West Bengal Assembly Election 2021

Bengal Polls 2021: উন্নয়ন-প্রশ্নে ভোট চাওয়া পাণ্ডবেশ্বরে

তৃণমূলের কটাক্ষ, জিতেন্দ্রবাবুর কথিত উন্নয়ন যদি কিছু হয়ে থাকে, তবে তা তিনি তৃণমূলে থাকাকালীন হয়েছে।

Advertisement

নীলোৎপল রায়চৌধুরী

পাণ্ডবেশ্বর শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪০
Share:

প্রচারে পাণ্ডবেশ্বরের বিজেপি প্রার্থী জিতেন্দ্র তিওয়ারি। ছবি: ওমপ্রকাশ সিংহ।

শঙ্খ ঘোষ একদা লিখেছিলেন, ‘রাস্তা জুড়ে খড়্গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।’— ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটের আবহে এই কবিতার বিরুদ্ধে তৃণমূলের নেতা, কর্মীদের একাংশ সরব হয়েছিলেন। পাণ্ডবেশ্বর, এই কেন্দ্রেও ‘উন্নয়ন’ আছে। কিন্তু তা ভিন্ন আঙ্গিকে: তা রাস্তা, আলো, পার্ক তৈরির উন্নয়ন। আর সে উন্নয়নের খতিয়ান সামনে রেখেই জনতার দরবারে ভোট চাইছেন গত বার তৃণমূলের টিকিটে জেতা ও বর্তমানে এখানের বিজেপি প্রার্থী জিতেন্দ্র তিওয়ারি! তা দেখে তৃণমূলের কটাক্ষ, জিতেন্দ্রবাবুর কথিত উন্নয়ন যদি কিছু হয়ে থাকে, তবে তা তিনি তৃণমূলে থাকাকালীন হয়েছে। অর্থাৎ, উন্নয়নের কৃতিত্ব রাজ্য সরকারের। তবে জিতেন্দ্রবাবুর দাবি, এই উন্নয়ন দল বা সরকার করেনি। তা হয়েছে ‘ব্যক্তি জিতেন্দ্রর’ নেতৃত্বে!

Advertisement

সম্প্রতি পাণ্ডবেশ্বরে এক পথসভায় জিতেন্দ্র বললেন, ‘‘এখানে চার কোটি টাকায় এলইডি আলো, প্রায় একশো কোটি টাকায় রাস্তা তৈরি হয়েছে। গাইঘাটা থেকে হরিপুর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি দশ কোটি টাকা খরচ করে সংস্কার কাজ চলছে। এই কাজও আমার নেতৃত্বেই শুরু হয়েছে।’’ পথসভায় এ কথা বলেই ঢাকিদের সঙ্গে নিয়ে জিতেন্দ্রবাবুর প্রচার মিছিল এগিয়ে চলে পাণ্ডবেশ্বরের
১২টি পঞ্চায়েতে।

ঘটনাস্থল, পাণ্ডবেশ্বর ব্লকের কেন্দ্রা ও বৈদ্যনাথপুর ডিভিসিপাড়া, মাধাইগঞ্জ। কোথাও কোলে শিশুকে নিয়ে বাবা-মায়েরা, কোথাও কারখানা থেকে ফেরা শ্রমিক, দিনমজুরের দল ভিড় জমান জিতেন্দ্রবাবুর চার পাশে। সকলের কথাতেই ঘুরে-ফিরে উন্নয়ন। কেউ বললেন জল সমস্যার কথা। মাধাইগঞ্জে কয়েকজন জানালেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র প্রথম কিস্তির পরে টাকা মেলেনি। গৌরবাজারে কয়েকজন পুরোহিত জানালেন, তাঁরা বিরোধী দল করায় আবেদন করেও পুরোহিত ভাতা মেলেনি।

Advertisement

বালিজুড়ি গ্রামে আবার সামগ্রিক ‘সামাজিক উন্নয়নের’ দাবি ভেসে এল জনতার থেকে। এখানে অবশ্য জিতেন্দ্রবাবু ফের খোলেন তাঁর উন্নয়নের খাতা। বলেন, ‘‘সাংস্কৃতিক মঞ্চ, খেলার মাঠ ঘিরে দেওয়ার মতো কাজ করেছি এখানে। আরও উন্নয়ন হবে...।’’ সরপিতে গিয়ে জানান, গ্রামে পার্ক তৈরি করে ‘দিয়েছেন’। গোবিন্দপুর গ্রামে গিয়ে সরাসরিই জিতেন্দ্রবাবুর আহ্বান, ‘‘আমার কাজের, উন্নয়নের গতি দেখেই পদ্মফুলে ভোট দিন।’’

এই আবহে, তৃণমূল নেতৃত্বের দু’টি প্রশ্ন। প্রথমত: জিতেন্দ্রবাবু বিধায়ক হিসেবে ‘উন্নয়ন হয়েছে’ বলে দাবি করছেন। তা হলে কেন ফের নানা জায়গা থেকে বেহাল পরিষেবা ও অনুন্নয়নের অভিযোগ শুনতে হচ্ছে তাঁকে? দ্বিতীয়ত: তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসনের বক্তব্য, ‘‘জিতেন্দ্রবাবু উন্নয়নের কথা বলছেন। উনি বিধায়ক হিসেবে ব্যর্থ। এর পরেও যদি ধরা যায়, উন্নয়ন হয়েছে, তা তো উনি তৃণমূলের বিধায়ক থাকাকালীন হয়েছে। আর তাই সেই উন্নয়ন আদতে রাজ্য সরকারেরই সাফল্য।’’ এ প্রসঙ্গে জিতেন্দ্রবাবুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘এখানে যা কাজ হয়েছে, তা আমার নেতৃত্বে। দল বা সরকার বড় বিষয় ছিল না।’’ তাঁর আরও সংযোজন: ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি মেনে পাণ্ডবেশ্বরে দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রার্থী করা হয়েছিল। তাই কোথাও-কোথাও কাজে খামতি রয়েছে।’’ অভিযোগ মানেনি তৃণমূল।

এমন চাপান-উতোরের মাঝে নিজের ও দলের সংগঠনকে ঝালিয়ে নেন পোড়খাওয়া রাজনীতিক। গোবিন্দপুর গ্রামে জটলা দেখে জিতেন্দ্রর জিজ্ঞাসা, ‘‘সঙ্গে আছেন তো?’’ সম্মতি পেয়েই জিতেন্দ্রর আহ্বান, ‘‘বলুন, জয় শ্রীরাম!’’ সঙ্গে জায়গায়-জায়গায় করছেন তৃণমূলের বিরুদ্ধে ‘নিবার্চনী সন্ত্রাসের আবহ’ তৈরির অভিযোগও। জিতেন্দ্রবাবুর তোপ, ‘‘বীরভূম থেকে দুষ্কৃতীদের এনে এখানে জড়ো করছেন তৃণমূল প্রার্থী নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।’’ নরেন্দ্রনাথবাবুর অবশ্য প্রতিক্রিয়া, ‘‘পায়ের তলায় মাটি নেই বুঝে ভুল বকছেন বিজেপি প্রার্থী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন