Mamata Banerjee

সম্পাদক সমীপেষু: সোনার পাথরবাটি

খ্যমন্ত্রীর ‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে শামিল’ করার নাম করে বিপক্ষের নির্বাচিত সদস্যদের ভাঙিয়ে একটার পর একটা পঞ্চায়েত ও পুরসভা দখল করে নিয়েছে তৃণমূল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৩৪
Share:

‘কতটা সচেতন রাজ্যের মানুষ’ (১৭-৪) প্রবন্ধে জয় গোস্বামী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় শাসক দল সম্পর্কে রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে যে কয়েকটি বিপদের দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন, সেগুলি হল— ১) রাজনৈতিক দল ভাঙানোর খেলা, ২) হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি ও ধর্মীয় সন্ত্রাস, ৩) স্বৈরাচারী মনোভাব, ৪) প্রশাসকের দায়িত্ব থাকলেও দলের উপরে না ওঠা, এবং ৫) বিক্ষোভরত চাষিদের প্রতি কর্ণপাত না ক‍রা। আমি সম্পূর্ণ সহমত। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও কি একই অভিযোগে অভিযুক্ত করা যায় না? দল ভাঙানোকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে রাজ্যের বর্তমান শাসক দল। মুখ্যমন্ত্রীর ‘উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে শামিল’ করার নাম করে বিপক্ষের নির্বাচিত সদস্যদের ভাঙিয়ে একটার পর একটা পঞ্চায়েত ও পুরসভা দখল করে নিয়েছে তৃণমূল। ২০১১ সালের আগে পশ্চিমবঙ্গবাসী কখনও ভোটে এমন ধর্মীয় মেরুকরণ দেখেনি। কখনও দেখেনি কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে ভোটের আগে মন্দিরে মন্দিরে ছুটতে, বা ভোটের প্রচারের সভায় চণ্ডীমন্ত্র আর হিন্দু দেবদেবীর নাম আওড়াতে। এটা কি সাম্য বজায় রাখার চেষ্টা? ধর্মনিরপেক্ষতা কি সবার সামনে প্রমাণ করে দেখাতে হয়? পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণকাণ্ডে সত্য উদ্ঘাটনকারী দয়মন্তী সেনের কপালে পুরস্কারের পরিবর্তে জুটেছিল উত্তরবঙ্গে বদলি। এ কেমন ধর্মপালন?

Advertisement

আর প্রশাসনে থেকে দলের উপরে ওঠা? এ তো সোনার পাথরবাটি বলে আজ মনে হয়। ছাত্রনেতা কলেজের অধ্যক্ষকে হেনস্থা করলে তাকে ‘ছোট্ট ঘটনা’ আখ্যা দেওয়া, অধ্যাপিকাকে জগ ছুড়ে মারার জন্য তৃণমূল নেতাকে ছ’বছর দল থেকে নির্বাসনের শাস্তি দিয়েও দলের প্রয়োজনে কয়েক মাস পরে শাস্তি তুলে নেওয়া— দলের উপরে ওঠা কি এতই সোজা? প্রধানমন্ত্রী চাষিদের প্রতি যে অমানবিক মুখ দেখাচ্ছেন, তার নিন্দার ভাষা নেই। কিন্তু আমাদের রাজ্যে অল্পবয়সি ছেলেমেয়েরা শিক্ষকতার পরীক্ষায় পাশ করেও নিয়োগের জন্য মাসের পর মাস অনশন করছে, ধর্না দিচ্ছে, পুলিশের লাঠিপেটা খাচ্ছে— এটাও কম অমানবিক নয়।

পরিশেষে বলি, কতটা সচেতন আমাদের রাজ্যের মানুষ? মানুষ যখন পরিবর্তন চায় তখন পরিবর্তে কারা আসছে, কেমন চালাবে, এ সব ভাবে না। ২০১১ সালে মানুষ কি বুঝেছিল, যে সরকার আসছে তার আমলেও রাজনৈতিক হিংসা-খুনোখুনি থাকবে, বেকারত্ব বাড়বে, সরকারি চাকরিতে দুর্নীতির রমরমা হবে? মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও শিল্প, কলকারখানার এমন খরা হবে?

Advertisement

অসিত কুমার নায়ক, নরেন্দ্রপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা

সম্প্রীতির সুর

জয় গোস্বামীর নিবন্ধ পড়ে মন ভরে গেল। ভারতে পশ্চিমবঙ্গই সেই রাজ্য, যেখানে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক উস্কানি সত্ত্বেও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আজও সম্প্রীতির অটুট মেলবন্ধন রয়েছে। মুর্শিদাবাদের শুধু কিরীটেশ্বরী মন্দির (কথিত আছে, এখানে দক্ষযজ্ঞের সময় দেবীর কিরীট, অর্থাৎ মুকুট পড়েছিল) চত্বরেই নয়, সম্প্রীতির আলোকোজ্জ্বল চিত্রটি এই জেলার অনেক জায়গায় এখনও বিরাজ করছে। যেমন, মুর্শিদাবাদের রানিনগর ব্লকের ইসলামপুরের প্রায় ২২৫ বছরের প্রাচীন বাইশ মূর্তির দুর্গাপুজো এখনও হিন্দু-মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেমিশে পরিচালনা করেন। বহরমপুরের খাগড়া স্বর্গধামের বড় মসজিদে জুম্মাবারে মৌলবি সাহেবের কাছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলারা ছাড়াও বহু হিন্দু মহিলা আসেন সন্তানকে কোলে নিয়ে, আশীর্বাদ পেতে। আবহমান কাল ধরে এটাই বাংলার সম্প্রীতির মূল সুর।

আর একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্তও রোজ দেখতে পাই সদর বহরমপুর থেকে প্রান্তিক ডোমকল মহকুমায় বাসে করে যাতায়াতের পথে। বাসের মালিক মুসলিম। ড্রাইভার এবং কন্ডাক্টর হিন্দু। ড্রাইভারের সামনে মা কালীর ছবি। বাস ছাড়ার সময়ে ড্রাইভার সেই ছবিতে ফুলের মালা, ধূপকাঠি জ্বালিয়ে প্রণাম করে বাসে স্টার্ট দেন। আবার অন্য দিকে, হিন্দু মালিকের বাসে মুসলিম ড্রাইভার ও কন্ডাক্টর। ড্রাইভারের সামনে মক্কা-মদিনার ছবি। তিনি বাস ছাড়ার আগে দোয়া বা প্রার্থনা করেন।

এই যে পারস্পরিক সম্পর্কের চিত্রটি রোজ চোখের সামনে ভেসে ওঠে, তাতে কোনও বিদ্বেষ নেই। আছে পরস্পরের প্রতি অনাবিল ভালবাসা, শ্রদ্ধা। কিছু রাজনৈতিক দল এই মুহূর্তে রাজনৈতিক লাভের প্রত্যাশায় বাংলার সাম্প্রদায়িক ঐক্যের বাতাবরণটি ধ্বংস করতে চাইছে। আশা করা যায়, বাংলার মানুষ সচেতন ভাবে এই প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করবেন।

তুষার ভট্টাচাৰ্য , কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ

দলের ঊর্ধ্বে?

জয় গোস্বামী কেন্দ্রের বর্তমান শাসক দল, তথা প্রধানমন্ত্রীর স্বৈরাচারী মনোভাব সম্পর্কে যা বলতে চেয়েছেন, তা সর্বাংশে মেনে নিয়ে দু’একটি কথা উল্লেখ করতে হয়। প্রশাসনে থাকলে দলের উপরে ওঠার দায়িত্ব দেশের প্রধানমন্ত্রীর মতোই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরও। অপ্রিয় হলেও এটা সত্যি, এ রাজ্যে বিরোধী দলের কোনও জনপ্রতিনিধিকে জেলায় জেলায় অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক বৈঠকে ডাকা হয় না। প্রকল্প উদ্বোধনেও এলাকার বিধায়ক এবং সাংসদকে আমন্ত্রণ জানানোর রেওয়াজ বিরোধী দলের ক্ষেত্রে মান্যতা পায় না। ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে দল ভাঙানোর খেলা এ রাজ্যের বর্তমান শাসক দলই শুরু করেছিল। যদিও‌ অর্থ এবং রাষ্ট্রক্ষমতার জোরে বিজেপি এই খেলায় তাদের পিছনে ফেলে দিয়েছে। সমালোচনা বা বিরোধী কণ্ঠস্বর কোনও শাসকই পছন্দ করেন না। ইতিহাসে তার পর্যাপ্ত উদাহরণ আছে। ‘বদলা নয়, বদল চাই’ প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় আসা তৃণমূল দল তার ব্যতিক্রম হয়ে উঠতে পারেনি।

উগ্ৰ হিন্দুত্ববাদী ছাড়া বাবরি মসজিদ ধ্বংসে সকলকেই ব্যথিত। পশ্চিমবঙ্গ-সহ দেশের নানা প্রান্তে মুসলিম শাসক এবং মোগল আমলের বিখ্যাত সব স্থাপত্য এবং সৌধ ছড়িয়ে আছে, যার অনেকগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ সংস্থা রক্ষণাবেক্ষণ করে থাকে। ইতিহাসের সাক্ষী সেই সব স্থাপত্য গভীর আগ্ৰহ নিয়ে মানুষজন দেখতে যান। সেখানে হিন্দু বা মুসলমানের কোনও ভেদাভেদ নেই। কিরীটেশ্বরী মন্দিরের গাত্রে লিখিত ফলকের ন্যায় সেগুলিও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নিদর্শন হয়ে আছে। বন্ধুত্ব তো বটেই, বৈবাহিক সূত্রে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক স্থাপন রাজ্যে বিরল নয়। এই সৌহার্দ এবং সম্প্রীতি কোনও রাষ্ট্রশক্তির পক্ষে নষ্ট করা সম্ভব কি? জীবনধারণের মৌলিক চাহিদার দিকে নজর না দিয়ে, ধর্মের নামে বিভেদ ঘটিয়ে কী লাভ?

ধীরেন্দ্র মোহন সাহা, কলকাতা-১০৭

সাময়িক

বিদ্বেষ ছড়াতে যে বিজেপি নেতারা সফল, তা মানতেই হবে। দিলীপ ঘোষ এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “ভোটে না জিতলে কি আদর্শ ধুয়ে জল খাব?” (১৫-৪)। জলপাইগুড়িতে চার নম্বর গুমটির কাছে একটি জাগ্রত মসজিদ আছে। পরীক্ষার সময় সেখানে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মোমবাতি জ্বালানোর ধুম পড়ে। মসজিদের উল্টো দিকের বিরাট মাঠে শহরের অন্যতম বড় দুর্গাপুজো হয়। ব্যারাকপুরে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ ও মসজিদ পাশাপাশি, মাঝখানে প্রাচীরটুকুও নেই। আসলে, এই বিষয়গুলি আমাদের কাছে এতই স্বাভাবিক ছিল যে, আলাদা করে কোনও মন্দিরের জন্য কোনও মুসলিম পরিবার জমি দান করেছেন, তা নিয়ে কখনও কথা বলতে হবে, ভাবিনি। অথচ, এখন পরিস্থিতি এ সব নিয়ে আলোচনা করতে বাধ্য করছে। বাংলার মানুষ সচেতন ছিলেন, আছেন, থাকবেন। সাম্প্রদায়িক স্বাভাবিকতা বজায় থাকবে। এই তৈরি করা ‘হিন্দুস্থান’ নিয়ে আলোচনার পরিস্থিতি সাময়িক। বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের ধারা অবিচ্ছিন্ন থাকবে।

শঙ্খমণি গোস্বামী, কলকাতা-১২২

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন