Teacher's Initiative to Grow Reading Habits of Children

বইয়ের সঙ্গে যোগ কমছে ছোটদের! অক্ষরের টান ফেরাতে স্কুলের কোণে গল্পের আসর বসান মঞ্জীর

ষাট ছুঁইছুঁই শিক্ষিকা নিজ উদ্যোগে পড়ুয়াদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন বই। নিয়মমাফিক পড়াশোনার পাশাপাশি তারা যাতে গল্পের বইয়ে মন দিতে পারে, সে জন্যই বইয়ের ঝুলি তিনি উপুড় করে দিয়ে আসেন স্কুলে স্কুলে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৭:১৫
Share:

মঞ্জির ঘোষ। নিজস্ব চিত্র।

গল্পের বই কত কাল পড়ে না ছোটরা। আর শুধু গল্পের বই-ই বা কেন, করোনা অতিমারির আঘাতে এক ধাক্কায় অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে দুই মলাট। বরং অনেক বেশ আকর্ষণীয় হাতের মোবাইলটি। শুধু বিনোদনই নয়, পড়াশোনাও হচ্ছে আজকাল সেখানেই।

Advertisement

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে বৌদ্ধিক এবং শারীরিক বিকাশ খানিকটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে। তাই নতুন করে ছোটদের বইমুখি করে তুলতে চাইছেন অনেকেই। তাঁদেরই একজন মঞ্জীর ঘোষ। ষাট ছুঁইছুঁই শিক্ষিকা নিজ উদ্যোগে পড়ুয়াদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন বই। নিয়মমাফিক পড়াশোনার পাশাপাশি তারা যাতে গল্পের বইয়ে মন দিতে পারে, সে জন্যই বইয়ের ঝুলি তিনি উপুড় করে দিয়ে আসেন স্কুলে স্কুলে।

মঞ্জীর এক সময় স্কুলশিক্ষিকা ছিলেন। কাজ করেছেন একাধিক নামী বেসরকারি স্কুলে। যুক্ত ছিলেন নানা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে নিজে উদ্যোগী হয়েছেন ছোটদের হাতে বই তুলে দিতে। শুরু করেছেন ‘বইকোণ’।

Advertisement

কী এই ‘বইকোণ’। মঞ্জীর বলেন, “ছোটরা বই পড়ে না। এ বিষয়টা আমাকে খুব কষ্ট দেয়। বেসরকারি স্কুলগুলিতে কিছু বইপত্র সাজিয়ে রাখা হয়। কিন্তু সরকারি স্কুলে শিশুদের উপযোগী গল্পের বইয়ের সংখ্যা বেশ কম। তাই আমি সাধ্য মতো চেষ্টা করি।”

শুধু কলকাতা নয়, মঞ্জীর বিভিন্ন জেলার সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল, হোম, স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল এবং প্রান্তিক পড়ুয়াদের জন্য তৈরি বেসরকারি স্কুলেও বই হাতে পৌঁছে যান। কলকাতার কিছু বসতি এলাকার স্কুলেও তাঁর যাতায়াত।

২০২০ থেকেই এই ভাবনা মঞ্জীরের। প্রথম ‘বইকোণ’ তৈরি করেছিলেন ২০২৩ সালে। কখনও একা, আবার কখনও সঙ্গী নিয়ে মজার গল্পের ঝুলি হাতে পৌঁছে যান তিনি। ক্লাসঘরের এককোণে প্লাস্টিকের কয়েকটি তাকে সাজিয়ে তৈরি করেন ‘বইকোণ’। সেখানে রাখা থাকে পাতলা, রঙিন, সহজ ভাষায় লেখা হরেক রকমের গল্পের বই। ইংরেজি ও বাংলা— দুই ভাষাতেই। ওই দিন কিছু গল্প পড়ে শোনানো হয় পডুয়াদের। দিন শেষে ফিরে যাওয়ার আগে ক্লাসের একটি শিশুকে বেছে নেওয়া হয়। যার দায়িত্ব একটি খাতা লেখা। কে কোন বই নিচ্ছে, কখন ফেরত দিচ্ছে, ক’টি বই পড়ছে— তার হিসেবনিকেশ লেখা থাকে ওই খাতায়।

'বইকোণ'-এ বই নিয়ে ব্যস্ত শিশুরা। নিজস্ব চিত্র।

তপসিয়া অঞ্চলের একটি স্কুলের শিক্ষিকা লিপিকা রায় বলেন, “আমরা ‘বইকোণ’ থেকে বই নিয়ে ওদের গল্প পড়ে শোনাই। ওরা নিজেরাও বেশ আগ্রহ ভরে বইগুলো পড়ে। অনেক সময় বাড়িতেও নিয়ে যায়।” ওই স্কুলের পড়ুয়ারা এক সময় বাংলা বা ইংরেজি পড়তে পারত না। সে সমস্যা কিছুটা কমেছে বলে দাবি লিপিকার। সে স্কুলেরই খুদে পড়ুয়া ফতেমা খাতুনও জোর গলায় বলে, “আমার খুব ভাল লাগে গল্প পড়তে। এখন সুকুমার রায়ের ‘হিংসুটি’ পড়ছি।”

মঞ্জীর মনে করেন, এখন আর ঠাকুরমা-দিদিমারা গল্পের বই পড়ে শোনান না। কর্মরত মায়েদের হাতেও সময় কম। তিনি বলেন, “বিশেষজ্ঞদের মতে, গল্পের বই পড়লে কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে, ভাষার উপর দখল তৈরি হয় শিশুদের। ফলে মানসিক বিকাশেও সহায়ক গল্পের বই। বাংলা এবং ইংরেজি দুই ভাষাতেই সহজ বইগুলো একটু নেড়েচেড়ে দেখে ওরা। আমি ওদের সাহায্য করার চেষ্টা করছি।”

মঞ্জীর জানান, তিনি যে সব স্কুলে পড়িয়েছিলেন সেখানকার প্রাক্তনীরাও বই কেনায় সাহায্য করেন। সাহায্য করেন তাঁর বন্ধুরাও। কলকাতার বাইরে হাওড়া, হুগলি, পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে তিনি পৌঁছেছেন ‘বইকোণ’ নিয়ে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement