প্রতীকী চিত্র।
পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্ব জুড়ে চর্চিত ভাষার সংখ্যা প্রায় সাত হাজারেরও বেশি। বিশ্বায়নের যুগে নেট মাধ্যমের প্রভাব বাড়তে থাকায়, গোটা দুনিয়ায় এখন হাতের মুঠোয়। একই সঙ্গে বদলে গিয়েছে চাকরির বাজারও। বহুজাতিক সংস্থাগুলির দৌলতে এবং রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক চাহিদার কারণে বর্তমানে এখন অনুবাদক বা ট্রান্সলেটরের চাহিদা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু অনুবাদকের কাজ কী, কী ভাবেই বা এই পেশায় ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা যায়, জানা যাবে এই প্রতিবেদন থেকে।
অনুবাদকের কাজ কী?
যে কোনও একটি ভাষার লিখিত বিষয়বস্তুকে অন্য ভাষায় ফুটিয়ে তোলাই অনুবাদ। কিন্তু শুধু আক্ষরিক অনুবাদ করেন না অনুবাদকেরা। মূল বিষয়ের মর্মবস্তু বুঝে, সাংস্কৃতিক বা আঞ্চলিক প্রেক্ষাপট অনুযায়ী এক ভাষা থেকে অন্য ভাষায় ভাবান্তর বা ভাষান্তরের কাজই করেন তাঁরা।
অনুবাদকের প্রকারভেদ
১। মেডিক্যাল ট্রান্সলেটর:
এঁদের মূলত লিখিত বা মৌখিক ভাবে স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলিকে অনুবাদ করতে হয়। তাঁকে মূল ভাষা (সোর্স ল্যাঙ্গুয়েজ) এবং অনুবাদের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষায় মেডিক্যাল টার্মগুলির বিষয়ে ধারণা থাকা জরুরি।
২। লিগ্যাল ট্রান্সলেটর:
অনুবাদকদের বিভিন্ন আইনি বিষয়ের ভাষান্তরের কাজ করতে হয়। জানতে হয় সমস্ত আইনি পরিভাষা।
৩। লিটারেরি ট্রান্সলেটর:
বিভিন্ন সাহিত্যের বই, কবিতা, ছোটগল্প, জার্নাল আর্টিকেল অনুবাদের কাজ করতে এঁদের। এ ক্ষেত্রে সাহিত্যগুণ অক্ষুণ্ণ রেখে এবং সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটটি মাথায় রেখেই অনুবাদ করতে হয় পেশাদারদের।
এ ছাড়াও অন্য পেশাদারি ক্ষেত্রের জন্যও অনুবাদকের চাহিদা রয়েছে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা
১। পড়ুয়াদের ন্যূনতম স্নাতক উত্তীর্ণ হতে হবে। যে ভাষায় অনুবাদ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, সেই ভাষায় স্নাতক হলে চাকরিক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বাংলা ভাষায় অনুবাদের কাজে আগ্রহী কোনও ব্যক্তি যদি বাংলায় ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর হন, তা হলে অগ্রাধিকার মিলবে।
২। যদি কোনও বিদেশি ভাষায় অনুবাদের কাজ থাকে, সে ক্ষেত্রে সেই ভাষায় তাঁদের ডিপ্লোমা বা সার্টিফিকেট কোর্স থাকা জরুরি। এ ছাড়া যদি পড়ুয়ারা সেই ভাষায় স্নাতক বা স্নাতকোত্তর করেন, তা হলেও চাকরির সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।
৩। এ ছাড়া, অনুবাদ বা ট্রান্সলেশনের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা সার্টিফিকেশন থাকলেও চাকরি ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাবেন পড়ুয়ারা।
প্রয়োজনীয় দক্ষতা
১। এই পেশায় আসার জন্য সংশ্লিষ্ট ভাষা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক জ্ঞান এবং দক্ষতা থাকা জরুরি।
২। প্রয়োজন লেখার পারদর্শিতা, কথোপকথনের দক্ষতা।
৩। কম্পিউটার সফটঅয়্যার এবং টেকনিক্যাল দক্ষতা থাকা প্রয়োজন।
ইন্টার্নশিপ
চাকরি ক্ষেত্রে সুবিধা এবং নিজেদের সিভি (জীবনপঞ্জি) আরও ভাল করে তৈরি করার জন্য বিভিন্ন সংস্থায় ইন্টার্নশিপ বা প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলে অগ্রাধিকার পান প্রার্থীরা। এর মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে প্রয়োজনীয় দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতাও তৈরি হয়।
চাকরির সুযোগ
অনুবাদকেরা বিভিন্ন বহুজাতিক সংস্থা থেকে শুরু করে সরকারি সংস্থা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, মেডিক্যাল প্রতিষ্ঠান, পর্যটন সংস্থা, প্রকাশনা সংস্থা-সহ অন্যত্র কাজের সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া, সংস্থাগুলির সঙ্গে ফ্রিলান্সার বা নিজেদের সুবিধামতো কাজ করার সুযোগও পাবেন।
বেতন কাঠামো
ফ্রিলান্সার এবং পূর্ণ সময়ের চাকরির ক্ষেত্রে বেতন কাঠামো আলাদা হয়। ফ্রিলান্সাররা ঘণ্টায় ৩০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত উপার্জন করতে পারেন এই কাজের মাধ্যমে। অন্য দিকে, পূর্ণ সময়ের অনুবাদকেরা সর্বাধিক ৫০,০০০ টাকা বা তার বেশিও আয় করতে পারেন।