সম্পাদকীয় ১

যাত্রা শুভ হউক

এই ব্যবস্থায় অনেকগুলি সমস্যা এড়াইয়া যাওয়া সম্ভব হইবে। প্রথমত, কোন সংস্থা কোন পথে ট্রেন চালাইবার অধিকার পাইবে, তাহা বাজারের নিয়মেই স্থির করা যাইবে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০৭
Share:

এত দিন অবধি রেল যে সামাজিক দায়বদ্ধতা স্বীকার করিয়াছে, পরিচালনার ভার বেসরকারি ক্ষেত্রে গেলেও কি তাহা অপরিবর্তিত থাকিতে পারে?

একটি জরুরি সংস্কারের পথে দ্বিতীয় পদক্ষেপ করিল কেন্দ্রীয় সরকার। বেশ কয়েকটি পথে ট্রেন চালাইবার দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থার হাতে ন্যস্ত হইবে। কিছু দিন পূর্বে রেল মন্ত্রক জানাইয়াছিল, পরীক্ষামূলক ভাবে কয়েকটি পথে বেসরকারি সংস্থার দ্বারা ট্রেনচালনার কথা ভাবা হইতেছে। এই দফার সিদ্ধান্তে অনুমান করা চলে, এই সংস্কারটিকে সরকার গুরুত্ব দিতেছে। সিদ্ধান্তটি স্বাগত। তবে, ইহাকেই সংস্কারের চূড়ান্ত ধরিয়া লইলে ভুল হইবে। ইহা বড় জোর প্রথম ধাপ। রেল চালনার কাজটি সম্পূর্ণত বেসরকারি হওয়াই বিধেয়। সরকারের কর্তব্য পরিকাঠামো নির্মাণ এবং তাহার রক্ষণাবেক্ষণ। এবং, অতি অবশ্যই, ক্ষেত্রটির উপর নজরদারি। সব পথের সব গাড়িই যে বেসরকারি হাতে তুলিয়া দিতে হইবে, এমন কোনও কথা নাই। কেন্দ্রীয় সরকার একটি স্বশাসিত নিগম তৈরি করিতে পারে, যাহা অন্যান্য বাণিজ্যিক সংস্থার ন্যায় ট্রেন চালাইবে। এয়ার ইন্ডিয়ার উদাহরণটি স্মর্তব্য। কিন্তু, সেই সংস্থাটি রাষ্ট্রায়ত্ত বলিয়া তাহাকে বাড়তি কোনও সুবিধা দেওয়ার প্রশ্ন নাই। অন্যান্য বাণিজ্যিক সংস্থার ক্ষেত্রে যে নিয়ম প্রযোজ্য হইবে, সরকারি সংস্থাকেও তাহাই মানিতে হইবে। এবং, ক্ষেত্রটি প্রতিযোগিতার নিয়ম মানিয়া চলিতেছে কি না, যাত্রীদের স্বার্থরক্ষা হইতেছে কি না, তাহা দেখিবার দায়িত্ব থাকিবে একটি নজরদারি সংস্থার উপর। টেলিকম ও আর্থিক ক্ষেত্রে যথাক্রমে ট্রাই ও সেবি যে ভূমিকা পালন করে।

Advertisement

এই ব্যবস্থায় অনেকগুলি সমস্যা এড়াইয়া যাওয়া সম্ভব হইবে। প্রথমত, কোন সংস্থা কোন পথে ট্রেন চালাইবার অধিকার পাইবে, তাহা বাজারের নিয়মেই স্থির করা যাইবে। নিলামে যে সংস্থা সরকারকে সর্বাধিক রাজস্ব দিতে সম্মত হইবে, পথের অধিকারও তাহারই হইবে। বস্তুত, একই পথে একাধিক সংস্থার গাড়িও চলিতেই পারে। দ্বিতীয়ত, রেল পরিবহণের ক্ষেত্রটি যদি বাজারের নিয়ম মানিয়া চলে, তাহার যাত্রিভাড়াও বাজারের নিয়মে নির্ধারিত হওয়াই বিধেয়। সরকার যদি প্রত্যক্ষ ভাবে রেলের একটি অংশ পরিচালনা করে এবং বর্তমান নিয়মে ভাড়া স্থির করে, তবে বেসরকারি সংস্থার উপরও সেই হার মানিবার অন্তত একটি পরোক্ষ চাপ থাকিবে— এবং, আশঙ্কা হয়,

চাপটি পরোক্ষ না হইয়া প্রত্যক্ষও হইয়া উঠিতে পারে। সেই পরিস্থিতি অনভিপ্রেত। তৃতীয়ত, গোটা ব্যবস্থাটিই বাজারের নিয়ম মানিয়া চলিলে সরকারি পক্ষপাতের আশঙ্কাও থাকিবে না। কোনও নির্দিষ্ট শিল্পগোষ্ঠীর প্রতি, বা সরকারি অংশের প্রতি— কোনও দিকেই ঝুঁকিয়া থাকা সরকারের পক্ষে কাম্য নহে। গোটা ব্যবস্থাটিই বাজারের হাতে থাকিলে সেই সম্ভাবনা নির্মূল হইবে, নিদেনপক্ষে কমিবে।

Advertisement

এ-ক্ষণে প্রশ্ন হইল, এত দিন অবধি রেল যে সামাজিক দায়বদ্ধতা স্বীকার করিয়াছে, পরিচালনার ভার বেসরকারি ক্ষেত্রে গেলেও কি তাহা অপরিবর্তিত থাকিতে পারে? বয়স্ক নাগরিক বা ছাত্রদের জন্য ভাড়ায় ছাড়, অসংরক্ষিত বা সাধারণ স্লিপার ক্লাসের ভাড়া কম রাখা— বেসরকারি পুঁজিও কি এই দায়িত্ব পালন করিবে? না। এবং, তাহাদের স্কন্ধে সেই বোঝা চাপাইয়া দেওয়াও অনুচিত হইবে। এই দায়িত্বগুলি সরকারের। এখন প্রত্যক্ষ নগদ হস্তান্তরের যুগ। প্রত্যেকে বাজার দরে টিকিট কাটিয়া লউন— তাহার পর যাঁহাকে প্রয়োজন, সরকার তাঁহাকে ভর্তুকি দিবে। যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে রেলের যে বিপুল ক্ষতি হয়, বেসরকারিকরণের ফলে তাহা কমিলে, লাইনের ভাড়া বাবদ সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়িলে এই ভর্তুকির পরিমাণ প্রয়োজনে বাড়ানোও যাইতে পারে। বাজারকে নিজের নিয়মে চলিতে দিলে সরকারেরও যে চলিতে সুবিধা হয়, এই কথাটি ভারতীয় রাজনীতি বুঝিলেই মঙ্গল। বেসরকারি রেলের পথে যাত্রা শুভ হউক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন