ভগবানকে কি খাঁচায় আবদ্ধ রাখা যায়? ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।
এলাকার নাম রামতারক। কোলাঘাট থেকে বাঁদিকে ঘুরে খানিকটা যেতে না-যেতেই হাইওয়ের ডানপাশে একটা দোতলা হোটেল কাম রেস্তরাঁ। গ্রামীণ এবং বিচিত্র রঙের। বাড়িটার হাতায় একটা দোলনাও ছিল সম্ভবত। চারপাশটা খানিক শুনশান। আর কোনও বাড়ি-টাড়ি নেই। মহাসড়ক ধরে হুস-হুস করে গাড়ি যাচ্ছে। সেই আওয়াজ ছাড়া কোনও শব্দও নেই। এতটাই নিঃস্তব্ধ চারদিক।
সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠে একটা ঘর। তাতে সার সার ক্যাম্পখাট পাতা। দেওয়ালের পেরেক থেকে আলুথালু জামাকাপড় ঝুলছে। সেগুলো যাঁদের পোশাক, তাঁরা তখন উর্দি পরে, হাতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র বাগিয়ে এসইউভি ঘিরে আছেন। লম্বা কনভয় গ্রামেগঞ্জে ঘুরছে লোকসভা ভোটের প্রচারে।
সেই ঘর পেরিয়ে একটা বড়মাপের হলঘর। তাতে সোফা-টোফা রাখা। তার পাশে একটি শয়নকক্ষ। সঙ্গে অ্যাটাচ্ড বাথরুম। ঘরটা দেখলেই বোঝা যায়, সাময়িক আস্তানা। একাধিক সুটকেস, পলিথিনের প্যাকেটে সাদা কুর্তা-পাজামা, কিছু কবিতার বই ইত্যাদি অগোছাল ভাবে রাখা। সে সব ঠিকই আছে। যেটা দেখে চমক লেগেছিল, সাদা চাদর ঢাকা বিছানায় আলগোছে এবং নিশ্চিন্তে শুয়ে আছে ভারতের সংবিধান!
গিয়েছিলাম আনন্দবাজার ডট কম-এর ‘দিল্লিবাড়ির লড়াই: মুখোমুখি’ সিরিজ়ের জন্য তমলুক লোকসভার বিজেপি প্রার্থীর সাক্ষাৎকার নিতে। আগে থেকে কথাবার্তা বলা ছিল। হোটেল অথবা রেস্তরাঁস্বামীর সেই আগাম অনুমতিসাপেক্ষে সহকর্মী শোভন চক্রবর্তী, প্রিয়ঙ্কর দে, অসীম রায়চৌধুরীরা সোফা হটিয়ে, পর্দা সরিয়ে, টেবিল উল্টে, বিস্কুটের বয়াম প্রায় ভেঙে ফেলে যখন সাক্ষাৎকারের ‘সেট’ সাজাচ্ছে, আমি তখন অনতি-অতীতের ফ্ল্যাশব্যাকে।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় যখন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতির পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে বিজেপির টিকিটে লোকসভা ভোটে দাঁড়াতে মনস্থ করলেন (বিজেপি-ও চেয়েছিল বইকি), তখনই মনে হয়েছিল, তিনি আসলে একটি ‘লুজ় ক্যানন’। কখন যে কাকে লক্ষ্য করে তোপ দাগবেন, নিজেও জানেন না! বিজেপি তাঁকে নিচ্ছে বটে। কিন্তু পরে গোলমালে পড়বে। প্রথমত, প্রকৃতিগত ভাবে তিনি এমনই একজন অধৈর্য এবং রাগী (প্রশ্ন করায় নিজেই রসিক ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন— ‘ব্রহ্মতেজ’) মানুষ, যে কত দিন বিজেপির মতো একটি আপাত-শৃঙ্খলাপরায়ণ এবং নিয়মবদ্ধ দলে মুখ বুজে থাকতে পারবেন সন্দেহ! দ্বিতীয়ত, নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক নির্দেশ দিয়ে তিনি তত দিনে ভগবানের পর্যায়ে উন্নীত। বিগ্রহপ্রতিম জনপ্রিয়তা তাঁর। সাধারণ মানুষ তাঁকে জাগ্রত ঈশ্বরজ্ঞানে পুজো করে। রাজনীতিকদের নিয়ে এমনিতেই আমাদের সমাজে একটা নাক সিঁটকানো ভাব আছে। বিচারপতির আসনে বসে তিনি সেই রাজনীতিকদেরই তুলোধনা করেছেন। ফলে চালু ভাষায়, বিষয়টা ব্যাপক ‘খেয়েছিল’। কিন্তু জনতা কালক্রমে ভেবলু হয়ে দেখল, সেই তিনিই বিচারপতির ন্যায়পরায়ণতার আলখাল্লা খুলে ফেলে সেই রাজনীতিকদেরই ঝাঁকে মিশে গেলেন!
তা তো গেলেন। জনতা তাদের মতো করে মনে মনে তাঁর বিচারও করে নিল। কেউ রাখল। কেউ ফেলল। সে জনতার ব্যাপার। আমি একেবারে উল্টোদিক থেকে বিষয়টা দেখছিলাম। যে অদূরদর্শন বলছিল, ক্ষমতা হল চিটেগুড়ের মতো। এঁটে থাকে। মাছি ভনভন করে। তার একটা আলাদা মৌতাত আছে। সেই বোধ সহজে যেতে চায় না। তখনই মনে হয়েছিল, অভিজিৎ একটি দলের জনপ্রতিনিধি হবেন বটে। কিন্তু তাঁর মস্তিষ্ক থেকে বিচারপতিকে বার করা মুশকিল হবে।
যিনি ঈশ্বর হয়ে গিয়েছেন, তাঁকে কি আর জাগতিক খাঁচায় আটকে রাখা যায়?
অতএব গত কয়েকদিন ধরে অভিজিৎ যে একের পর এক সংবাদমাধ্যমে তাঁর দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন, তাতে একেবারেই অবাক হইনি। ভাল্ভহীন প্রেশার কুকারে বাষ্প জমছিল। ফলে বিস্ফোরণ হতই। শুধু কৌতূহল ছিল ‘টাইমিং’টা নিয়ে। মানে কবে তিনি এটা শুরু করবেন। শুক্রবার দুপুরে সরাসরি তাঁকেই প্রশ্ন করলাম, এখন কেন বলছেন? জবাব এল, ‘‘আমাকে তো এখনই বলতে হবে। বিধানসভা ভোট এসে গেল। কিন্তু কিছুই তো হল না!’’ তার পরে বিনা প্রশ্নেই, ‘‘আমি আরও বলব।’’
আরও বলবেন? বলেন কী! দল যদি কিছু বলে? তমলুকের বিজেপি সাংসদ খানিক নির্লিপ্ত গলায় বললেন, ‘‘দল তো এখনও পর্যন্ত কিছু বলেনি। বললে দেখা যাবে।’’
বছরদেড়েক আগে রামতারকের হোটেল কাম রেস্তরাঁয় সেই সাক্ষাৎকারের শেষে গল্পগাছার ঢঙে আলোচনার কথা মনে করিয়ে বললাম, আপনার মনে পড়ছে কি যে, তখনই বলেছিলাম, এটাই হবে? এত দিন নিজের মর্জিমাফিক চলেছেন। যা খুশি বলেছেন। কোনও রাজনৈতিক দলে তিনি মানিয়ে নিতে পারবেন না। নিজের ইচ্ছেমতো মুখ খুলবেনই। কত দিন আর কৌটোয় ঢাকনি দিয়ে রাখবেন? ফলে তাঁর এই তোপধ্বনিতে অন্যেরা বিস্মিত হলেও আমি একেবারেই অবাক হচ্ছি না।প্রাক্তন বিচারপতি বললেন, কথাটা তাঁর মনে আছে। যা থাকে কপালে ভেবে বলে ফেললাম, এটা কিন্তু আমি লিখব। যে, এটা হওয়ারই ছিল। আবার অনুত্তেজিত গলা ভেসে এল, ‘‘তাই? তা বেশ তো। লিখুন না।’’
শুনে মনে হল, সমুদ্রে শয্যা পেতেছেন তিনি। শিশিরে আর ভয় কী?
কলকাতা হাই কোর্টে আলাপের সময় জানিয়েছিলেন, তিনি বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী। ভুল বলেননি। বিকাশ ভট্টাচার্যের সঙ্গে আইনতুতো সখ্য ছিলই। সিপিএমের একাধিক নেতার সঙ্গেও অভিজিতের নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। এখনও আছে। কিন্তু তিনি গেলেন বিজেপি-তে! কারণ, সিপিএমের কাব্য পশ্চিমবঙ্গে উপেক্ষিত। জেতার সম্ভাবনা ক্ষীণতম (বাস্তবেও অন্য কিছু হয়নি। বিধানসভার পরে লোকসভাতেও শূন্য থেকেছে সিপিএম)। অতএব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরানোর ‘মঞ্চ’ হিসাবে সিপিএম একেবারেই উপযুক্ত নয়।
অভিজিৎকে বিজেপির (এবং আরএসএসের) সঙ্গে প্রাথমিক যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিলেন জনপ্রিয় চ্যানেলের পরিচিত মুখ। তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে নেই বটে। তবে ‘সেমি রাজনীতিক’ বা ‘খোকা রাজনীতিক’ বলা যেতেই পারে। যোগাযোগ হওয়ার পরে শুভেন্দু অধিকারী তাঁকে প্রায় ঘাড়ে করে নিয়ে যান তমলুকে। কারণ, অভিজিৎ তখন মমতার বিরোধী ‘মুখ’ বলে জনতার একাংশের কাছে স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছেন। শুভেন্দু অভিজিৎকে জেতানও ঘাড়ে করেই। সেটা তাঁর পক্ষে খুব কঠিনও ছিল না। শুভেন্দু নিজে একদা তমলুকের সাংসদ থেকেছেন। পূর্ব মেদিনীপুরের অনেকটা জুড়ে তাঁর ‘জায়গির’। উপরন্তু অভিজিতের বিরুদ্ধে তৃণমূল যে প্রার্থী দিয়েছিল, তিনি ভোটে দাঁড়ালেও তখনও (এখনও) নেহাতই ‘খোকা রাজনীতিক’। ফলে প্রাক্তন বিচারপতি ড্যাংডেঙিয়ে জিতে যান। একটা সময়ে তো এমনও রটে গিয়েছিল যে, জিতলেই তিনি কেন্দ্রে আইনমন্ত্রী হবেন। তবে সেটা একেবারেই অতি সরলীকরণ। তার মধ্যে বাস্তবের ছোঁয়া বিশেষ ছিল না।
সেই অভিজিৎ এখন কেন্দ্রীয় সরকারের উপরে খড়্গখস্ত। তিনি কুপিত বিজেপির ভিন্রাজ্যের (হিন্দিবলয়ের) নেতাদের উপর। তিনি বলছেন, ‘‘আমি যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরানোর ধারেপাশে পর্যন্ত যেতে পারিনি, তার জন্য মূল দায়ী কেন্দ্রীয় সরকার।’’ বলছেন, ‘‘সেটিং তত্ত্ব থেকে সরে আসা যাচ্ছে না। মানুষকে কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে তো! ইডি এবং সিবিআই ইচ্ছে করে (দুর্নীতির) মাথা পর্যন্ত পৌঁছোচ্ছে না।’’
আপনি কি ‘সিস্টেম’ বদলাতে রাজনীতিতে এসেছিলেন? আপনি জানতেন না রাজনীতি এমন হয়? আপনি কি হতাশ?
—সিস্টেম তো বদলানো যায় না। আমার খানিকটা ধারণা ছিল যে, রাজনীতি এমনই হয়। একেবারে যে ধারণা ছিল না, তা নয়। খানিকটা সত্যি, খানিকটা মিথ্যে মিলেমিশেই তো রাজনীতি। কিন্তু সেটা কত দূর? তারও তো একটা সীমারেখা থাকা দরকার!
তা হলে রাজনীতি নিয়ে আপনার মোহভঙ্গ হয়েছে বলুন?
—পুরোপুরি মোহভঙ্গ হয়েছে বলব না। এখনও পুরোপুরি ডিজ়িলিউশন্ড নই। কিন্তু খানিকটা হতাশ তো লাগছেই। আরজি কর বা অন্য কোনও কিছুর তদন্তই তো ঠিকঠাক হল না! সব কিছুরই ইন্তেকাল হয়ে গেল! এসেছিলাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সরাতে। তেমন কোনও চেষ্টা তো দেখতেই পাচ্ছি না!
শুনতে শুনতে আবার মনে হল নির্ভুল ‘লুজ় ক্যানন’।
ইতিহাস বলে, এই শব্দবন্ধের উৎপত্তি নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজে। এ এমন এক কামান, যা জাহাজের ডেক-এ থাকত। কিন্তু ঠিকঠাক বাঁধা থাকত না। ফলে ঢেউয়ের দুলুনিতে পলকা বাঁধন ছিঁড়ে এদিক-ওদিক গড়িয়ে গিয়ে কেলেঙ্কারি ঘটাত। এখন অবশ্য সে জাহাজও নেই। সে কামানও নেই। এখন ‘লুজ় ক্যানন’ শব্দবন্ধ বলে বোঝানো হয় সেই লোককে, যে নিজের আবেগের বশে বেপরোয়া ভাবে এমন কিছু বলে ফেলে বা করে ফেলে, যা অন্যদের গোলমালে ফেলে। অথবা যার কাজকর্ম বা আচরণ আগে থেকে অনুমান করা যায় না। মোদ্দা কথায়— নির্দিষ্ট লক্ষ্যহীন। ঠিক সেই কারণেই আবার তাকে ইচ্ছেমতো ব্যবহারও করা যায়। যখন যেমন, তখন তেমন।
এক এক বার মনে হচ্ছে, বিজেপির অভিজিৎ যা বলছেন এবং বলে চলেছেন (আরও বলবেন) একের পর এক সাক্ষাৎকারে, তা তো আসলে তৃণমূলের প্রচারের অভিমুখ! হিন্দিবলয় থেকে এখানে নেতা এনে বাংলার ভোট জেতা যাবে না। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মন, মেজাজ, তাঁদের অভিমান, এ সব দিল্লিওয়ালা নেতারা বোঝেন না।
আবার একই অভিজিৎ ‘সিপিএম-কণ্ঠী’ হয়ে ‘সেটিং’ তত্ত্বের কথাও বলছেন! শিক্ষায় নিয়োগ, আরজি কর কাণ্ড-সহ বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বড় বড় নেতাদের বিরুদ্ধে গুচ্ছ গুচ্ছ অভিযোগ থাকলেও তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত বা তাঁদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করা হচ্ছে না। সিবিআই এবং ইডির বেশ কিছু বড়-মেজো কর্তা বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মদতপুষ্ট। ইডি এবং সিবিআইয়ের যে সমস্ত অফিসার পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন দুর্নীতির তদন্ত করছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসাবনিকাশ হওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার কর্তারা কেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে পারেননি, সেই কৈফিয়ত স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে চাওয়া উচিত।
অর্থাৎ, বিজেপির যা যা বলা অনুচিত (প্রায় ‘পাপ’), বিজেপির অভিজিৎ ঠিক সেই সেই কথাগুলোই বলছেন। ‘লুজ় ক্যানন’ দলের সদর দফতরে কামান দাগা শুরু করেছেন!
কিন্তু সত্যিই কি তাঁর ‘লক্ষ্য’ স্থির নেই? রাগী হতে পারেন, অধৈর্য হতে পারেন। কিন্তু অভিজিৎ বুদ্ধিহীন, এমন কখনও মনে হয়নি। দেড় বছর আগের সেই সাক্ষাৎকারে তাঁর একলা জীবন এবং প্রেম নিয়ে প্রশ্ন করায় একটুও টসকাননি। বরং খানিক হাল্কাচালে বলেছিলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর পুলিশ লাগিয়ে খুঁজে বার করুন আমার জীবনে কোনও প্রেম আছে কি না।’’
তাঁর বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে শুনছি, দিল্লির এবং হিন্দিবলয়ের নেতৃত্বকে দোষারোপ করার পাশাপাশিই অভিজিৎ বাংলার নেতাদের হয়ে ওকালতিও করেছেন। তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়েছেন শুভেন্দু এবং রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যকে। ভরসা রেখেছেন তাঁদের উপর। সঙ্গে সখেদে বলেছেন, ‘‘দিলীপ ঘোষ এখন কেন জানি না অন্তরালে চলে গিয়েছেন।’’ অস্যার্থ, পশ্চিমবঙ্গের বিষয়টা পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের উপরেই ছেড়ে দিন। বাইরে থেকে এসে ফোপরদালালি করার দরকার নেই। তাতে অতীতে লাভ হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না।
শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, এই কথাটাই তো মনে মনে রোজ বলে থাকেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতাদের একটা অংশ। পদ্মশিবিরের অন্দরে সকলেই জানেন, দিল্লির নেতারা বাংলার নেতাদের খুব একটা পোঁছেন না। তাঁরা সফরে আসেন এবং ছড়ি ঘোরান। সেটা অবশ্য অপ্রত্যাশিতও নয়। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে প্রভূত সাহায্য পেয়েও রাজ্য বিজেপির গাছে ঈপ্সিত ফল ধরেনি। ২০২১ সালে বিপুল ঢক্কানিনাদ করে প্রত্যাশা জাগিয়েও ভরাডুবি হয়েছিল। তখন থেকেই রাজ্যের উপর দিল্লি বিজেপির খুব একটা ভরসা নেই। গত লোকসভা ভোটে গোবেড়েন খাওয়ার পরে তাঁরা মনে করেন, রাজ্যের নেতা-কর্মীদের বড় অংশই অলস। পরিশ্রম না করেই ক্ষমতার মগডালে চড়ে বসতে চান। ফলে রাজ্যে দলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার রাশটি তাঁরা নিজেদের হাতেই ধরে রেখেছেন।
দলের অন্দরে ‘তৃতীয় শ্রেণির নাগরিক’ হয়ে বাংলার নেতারা যে খুব সন্তুষ্ট এবং সোনামুখ করে সেই শ্রেণিবৈষম্য মেনে নেন, এমন নয়। কিন্তু ব্যাটে রান না-থাকলে কে-ই বা পাত্তা দেয়! অতএব, এতেও খুব আশ্চর্য হচ্ছি না, যখন শুনছি, রাজ্য বিজেপি নেতাদের একটা অংশ পরিচিতদের কাছে চুপিচুপি খোঁজ নিচ্ছেন, অভিজিতের বক্তব্য কি ‘খাচ্ছে’?
অভিজিৎ অবশ্য বললেন, ‘‘আমাকে কেউ ব্রিফ করেনি। আমি যা বলছি, আমার অনুভূতি থেকেই বলছি। এটাই যদি সাধারণ মানুষেরও কথা হয়, তা হলে বুঝব আমি সাধারণ মানুষের মন পড়তে পারছি।’’
হবে হয়ত। তবে অভিজিৎ-কামানের গর্জন শুনতে শুনতে সন্দিগ্ধু পেশাদারের মনে হচ্ছিল, সদর দফতর লক্ষ্য করে গোলা তো তিনি ছুড়ছেন! কিন্তু গোলন্দাজটি কে?