ক্ষুদ্র প্রদর্শনশালায় প্রত্নকীর্তি। ছবি: সংগৃহীত।
কোনটি ইতিহাস, কোনটি ইতিহাসের বিকৃতি— গত কয়েক বছরে তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে বিস্তর। সত্য আর সত্যের অপলাপ সম্পর্কে ছোটবেলা থেকে সম্মক ধারণা গড়ে না উঠলে চেতনার বিকাশে বড় ভুল থেকে যাবে, এমনই মনে করছে শিক্ষকসমাজ। তাই পড়ুয়াদের অন্তত আরও খানিকটা সচেতন করে তুলতে চাইছেন শিক্ষকেরা। সেই লক্ষ্যেই সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে নব বালিগঞ্জ মহাবিদ্যালয়। নিজেদের সাধ্যের মধ্যে একটি অতি ক্ষুদ্র প্রদর্শনশালা গড়ে তুলেছেন কর্তৃপক্ষ, যেখানে পাল ও সেন যুগে বঙ্গদেশ থেকে পাওয়া নানা প্রত্নকীর্তির কিয়দাংশ দেখা যেতে পারে।
কলেজ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ইতিহাস বিভাগ ও অধ্যক্ষার উদ্যোগে কলেজ প্রাঙ্গনে তৈরি করা হয়েছে এই স্থায়ী প্রদর্শনীর। নাম রাখা হয়েছে, ‘মুখর অতীত’। অধ্যক্ষা অয়ন্তিকা ঘোষের কথায়, “বই মুখস্থ করা বিদ্যার পাশাপাশি জীবন থেকে শিক্ষা নেওয়া খুব প্রয়োজন। বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাও সে কথাই বলছে। কিছু জিনিস হাতের কাছে থাকলে, বোধের বিকাশ আরও ভাল ভাবে হতে পারে। তাই এই পদক্ষেপ।” সাধারণত বিজ্ঞান বা ভূবিজ্ঞান সংক্রান্ত বিষয়েই হাতে কলমে কাজ করার সুযোগ থাকে সবচেয়ে বেশি। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাসের ক্ষেত্রে তা কম, অনেকাংশেই সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। জাদুঘরে ভ্রমণের সুযোগ সব সময় আসে না, তাই কলেজে কিছু মূর্তি বা নিদর্শন থাকলে পড়ুয়াদের ইতিহাস বিষয়ে আগ্রহ তৈরি হবে বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।
ইতিহাসের অধ্যাপিকা মধুপর্ণা চক্রবর্তী বলেন, “আমরা মূলত বাংলার পাল-সেন বংশ এবং গুপ্ত যুগের বিভিন্ন মূর্তিই রেখেছি এই মিনি মিউজিয়ামে। ক্লাসে যা পড়াই, সেগুলো তো পাঠ্য বইয়ে রয়েছে। কিন্তু কিছু ঐতিহাসিক নিদর্শন চোখের সামনে দেখতে পেলে যে কোনও বিষয় অনেক বেশি আত্মস্থ করতে সুবিধা হয়।”
খ্রিস্টিয় দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বঙ্গ দেশে বুদ্ধ মূর্তির বিবর্তন, বাংলার মেয়েদের শিল্পকলার প্রতি আগ্রহ, সরস্বতী মূর্তির মতো নানা প্রত্ন নিদর্শন রাখা হয়েছে ওই প্রদর্শনশালায়। এগুলি সবই আসলে প্রতিলিপি। সংগ্রহ করা হয়েছে ভারতীয় জাদুঘর থেকে, জানিয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে শুধু প্রত্ন নিদর্শন নয়, দেশের বিভিন্ন প্রদেশের আঞ্চলিক ইতিহাসের নিদর্শনও রাখা হয়েছে এখানে।