পথ দিয়ে চলে ঝোরা
এসে গেল ভ্রমণের কাল। এ সময় বহু ভ্রমণপিপাসুর গন্তব্য শালপিয়ালের জঙ্গলে মোড়া অযোধ্যা পাহাড়। অযোধ্যার শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ পাহাড়চূড়া থেকে তিন-চার ধাপ লাফিয়ে নেমে আসা বামনি এবং ঘন জঙ্গলের বুক চিরে হঠাৎ আবির্ভূত হওয়া তুর্গা জলপ্রপাত।
পুরুলিয়া শহর বা স্টেশন থেকে আড়শার পথে কুমারীকানন পাহাড় বাঁ হাতে রেখে সিরকাবাদ হয়ে জিলিপি-চড়াইপথ ধরে পাহাড়চূড়া ছুঁয়ে বামনি প্রপাত পৌঁছতে পাড়ি দিতে হয় ৫২ কিমি। বামনি থেকে বাঘমুণ্ডির অযোধ্যা মোড়ের পথে দু’কিমি এগোলে তুর্গা প্রপাত। এই রাস্তার শেষের ন’-দশ কিমি পথ গাড়ি চলাচলের অযোগ্য। এই অংশটিতে পিচ রাস্তা নেই। বর্ষার সময় এই পথের ওপর দিয়ে বেশ কয়েকটি ঝোরা প্রবাহিত হয়। ফলে প্রায়ই রাস্তা ভেঙে যায়। সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেখা গেল ঝোরাগুলি দিয়ে অনবরত জলের প্রবাহ নামছে এবং তার ওপর দিয়ে বহু গাড়ি যাতায়াতের ফলে রাস্তাটির অবস্থা সঙ্গিন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, অবিলম্বে রাস্তাটি মেরামতের ব্যবস্থা করা হোক এবং ঝোরাগুলির জন্য কজওয়ে নির্মাণ করা হোক, যাতে রাস্তাটি গাড়ি চলাচলের উপযুক্ত থাকে এবং প্রান্তিক জেলা পুরুলিয়া পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ না হারায়।
সুশীল বর্মন
রামপদ কলোনি, পুরুলিয়া শহর
ভাল সিদ্ধান্ত
বর্তমান সরকার প্রতিটি সরকারি স্কুলে প্রাথমিক স্তর থেকে ইংরাজি পাঠ চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন। এই সিদ্ধান্তের পিছনে একটি বড় কারণ, সরকারি স্কুল থেকে ছাত্রদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।
বিমুখতার যথেষ্ট কারণ আছে। সরকারি স্কুলে পঠনপাঠন খুবই সাধারণ মানের, ইংরেজি শিক্ষার মান তো আরও নিম্ন। তা ছাড়া বেশির ভাগ স্কুলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ তো রয়েইছে। এই সব কারণের জন্যই বেশির ভাগ অভিভাবক এই স্কুলগুলি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। সেখানে যে ইংরেজি পড়ানো হয়, তাতে শিক্ষার্থী কিছুই শিখতে পারে না। ফলে, তার বাবা-মা ছোট থেকেই গৃহশিক্ষক রাখেন। প্রত্যেক বাবা-মা’ই মনে করেন, সরকারি স্কুলে গেলে তাঁদের বাচ্চা কিছুই শিখবে না। তাই তাঁরা দ্বারস্থ হন ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুলের দিকে। এটা হওয়াই স্বাভাবিক।
বর্তমানে চারিদিকে ইংরেজির চাহিদা এত বেড়েছে যে, শুধু বাংলা শিখে জীবনে উন্নতি করা যাবে না। প্রতিটি পদক্ষপেই ইংরেজির প্রয়োজন। আর এটা তো মানতেই হবে যে, সরকারি স্কুলের তুলনায় বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থীরা ইংরেজিতে অনেক ভাল। তাই সরকার খুবই উত্তম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি চালু হলে বিশেষ করে উপকৃত হবেন দরিদ্র অভিভাবকগণ। কারণ ইংরেজি মাধ্যমে বাচ্চা পড়ানোর মতো খরচ করার সাধ্য তাঁদের নেই, অনেকের আবার গৃহশিক্ষক রাখার মতোও অবস্থা নেই। তাই বাধ্য হয়েই পড়াতে হয় সেই সরকারি স্কুলেই।
কিন্তু প্রাথমিক স্তরে ইংরেজি চালু করার পাশাপাশি সরকারকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। সঙ্গে শিক্ষককেও ভাল ভাবে পড়াতে উৎসাহ দিতে হবে। তা হলেই এই সিদ্ধান্ত সাফল্যমণ্ডিত হবে।
রোশনী হালসানা
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
আংশিক-পূর্ণ
পত্রলেখক লিখেছেন, পশ্চিমবঙ্গের নব্বই শতাংশের বেশি কলেজে আংশিক সময়ের অধ্যাপকের সংখ্যা বেশি (‘আংশিক’, সম্পাদক সমীপেষু, ৫-৯)। এ প্রসঙ্গে বলি, এ রাজ্যে যোগ্য পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক পদপ্রার্থীর অভাব নেই। বিগত বামফ্রন্ট সরকার ২০১১-র বিধানসভা নির্বাচনে ইন্দ্রপতন অবশ্যম্ভাবী বুঝতে পেরে তাদের আনুগত্যে নিযুক্ত আংশিক সময়ের অধ্যাপকদের স্থায়ী করে (৬০ বৎসর বয়স পর্যন্ত)। সেই সঙ্গে আইন প্রণয়ন করে, কোনও একটি পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক পদে যদি দু’জন আংশিক সময়ের অধ্যাপক থাকেন, তা হলে ওই পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক পদটি বিলুপ্ত হবে, এমনকী ওই পদে যদি এক জনও আংশিক সময়ের অধ্যাপক নিযুক্ত থাকেন, তা হলে ওই পদটিতে কোনও পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক নিয়োগ করা যাবে না। এই ‘একুশে আইন’-এর ফলে পরবর্তী কালে পশ্চিমবঙ্গের কলেজগুলিতে পূর্ণ সময়ের অধ্যাপকের শূন্যপদ এক ধাক্কায় কমে এক-দশমাংশে নেমে আসে ও ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ মহাবিদ্যালয় কৃত্যক আয়োগ (ওয়েস্ট বেঙ্গল কলেজ সার্ভিস কমিশন) নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ রাখে। ফলে কলেজগুলিতে পূর্ণ সময়ের অধ্যাপকের সংখ্যা তলানিতে ঠেকে। বহু মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন গবেষক, ছাত্রছাত্রী বঞ্চিত হন।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর তদানীন্তন উচ্চ শিক্ষা বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি সুগত মারজিৎ এই সমস্ত আংশিক সময়ের অধ্যাপকদের স্থায়ীকরণের বিপক্ষে মত প্রকাশ করেন (আনন্দবাজার পত্রিকা, ২-৯-১১)। তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ঘোষণা করেন এঁদের জন্য বিভিন্ন সরকারি চাকুরি ক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ও সংরক্ষণের কথা। তা সত্ত্বেও এঁরাই বেশির ভাগ কলেজে সংখ্যাগুরু। এঁদের অনেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেননি। পারলে তাঁরা এই পদ ছেড়ে দিতেন। কারণ, বেতন কাঠামো ও কর্ম নিরাপত্তার দিক দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক পদ অনেক বেশি আকর্ষণীয়।
আংশিক সময়ের অধ্যাপকদের স্থায়ীকরণের পর ২০১২ সালে তৎকালীন ডিপিআই (ডাইরেক্টরেট অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন) অনীশ চট্টোপাধ্যায়কে তাঁর দফতরে তথ্য চাওয়া হয়েছিল, এঁদের কত শতাংশের পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক পদের জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা (নেট/সেট/স্লেট উত্তীর্ণ ও কত শতাংশের ৫৫ শতাংশ নম্বর-সহ স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ) আছে। এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর মেলেনি।
পত্রলেখেকের দাবি অনুযায়ী, আংশিক সময়ের অধ্যাপকদের যদি পূর্ণ সময়ের অধ্যাপকদের সমান মর্যাদা ও অধিকার দেওয়া হয়, তা হলে পশ্চিমবঙ্গ মহাবিদ্যালয় কৃত্যক আয়োগ নির্ধারিত পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক নিয়োগ প্রক্রিয়া তুলে দেওয়া হোক। কলেজগুলি নিজেরাই সমস্ত পদে আংশিক সময়ের অধ্যাপক নিয়োগ করবে। নির্দিষ্ট সময় কাজের পর সবাইকে পূর্ণ সময়ের অধ্যাপক পদে রূপান্তরিত করা হবে। তা হলেও প্রশ্ন থেকে যায় যাঁরা এই প্রক্রিয়ার বলি হলেন, উচ্চমানের যোগ্যতা সত্ত্বেও জীবনের কাঙ্ক্ষিত পেশা থেকে বঞ্চিত হলেন, তাঁদের ক্ষতিপূরণ কে দেবে?
মুকুল চক্রবর্তী
ডেবরা, পশ্চিম মেদিনীপুর
অধর্ম
কুনাল সাহা ডাক্তারদের যে ধর্মঘটকে বেআইনি বলেছেন, তা শুধু বেআইনিই নয়, বরং অনৈতিক, অন্যায়, এবং সর্বোপরি মানবসেবার পরিপন্থী, অধর্ম (সম্পাদক সমীপেষু, ৮-৯)। এক জন রোগীর পরিবার বা আত্মীয়স্বজন অন্যায় করলে যেমন সমগ্র দেশের মানুষ খারাপ হয়ে যায় না, তেমনই এক জন কি দু’জন ফাঁকিবাজ ডাক্তার থাকলে তার ফলে সকল চিকিত্সক সমাজ অমানুষ হয়ে যায় না।
ধর্মঘট/ কর্মবিরতি করে নিজেদের এতটা নামিয়ে আনা ঠিক নয়। ডাক্তারের কাছে সমাজের অনেক প্রত্যাশা। কোনও ভাবেই এই পরিষেবা বন্ধ করা যায় না, কারণ একটি জীবন চলে গেলে তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা কারও নেই। ডাক্তারি পড়তে আসার আগে এবং পাশ করার পর, ডাক্তারকে যে গুরুদায়িত্ব নিতে হয়, নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থকে সরিয়ে রাখতে হয়, এটা সর্বদা মাথায় এবং মনে রাখা প্রয়োজন। শুধু অর্থ ও প্রতিপত্তির জন্য যাঁরা ডাক্তারি পড়তে আসেন, তাঁরা এই মহান উদ্দেশ্যের কথা জানেন না।
ডাক্তার-রোগীর সম্পর্ক যে একটি মানবিক সম্পর্ক, সেটা এই যান্ত্রিক যুগে যন্ত্রসর্বস্ব ডাক্তাররা বুঝবেন না।
অর্চনা ভট্টাচার্য
চুঁচুড়া, হুগলি
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়