প্রতীকী চিত্র।
কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় সোমবার খুলেছে সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজ। আর মঙ্গলবার থেকে শুরু হল ক্লাস। রুটিন মেনে এলএলএম-এর পঠনপাঠন শুরুর কথা থাকলেও হল না ক্লাস। এলেন না কোনও পড়ুয়া। তাই ক্লাস বাতিল করলেন কর্তৃপক্ষ।
উপাধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এলএলএম-এর পড়ুয়ারা না এলেও অন্য পড়ুয়ারা নিজেদের প্রজেক্ট ও ফর্ম ফিলাপ করেছেন। তবে কী কারণে পড়ুয়ারা আসেননি সেই প্রশ্নের ব্যাখ্যা তিনি এড়িয়ে যান।
তবে এলএলএম-এর স্টুডেন্ট না এলেও, চতুর্থ বর্ষের পড়ুয়ারা তাঁদের প্রজেক্ট সাবমিট করতে কলেজে এসেছিলেন। সাম্প্রতিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ দিন অনেক ছাত্রছাত্রীর সঙ্গে তাঁদের অভিভাবকেরা কলেজে আসেন।
বেলঘরিয়া থেকে শুক্লা চট্টোপাধ্যায় এ দিন ছেলে অনীককে সঙ্গে করে নিয়ে আসেন কলেজে। অনীক বলেন, ‘‘আমাদের কলেজে নিয়ম-কানুন ছিল। কিন্তু আইন কলেজ হলেও আইন মানা হত না। যা হয়েছে সেটা অত্যন্ত খারাপ। অবশ্যই নির্যাতিতার বিচার পাওয়া প্রয়োজন।’’
এই ঘটনা প্রসঙ্গে ওই ছাত্রের মা বলেন, ‘‘যে ঘটনা ঘটেছে তা জঘন্য একটি অপরাধ। এই ঘটনায় নিজেদের খুব খারাপ লাগছে এবং লজ্জা লাগছে। যে কলেজে আমার ছেলে পড়ে সেই কলেজেই এ রকম ঘটনা ঘটছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের আরও বেশি কড়া পদক্ষেপ করা উচিত।’’
এ দিন চতুর্থ বর্ষের মোট ১২৭ জন পড়ুয়া তাঁদের প্রজেক্ট জমা দেন কলেজে। এ ছাড়াও তিনজন প্রথম বর্ষের পড়ুয়া ফর্ম ফিলাপও করেন। এ দিন উপাধ্যক্ষ বলেন, ‘‘এটা একটা কলেজের জন্য লজ্জাজনক ঘটনা। ভয় পাওয়ার মতোই ঘটনা। আমার বাচ্চা থাকলেও ভয় লাগত। মানুষের চরিত্র মানুষ বুঝতে পারে না। আমরা চাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।’’ পাশাপাশি, তিনি ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তের নাম না করে বলেন, ‘‘ভিজে বেড়ালের মতো কলেজে এসে এ রকম জঘন্য কাজ করবে তা ভাবিনি।’’
ওই ঘটনার পর পড়ুয়াদের একাংশ অভিযোগ করেছিলেন যে, কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজে কিছু ঘটলে তা এড়িয়ে যেতেন। নয়না জানান, ‘‘এটা একদম ঠিক নয়। আমার আলাদা ফোন আছে। যে ফোনে পড়ুয়া সম্পর্কিত বিষয় আসত। র্যাগিং কমিটির থেকে সব মিটিং হয়েছে। যেহেতু পুরো বিষয়টা বিচারাধীন, তাই আর বলছি না। সব আদালতকে দেব।’’
অন্য দিকে, ধর্ষণের ঘটনার সময় তিনি কোথায় ছিলেন, এই প্রশ্নে ফের মুখ খুললেন উপাধ্যক্ষ। মঙ্গলবার ফের তিনি জানিয়েছেন, বুধবার তিনি সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে কলেজে আসেন এবং তৎক্ষণাৎ তিনি কলেজ থেকে বেরিয়ে যান। তারপর তিনি প্রথমে পরিচালন সমিতির সভাপতির কাছে, হাজরা ল কলেজের বৈঠকে ও সর্বশেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যান। দ্বিতীয় দিন বুধবার তিনি কলেজে আসেন এবং দুটো থেকে আড়াইটের মধ্যে তিনি কলেজ থেকে বেরিয়ে যান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় সিলেবাস কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে।
প্রসঙ্গত, বিতর্কের সূত্রপাত সোমবার কলেজের অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টার-এর একটি পৃষ্ঠা প্রকাশ্যে আসায়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, ২৫ জুন, বুধবার সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে কলেজে তার ‘ইন টাইম’ রয়েছে। ‘আউট টাইম’ও লিখেছেন ৯টা ৫০-এ। আর এখানেই প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি ধর্ষণের ঘটনার সময় ক্যাম্পাসেই ছিলেন নয়না? তিনি কি সব কিছু জানতে পেরেও কোনও পদক্ষেপ করেননি?