পুষ্টিবিদ। ছবি: সংগৃহীত।
দ্রুত গতির জীবনে নিত্যসঙ্গী মানসিক চাপ ও উদ্বেগ। তারই দোসর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস।
শরীর সুস্থ রাখাটাই যেন চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা দূর করতে একজন নিউট্রিশনিস্ট বা পুষ্টিবিদের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
পুষ্টিবিদেরা স্থির করে দেন কার কেমন খাবারের প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্য সম্পর্কে পুষ্টিবিদেরা পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন।
পুষ্টিবিদ হওয়ার জন্য কী ধরনের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন
১) পুষ্টিবিদ্যা নিয়ে পড়তে হলে শিক্ষার্থীদের কোনও স্বীকৃত বোর্ড থেকে বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক উত্তীর্ণ হতে হবে। দ্বাদশে জীববিদ্যা বা বায়োলজি থাকা আবশ্যক। রসায়নও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক কলেজেই দ্বাদশে রসায়ন ছিল কিনা, তা বিবেচনা করা হয়। তবে ব্যতিক্রমও রয়েছে। কিছু কলেজে পুষ্টিবিদ্যা পড়ার জন্য দ্বাদশে বায়োসায়েন্স/ বায়োলজি/ পদার্থবিদ্যা এবং পুষ্টিবিদ্যা থাকতে হয়।
২) নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটেটিক্স/ ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন/ হোম সায়েন্স (এ ক্ষেত্রে নিউট্রিশনে স্পেশালাইজ়েশন থাকা জরুরি) নিয়ে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করতে হবে।
৩) এর পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এমএসসি-র পর পিএইচডিও অর্জন করতে পারেন পড়ুয়ারা।
৪) এ ছাড়া, পুষ্টিবিদ্যায় এক বছরের পিজি ডিপ্লোমা কোর্সও করতে পারেন পড়ুয়ারা।
স্পেশালাইজ়েশন:
স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি-র ক্ষেত্রে পড়ুয়ারা পুষ্টিবিদ্যায় নিউট্রিশন ও ডায়েটিক্স, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন, ফুড সায়েন্স এন্ড নিউট্রিশন, পাবলিক হেলথ নিউট্রিশন, স্পোর্টস নিউট্রিশন, পেডিয়াট্রিক্স নিউট্রিশন-এই সমস্ত বিষয়গুলিতে স্পেশালাইজ় করতে পারেন। যা পরবর্তীকালে এই ক্ষেত্রগুলিতে বিশেষজ্ঞ হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কাজে আসবে।
পুষ্টিবিদের রকম ফের :
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট— ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্টরা সাধারণত চিকিৎসার সঙ্গে সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলিতে কাজ করে রোগীদের পুষ্টির বিষয়টির উপর নজর রাখেন, যাতে তাঁদের দ্রুত রোগমুক্তি ঘটে।
পেডিয়াট্রিক নিউট্রিশনিস্ট— পেডিয়াট্রিক নিউট্রিশনিস্টরা শিশুদের রোগমুক্তি ও তাদের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে আনার জন্য সুষম খাদ্যাভাসের দিকটিতে নজর দেন।
স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্ট— স্পোর্টস নিউট্রিশনিস্টরা খেলোয়াড়দের শরীর সুস্থ রাখার উদ্দেশ্যে কাজ করেন।
পাবলিক হেলথ নিউট্রিশনিস্ট—
পাবলিক হেলথ নিউট্রিশনিস্টরা কোনও নির্দিষ্ট সামগ্রিক ভাবে জনসাধারণের খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর দিয়ে কি করে তাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটানো যায়, সেটি নিয়ে কাজ করেন।
চাকরিক্ষেত্র :
পুষ্টিবিদ্যা পড়ে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, বহুজাতিক সংস্থা, স্কুল, নিজস্ব ক্লিনিক, ফিটনেস সেন্টার,ডায়াবেটিক ক্লিনিক ইত্যাদি জায়গায় চাকরির সুযোগ মেলে।
বেতন কাঠামো :
একজন পুষ্টিবিদ তাঁর পেশাগত জীবনের শুরুতে মাসে প্রায় ২৫০০০ থেকে ৩০০০০ টাকা পারিশ্রমিক পেতে পারেন। এ ছাড়া, পুষ্টিবিদদের বার্ষিক আয় ন্যূনতম ২,৫০ লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ পর্যন্ত হতে পারে।
পুষ্টিবিদ্যা পড়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের কিছু উল্লেখ্যযোগ্য প্রতিষ্ঠান—
১) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
২) অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ হাইজিন অ্যান্ড পাবলিক হেলথ।
৩) সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ।
৪) বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়।
৫) বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়।
পুষ্টিবিদ্যা পড়ার জন্য দেশের কিছু উল্লেখ্যযোগ্য প্রতিষ্ঠান—
১) দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়।
২) জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়।
৩) অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্স (এমস) দিল্লি।
৪) মুম্বই বিশ্ববিদ্যালয়।
৫) ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউট্রিশন।
প্রবেশিকা পরীক্ষা :
কিছু কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক স্তরে পুষ্টিবিদ্যা নিয়ে পড়ার জন্য আলাদা ভাবে প্রবেশিকার আয়োজন করা হয় না। আবার কিছু প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রবেশিকা পরীক্ষা অথবা কুয়েট ইউজি (কমন ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স টেস্ট ফর আন্ডারগ্র্যাজুয়েশন)-র মাধ্যমে পড়ুয়াদের ভর্তি নেওয়া হয়।