কাঙ্খিত পথ কি সঙ্কীর্ণতার দিকে নিয়ে যাবে?

হিলারি ক্লিন্টনকে পরাজিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই দেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। জনমত সমীক্ষার ফলাফল, নির্বাচনী পন্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণী, প্রচারকৌশল ও আনুষঙ্গিক নানা কারণে তৈরি হওয়া ধারণাকে চুরমার করে ট্রাম্পের এই জয় পুরনো একটা বাক্যবন্ধকে নতুন ভাবে যেন সামনে নিয়ে এল। মার্কিন নাগরিকেরা যেন বললেন, ইয়েস উই ক্যান।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০৩:১০
Share:

নির্বাচনে জয়ের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স।

হিলারি ক্লিন্টনকে পরাজিত করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই দেশের প্রেসিডেন্ট হিসাবে বেছে নিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ। জনমত সমীক্ষার ফলাফল, নির্বাচনী পন্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণী, প্রচারকৌশল ও আনুষঙ্গিক নানা কারণে তৈরি হওয়া ধারণাকে চুরমার করে ট্রাম্পের এই জয় পুরনো একটা বাক্যবন্ধকে নতুন ভাবে যেন সামনে নিয়ে এল। মার্কিন নাগরিকেরা যেন বললেন, ইয়েস উই ক্যান।

Advertisement

আট বছর আগে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার মুখের সেই ‘ইয়েস উই ক্যান’ জনতার কলরোলে শতগুণে ধ্বনিত হয়ে আকাশ জুড়ে যখন ছড়িয়ে পড়ছিল, তার সঙ্গে এ বারের এই নাগরিকধ্বনির দূরত্ব সহস্র যোজন। এ বার মার্কিন জনতা করে দেখালেন। বেছে নিলেন নিজের পথ। কাঙ্খিত কি না, সেই যুক্তি ভেসে গেল মার্কিন অস্মিতার আবেগে। আট বছরে কতটা দূরের পথে চলে গেল আমেরিকা!

আট বছর আগের সেই আমেরিকা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা মানসকে পিছনে ফেলে এসেছিল। বর্ণবিভাজনের রেখাকে পার করে উদাত্ত এক আকাশের তলায় দাঁড়িয়েছিল সে দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেই আকাশ যার তলায় সব সীমানাই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়। তখন এক আশ্চর্য সময়, যখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রেখেও বিশ্বের উদ্দেশে হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে আমেরিকা। গ্লোবালাইজেশন— বিশ্বজনীনতার সময় তখন।

Advertisement

সময়টা পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত। পশ্চিম অথবা পূর্ব সব গোলার্ধেই এখন যেন জানলা বন্ধের প্রস্তুতি। দূরকে নিকট করার যথাযথ প্রয়াসের পটভূমিকে সরিয়ে দিয়ে এখন উঠে আসছে অস্মিতার আবেগ। আমি, আমার মানচিত্রের মধ্যে গণ্ডি কেটে-দেওয়া ভূমি, আমার স্বার্থ, আমার অস্তিত্বই শুধু প্রধান। শুধু তাই নয়, সেই প্রধানতা প্রমাণে প্রতিবেশী বা বহির্বিশ্বকে অপ্রধান করার আবেগ এখন যেন সর্বগ্রাসী। সেই কূলপ্লাবী আবেগকে যিনি ছুঁতে পারবেন, জয়মাল্য তাঁরই।

অস্মিতাবোধে দূষণীয় কিছু নেই। এই বোধ থাকা ভালও। কিন্তু আমার ভাল থাকা যে অন্যের ভাল থাকার উপরেও— এই সরল যুক্তিটি হৃদয়ঙ্গম করতে না পারলে অনাগত ভবিষ্যত্ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে না। রণহুঙ্কারের ঘনঘটায় অস্মিতাবোধেরও অসম্মান আছে, এটুকু বোঝা এখন আবশ্যক।

না হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প হুমকি দেবেন অভিবাসীদের প্রসঙ্গে। পূর্ব গোলার্ধে আমরা হুমকি দেব পাকিস্তানি শিল্পীদের। দরজা ছোট হতে থাকবে, জানলা বন্ধ হতে থাকবে, ছোট হয়ে আসতে থাকবে পৃথিবী।

ভয় হয়, দরজা এত ছোট হয়ে যাবে না তো, মাথা নিচু করে ছাড়া যেখানে ঢোকাই সম্ভব নয়?

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement