Misogyny

সম্পাদক সমীপেষু: এ হল নগ্ন নারীবিদ্বেষ

সুশান্তের মৃত্যুর কিছু দিনের মধ্যে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গেই এক শ্রেণির মিডিয়ার কল্যাণে রিয়ার চরিত্রহননের এক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০১
Share:

সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অকালমৃত্যুর পর তাঁর বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তী চরম হেনস্থার শিকার হয়েছেন। এই প্রবণতা উদ্বেগজনক। যে কোনও অভিযোগই সুনির্দিষ্ট পদ্ধতির মাধ্যমে প্রমাণসাপেক্ষ। রিয়ার ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়। সুশান্ত বেঁচে থাকলে হয়তো তিনিও মাদক প্রসঙ্গে কিছু প্রশ্নচিহ্নের সামনে পড়তেন। তবু যে সন্দেহজনক ব্যস্ততায় রিয়াকে সমাজমাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে, তা নিন্দনীয়।

Advertisement

সুশান্তের মৃত্যুর কিছু দিনের মধ্যে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক তৎপরতার সঙ্গেই এক শ্রেণির মিডিয়ার কল্যাণে রিয়ার চরিত্রহননের এক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তার মধ্যে পেশাগত নৈতিকতা বা মূল্যবোধের পরিচয় দূরদূরান্ত পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায় না। তাঁর সামাজিক সম্মান অত্যন্ত অশিষ্ট ভঙ্গিতে নষ্ট করা হচ্ছে। পিতৃতন্ত্রের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকা নারীবিদ্বেষ যেন এই ঘটনায় আরও নগ্ন হয়ে গেল। এর সঙ্গে প্রাদেশিকতার জড়িয়ে যাওয়া, বর্তমান ভারতের রাজনৈতিক চেহারার সঙ্গে ভালই মিলে যায়। এই সব তরজায় হারিয়ে যাচ্ছে একটি বিষাদঘন মৃত্যুর প্রকৃত কারণ। আমরা ভুলে যাচ্ছি, উচ্চশিক্ষা বা পেশাগত জীবনে সফল হওয়ার সঙ্গে অবসাদগ্রস্ত বা মাদকাসক্ত হওয়ার সম্পর্ক নেই। এই সমস্যাকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। নাগরিকদের সে পথে চালিত করার কাজে রাষ্ট্র তার দায়িত্ব অস্বীকার করতে পারে না।

সুলগ্না খান

Advertisement

কলকাতা-৫৯

পক্ষপাত

‘‘রিয়াকে ধ্বস্ত করে ‘সতীদাহের উল্লাস’’’ (১০-৯) প্রতিবেদনে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির কণ্ঠ তুলে ধরা হয়েছে। অর্থনীতিবিদ, মনস্তত্ত্ববিদ, সমাজবিদ, সাংবাদিক ও অভিনেতাদের বক্তব্য রয়েছে এতে। নেটিজ়েন সমাজের উল্লেখও পাই। কিন্তু প্রতিবেদনটি সমাজের বক্তব্য হয়ে উঠতে পারেনি, হয়ে উঠেছে মূলত রিয়া চক্রবর্তীর প্রতি প্রচ্ছন্ন পক্ষপাতের এক প্রতিবেদন।

ছাপোষা নাগরিক হিসেবে বলি, রিয়া চক্রবর্তী এবং সুশান্ত সিংহ রাজপুত মুম্বইয়ের দুই শত্রুভাবাপন্ন ক্যাম্পের লড়াইয়ের দুই ঘুঁটি। রাজনীতি আমাদের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে। তাই এক দিকে কেন্দ্র, অন্য দিকে মহারাষ্ট্র সরকার। হত্যাই হোক বা আত্মহত্যা, মুম্বই পুলিশ কী ভাবে এতটা নিঃস্পৃহ থাকতে পারে? বিহার পুলিশকে আসরে নামতে হল কেন? দুই রাজ্যের পুলিশকে লড়িয়ে দিল কারা?

ঘটনাপ্রবাহের গতিপ্রকৃতি সাধারণ মানুষকে যে উপসংহারের দিকে এগিয়ে দেয় তা হল, কিছু একটা চাপা দেওয়ার বেহিসেবি চেষ্টা চলছে এক দিকে, অন্য দিকে তা তুলে আনার প্রাণান্তকর প্রয়াস জারি রয়েছে। আর এই দুইয়ের ফল হল সিবিআই-ইডি-মহারাষ্ট্র সরকার-রিয়া চক্রবর্তী। এখানে ‘সতীদাহের উল্লাস’ একটা কাব্য-কাব্য গন্ধ আমদানি করতে পারে, তবে অপরাধীর খোঁজ জারি রাখা প্রশাসনের কাজ, যাতে তাকে তোলা যায় আদালতে।

‘মিডিয়া ট্রায়াল’ আজকের দিনে অতিবাস্তব ও অপরিহার্য। সুতরাং, মানুন বা না-মানুন, এর মুখোমুখি হতেই হবে। বিষয়ের পিছনে ধাওয়া করা বা ঘটনার অন্তর্তদন্ত মিডিয়ার অধিকার। বিষয়-নির্বাচনও একান্তই তার নিজের ইচ্ছা।

বিপ্লব গুহরায়

কান্দি, মুর্শিদাবাদ

অন্যায় নয়

বিদ্বজ্জনেরা জনগণের আদালতে রিয়া চক্রবর্তীর উৎপীড়নকে ‘সতীদাহের উল্লাস’ রূপে বর্ণনা করেছেন। দেশের সাধারণ মানুষ জাত্যভিমান ভুলে একটি উজ্জ্বল তারকার মর্মান্তিক মৃত্যুর যথাযথ তদন্ত চাইছে, ড্রাগ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠছে— এটা তো অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। কারও নিকটজনের এই ভাবে অপমৃত্যু হলে তিনি কি চুপচাপ বসে থাকবেন?

অতীতে একটি অমানবিক কুসংস্কারের বলি হয়ে ভারতীয় নারীরা বহু দিন ধরে সতী হয়ে আসছিলেন। রাজা রামমোহন রায় সেই প্রথা রোধ করেন লর্ড উইলিয়াম বেন্টিঙ্কের সহায়তায়। আজ সারা ভারত ড্রাগ মাফিয়াদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে। শুধু মুম্বই কেন, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে আজ ড্রাগ মাফিয়ারা ধরা পড়ছে। তা সত্ত্বেও একে সতীদাহের উল্লাস বলছেন? এমন মন্তব্য করে সতীদাহের শিকার নারীদের অপমান করবেন না।

তরুণ কুমার নিয়োগী

কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

শুধু সুশান্ত?

সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে মিডিয়া, প্রশাসন, সরকারের তৎপরতা তুঙ্গে। কিন্তু, বছরের পর বছর আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ কৃষকের আত্মহত্যা, নির্যাতনের শিকার হয়ে নারীর আত্মহত্যা, বেকারত্বের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে চলেছে। সেই দিকে সরকারের কোনও নজর নেই, মাথাব্যথাও নেই। প্রশাসন আর আইনবিভাগ ধনীদের নিয়েই চিন্তিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে প্রতি ৪০ মিনিটে এক জন করে আত্মহত্যা করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আর্থ-সামাজিক বৈষম্য, ধনী-দরিদ্র ব্যবধান, বঞ্চনা, হতাশা, সামাজিক অধিকার না পাওয়ার যন্ত্রণা মানুষকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবস ছিল। সরকারি, বেসরকারি তরফে, মিডিয়াতেও এ নিয়ে সচেতনতার কোনও চেষ্টাই চোখে পড়েনি। করোনার করাল গ্রাসে ইতিমধ্যেই দু’কোটি মানুষের বাঁধা চাকরি খোয়া গিয়েছে। সামনে কঠিন সময়। এর মোকাবিলা করতে না পারলে আত্মহত্যার ঘটনা আরও বাড়বে। শুধু সুশান্ত সিংহের আত্মহত্যা নিয়ে মেতে থাকলেই হবে?

অরুণ মালাকার

কলকাতা-১০৩

মনের কলুষ

অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত, সেই সময়ে অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু এক সম্পূর্ণ ভিন্ন সামাজিক সমস্যার উপর আলোকপাত করেছেন। এটা অত্যন্ত সময়োচিত। এই বিষয়ে মিডিয়ার একপেশে সংবাদ পরিবেশন মানুষকে আরও উত্তেজিত করে তুলছে। দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীর সম্পর্কের মধ্যে কিছু অপরাধের ঘটনা ঘটলে প্রকৃত কারণ প্রমাণের আগে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করে উন্মত্ত আচরণ কেন?

রাজা রামমোহন রায়, বিদ্যাসাগর তৎকালীন কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। দুর্ভাগ্যের বিষয়, এত দিনেও অধিকাংশ মানুষের মনের সেই কলুষতা দূর হয়নি। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠছে। এরাই সুযোগ বুঝে নখ-দাঁত বার করে রিয়া, দীপিকাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

সুমিত সাহা

কলকাতা-৩১

আর কত দিন?

মিডিয়ায় এখন শুধু সুশান্ত-রিয়া সংবাদ। সারাংশ, সুশান্ত অত্যন্ত ধনী, নামী নায়ক, কিন্তু নিতান্তই ভোলেভালা পুরুষ। অন্য দিকে রিয়া স্বার্থপর, উচ্চাকাঙ্ক্ষী, ও পুরুষভোলানো বাজে মেয়ে। উপরন্তু বাঙালি। তাই বাঙালি মহিলামাত্রেই স্বার্থপর। নিজের প্রেমিককে মাদকাসক্ত করতে পারে, কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করতে পারে, যদিও এর কোনওটিই এখনও প্রমাণিত নয়। আসলে সরকার সুচতুর ভাবে এটা প্রচারমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে নিজের পাহাড়প্রমাণ ব্যর্থতা আড়াল করতে চাইছে। দেশের অর্থনীতি তলানিতে, কোটি কোটি লোক কর্মচ্যুত, করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ। সরকার দিশাহীন। তাই সুশান্ত-রিয়া আফিমে সবাইকে বুঁদ করে দাও। কিন্তু এ ভাবে কত দিন? নাটকীয়তা আর মিথ্যাচারের স্বরূপ এক দিন উদ্ঘাটিত হবেই।

তপন কুমার দাস

কলকাতা-১২২

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

‘ফেসবুকে ভোটের খেলা...’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (পৃ ৬ ও কিছু সংস্করণে পৃ ৮, ১৬-৯) ‘সেভারেন্স প্যাকেজ’কে ‘সেফারেন্স’ লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন