস্কর (৯%), ফোর্ড ইন্ডিয়া (১.৫৮%), মহীন্দ্রারও (সামান্য)।
শুল্ক ছাড়ের মেয়াদ বাড়ায় আগামী দিনে তার সুফল আরও মিলবে বলে মনে করছে গাড়ি সংস্থাগুলি। কারণ উৎসবের মরসুম আসন্ন। তখন এমনিতেই বিক্রি বাড়ে। কিন্তু শুল্ক ছাড় বজায় না-থাকলে গাড়ির দামও বাড়ত। সে ক্ষেত্রে ফের মাছি তাড়ানোর দশা হত শো-রুমগুলির। ফোর্ডের অন্যতম কর্তা বিনয় পিপারসানিয়া বলেন, “উৎসবের মরসুম আসছে। এই সময়ে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা নিঃসন্দেহে ক্রেতাদের গাড়ি কেনার আগ্রহ বাড়াবে।”
তবে জুনেও ধাক্কা খেয়েছে টাটা মোটরস, জেনালের মোটরস-এর মতো সংস্থার ব্যবসা। টাটা মোটরস-এর যাত্রী ও বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি কমেছে যথাক্রমে ৩৩% ও ২৭%। জেনারেল মোটরস-এর ২১%। সংস্থা কর্তা পি বলেন্দ্রনের মতে, এখনও দেশের আর্থিক অবস্থার খুব একটা উন্নতি ঘটেনি। আগামী দিনেও পরিস্থিতি কতটা বদলাবে, তা নিয়ে তাঁরা সংশয়ে।
ইয়ামাহা, হোন্ডা মোটরসাইকেল অ্যান্ড স্কুটারের বিক্রিও বেড়েছে জুনে, যথাক্রমে ১৪% ও ২৮%।