সেনসেক্স ৩০ হাজার ছুঁতে পারে অর্থবর্ষ শেষের আগেই

পুরনো বছরের শেষ এবং নতুন বছরের শুরুটা বেশ ভালই হয়েছে শেয়ার বাজারের কাছে। বেশ খানিকটা পতনের পরে গত কয়েক দিন ধরে সূচক অনেকটাই চাঙ্গা। অর্থনীতির কিছু পরিসংখ্যান অনুকূলে থাকায় এবং সংস্কারের ব্যাপারে সরকার কয়েকটি পদক্ষেপ করায় লগ্নিকারীরা আবার সওদা করতে বাজারে ফিরেছেন। ফিরতে শুরু করেছেন ডিসেম্বরের শেষে হাত গুটিয়ে নেওয়া বিদেশি লগ্নিকারীরাও।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৫ ০১:২০
Share:

পুরনো বছরের শেষ এবং নতুন বছরের শুরুটা বেশ ভালই হয়েছে শেয়ার বাজারের কাছে। বেশ খানিকটা পতনের পরে গত কয়েক দিন ধরে সূচক অনেকটাই চাঙ্গা। অর্থনীতির কিছু পরিসংখ্যান অনুকূলে থাকায় এবং সংস্কারের ব্যাপারে সরকার কয়েকটি পদক্ষেপ করায় লগ্নিকারীরা আবার সওদা করতে বাজারে ফিরেছেন। ফিরতে শুরু করেছেন ডিসেম্বরের শেষে হাত গুটিয়ে নেওয়া বিদেশি লগ্নিকারীরাও।

Advertisement

গত সপ্তাহে ব্যাঙ্কিং সূচক উঠেছে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। হারানো জায়গা অনেকটা উদ্ধার করেছে বহু শেয়ার। ঝুঁকে পড়া ন্যাভ আবার ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে বেশির ভাগ ইকুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনও সুদ না-কমালেও আশা, মার্চের মধ্যে সুদ কমানো হতে পারে। সুদ কমলে বাজার আরও চাঙ্গা হবে। সুদ কমার সম্ভাবনা ছাড়াও চলতি আর্থিক বছর শেষ হওয়ার আগেই সূচককে নাড়া বা ‘ট্রিগার’ দেওয়ার মতো বারুদ জমছে বাজারে।

আর সপ্তাহখানেকের মধ্যেই প্রকাশিত হতে শুরু করবে তৃতীয় ত্রৈমাসিক কোম্পানি ফলাফল। ফল অনুযায়ী কিছুটা ওঠা-নামা করবে শেয়ার সূচক। ফলাফল প্রকাশ শেষ হতে না-হতেই শুরু হয়ে যাবে বাজেট নিয়ে জল্পনা। এ বারের বাজেট থেকে মানুষের আশা অনেক। এই আশায় ভর করে বাজেটের আগেই একটি ছোট ‘বুল র‌্যালি’ দেখা যেতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। অন্য কোনও কারণে ইতিমধ্যে বাজারের যদি পতন না-হয় তবে ফলাফল, বাজেট এবং সুদ কমার সম্ভাবনায় ভর করে মার্চ মাসের মধ্যেই সেনসেক্স প্রথম বারের জন্য পৌঁছে যেতে পারে ৩০ হাজারের কোঠায়।

Advertisement

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এখনও সুদ কমানোর সিদ্ধান্ত না-নিলেও বেশির ভাগ ব্যাঙ্ক এরই মধ্যে কিছুটা করে সুদ কমিয়েছে তাদের জমা প্রকল্পগুলির উপর। ফলে কিছুটা হলেও আকর্ষণ কমছে ব্যাঙ্ক আমানতের বিশেষ করে যাঁরা উঁচু করের আওতায় পড়েন, তাঁদের কাছে। অন্য দিকে আশা জাগাচ্ছে শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের জগৎ। সাধারণ মানুষ এখন খানিকটা ধন্দে, কোন পথে হাঁটবেন। আয় কিছুটা কম হলেও সুরক্ষাকেই প্রাধান্য দেবেন, না কি বেশি আয়ের লক্ষ্যে কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে তহবিলের একাংশ শেয়ার বাজারে ঢালবেন। মনে রাখতে হবে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণপত্র নির্ভর প্রকল্পেরও ভবিষ্যৎ বেশ উজ্জ্বল। এখানে স্থির আয়ের প্রতিশ্রুতি আছে। ঝুঁকি নামমাত্র। মূলধনী লাভের সম্ভাবনা যথেষ্ট। অর্থাৎ লগ্নির তালিকায় রাখতে হবে বন্ড ফান্ড এবং ইনকাম ফান্ডকেও। বর্তমান পরিস্থিতিতে কে কোথায় লগ্নি করলে ভাল হবে, তা এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:

• ব্যাঙ্ক আমানত: যাঁরা ন্যূনতম ঝুঁকিও চান না। এবং, যাঁরা ন্যূনতম করের আওতায় পড়েন। দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করতে হবে সুদ আরও কমার আগে। এই শ্রেণির মানুষ গৃহঋণ প্রদানকারী সংস্থায়ও লগ্নির কথা ভাবতে পারেন।

• পিপিএফ: স্বনিযুক্ত মানুষ এবং যাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা নেই। দীর্ঘ মেয়াদে করমুক্ত ভাল সুদে শ্রেষ্ঠ সুরক্ষিত লগ্নির জায়গা। এই লগ্নির মাধ্যমে করও বাঁচানো যায়।

• মিউচুয়াল ফান্ড (ইকুইটি নির্ভর): ঝুঁকি যাঁদের ধাতে সয়, তাঁদের জন্য লগ্নির অন্যতম শ্রেষ্ঠ জায়গা। দীর্ঘ মেয়াদে এসআইপি পদ্ধতিতে লগ্নি করলে ঝুঁকি কমের দিকে রাখা যায়। ইএলএসএস প্রকল্পে লগ্নি করে কর বাঁচানো যায়। ডিভিডেন্ড করমুক্ত। বিশেষত যাঁরা নতুন কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন, তাঁরা দীর্ঘ মেয়াদে অল্প করে নিয়মিত টাকা জমাতে পারেন সুবিন্যস্ত ইকুইটি ফান্ডে (ডাইভার্সিফায়েড)। বড় মেয়াদে ভাল রকম ফুলে ফেঁপে উঠতে পারে এই লগ্নি। যাঁদের খুব বেশি ঝুঁকি পছন্দ নয়, তাঁরা ব্যালান্সড ফান্ডে লগ্নির কথা ভাবতে পারেন। শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করার ভাল জায়গা।

• মিউচুয়াল ফান্ড (ঋণপত্র নির্ভর): রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমালে বাড়বে এই ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডের ন্যাভ। এই কথা মাথায় রেখে কম ঝুঁকিতে লগ্নি করা যেতে পারে গিল্ট ফান্ড, বন্ড ফান্ড এবং ইনকাম ফান্ডে। লগ্নি করা যেতে পারে করমুক্ত বন্ডেও। উঁচু হারে করদাতারা এই বন্ড কিনতে পারেন বাজার থেকে। গুণ বিচার করে কেনা যায় অন্যান্য বন্ড-ও।

• ইকুইটি: খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং অত্যন্ত লাভজনক লগ্নির জায়গা। শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ যেহেতু উজ্জ্বল বলে ভাবা হচ্ছে, সেই কারণে প্রতিটি পতনে অল্প অল্প করে ভাল শেয়ার সংগ্রহ করা যেতে পারে। ডিভিডেন্ড পুরোপুরি করমুক্ত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন