হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক হওয়ার খুঁটিনাটি। ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
‘ডাক্তার জেঠু’র কাঠের বাক্সে সাজানো সরু সরু শিশি। কাগজের পুরিয়ায় সাদা পাউডারে মাখামাখি সাদা বড়ি ওষুধ মোটেও তেতো নয়। জ্বর জ্বর ভাব অথবা, পেট ব্যথা হলে নিমেষে সেরে যায়।
এখন যাঁদের বয়স ত্রিশের উপর, প্রায় সকলের জীবনেই এমন স্মৃতি রয়েছে। পাড়ার হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক আসলে ছিলেন পরিবারেরই একজন। গত কয়েক দশকে সারা বিশ্বে ক্রমশ উন্নত হয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অপেক্ষায় রয়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্ভর চিকিৎসার। কিন্তু এর মধ্যেও হারিয়ে যায়নি হোমিয়োপ্যাথি। অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতিতে বিশ্বাসী মানুষেরা দাবি করেন, আদতে হোমিয়োপ্যাথিতে রোগ সারে না। কিন্তু তবু, হোমিয়োপ্যাথির উপর থেকে ভরসা একেবারে ওঠেনি। অনেকেই এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ থাকেন।
তাই অ্যালোপ্যাথি পদ্ধতিতে চিকিৎসাবিদ্যা পড়ার পাশাপাশি হোমিয়োপ্যাথি নিয়ে পড়ার আগ্রহও রয়েছে। অনেক পড়ুয়াই স্কুলের পাঠ চুকিয়ে হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্যে পরবর্তী পড়াশোনা শুরু করেন।
হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসক হওয়ার জন্য কী পড়তে হয়?
আয়ুষ নিট ইউজি-র লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় প্রথমে। এরপর কাউন্সেলিং-এর জন্য আবেদন করতে হয়। ওয়েস্ট বেঙ্গল মেন কম্পিউটার কাউন্সেলিং (ডব্লিউবিএমসিসি)-এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইটে গিয়ে নিজের নাম নথিভুক্ত করে আবেদন করা যায়। পড়ুয়াদের মেধার ভিত্তিতে কাউন্সেলিং হয়। কাউন্সেলিং-এ নির্বাচিত হলে মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের রাজ্যের বিএইচএমএস কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ থাকে। মূলত সব কলেজেই ইন্টার্নশিপ-সহ ৫ থেকে সাড়ে ৫ বছরের বিএইচএমএস কোর্স করানো হয়।
কী যোগ্যতা প্রয়োজন
১। যে কোনও স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বর-সহ দ্বাদশ উত্তীর্ণ হতে হয়। তবে শিক্ষার্থীদের দ্বাদশ শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন এবং জীববিজ্ঞান বিষয়গুলি রাখা বাঞ্ছনীয়। সংরক্ষিত বিভাগের শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ নম্বর থাকলেই হয়।
২। বয়স হতে হয় ১৭ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। সংরক্ষিত বিভাগের পড়ুয়ারদের জন্য বয়সের ছাড় রয়েছে, তাঁদের ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত সুযোগ থাকে।
৩। রাজ্যে বিএইচএমএস কলেজে ভর্তির জন্য দ্বাদশ শ্রেণির পর পশ্চিমবঙ্গ আয়ুষ নিট ইউজি প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে হয়। এই পরীক্ষায় সাধারণ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশ ও সংরক্ষিত বিভাগের শিক্ষার্থীদের ৪০ শতাংশ নম্বরে পাশ করতে হয়।
পশ্চিমবঙ্গের কোন কোন প্রতিষ্ঠানে বিএইচএমএস পড়ানো হয়?
রাজ্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে—
১) ক্যালকাটা হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
২) ডিন এন দে হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
৩) মহেশ ভট্টাচার্য হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
৪) মেদিনীপুর হোমিওপ্যাথিক মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।
কেন্দ্র সরকারি প্রতিষ্ঠানে মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ইন্সটিউট অফ হোমিওপ্যাথি।
এ ছাড়াও বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে হোমিয়োপ্যাথি চিকিৎসাবিদ্যা পড়ানো হয়।
পেশাগত সুযোগ কী কী?
বিএইচএমএস পাশ করার পর চাকরির অনেকগুলি দিক রয়েছে। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক হিসাবে গবেষণা বা রোগী দেখা শুরু করতে পারেন। ব্যক্তিগত চেম্বারও করার অধিকারও পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ফার্মাসিস্টের কাজও করতে যেতে পারে। আবার শিক্ষকতার পেশাও বেছে নেওয়া যায়।