‘গণশত্রু’ নিয়ে কী ইঙ্গিত পাওলি দামের? ছবি: ফেসবুক।
সিরিজ়ের নাম ঘোষণা হতেই চমকেছিলেন অনেকে। সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘গণশত্রু’র নব্য সংস্করণ নাকি? বুধবার প্রকাশ্যে, পাঁচ পরিচালক পাঁচটি সাড়া জাগানো অপরাধীর জীবন নিয়ে সিরিজ় বানিয়েছেন। বাংলা জি-ফাইভ ওয়েব প্ল্যাটফর্মের জন্য। সিরিজ়ে ১৮৮০ সালের প্রথম মহিলা ‘সিরিয়াল কিলার’ ত্রৈলোক্যতারিণী দেবীর ভূমিকায় পাওলি দাম।
এক যৌনকর্মী থেকে ভয়ঙ্কর অপরাধী হয়ে ওঠার গল্প দিয়ে পরিচালনার দুনিয়ায় পা রাখলেন সিনেমাটোগ্রাফার মধুরা পালিত। হঠাৎ ‘ত্রৈলোক্যতারিণী’ কেন? এক অসহায় নারীর মনস্তত্ত্ব, অপরাধপ্রবণ মানসিকতা, ক্ষমতার লোভ— আর এক নারীই বেশি ভাল বুঝতে পারবেন, তাই কি? মধুরার কথায়, “পুরুষ অপরাধীর কথা রোজ খবরের কাগজে বেরোচ্ছে। নারীর কথা ক’জন বলে?” তিনি গবেষণা করতে গিয়ে দেখেছেন, ত্রৈলোক্যতারিণী একই অঙ্গে ব্যক্তিত্বময়ী এবং রহস্যময়ী। সব রহস্য জমাট বাঁধত তাঁর দুই চোখে। এই বর্ণনাই তাঁকে মনে পড়িয়েছে পাওলির কথা।
সিরিজ়ের প্রচার ঝলক প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসে মধুরা আনন্দবাজার ডট কমকে জানিয়েছেন সে কথা। সিরিজ়ে বাকি চারটি গল্প বৌবাজার বোমা বিস্ফোরণ মামলার রশিদ খান, সজল বারুই, হুব্বা শ্যামল আর চেনম্যানকে নিয়ে। এই চার অপরাধীকে মুঠোফোনে পৌঁছে দিচ্ছেন যথাক্রমে পরিচালক সায়ন দাশগুপ্ত, শমীক রায়চৌধুরী, শ্রীমন্ত রায়চৌধুরী ও অভিরূপ ঘোষ। চার অপরাধীর ভূমিকায় দেখা যাবে যথাক্রমে সুব্রত দত্ত, আয়ুষ দাস, রুদ্রনীল ঘোষ এবং দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়কে।
অরিত্র সেনের ‘জুলি’ ছবিতেও এক যৌনকর্মীর রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠার গল্প। সেখানেও সেই যৌনকর্মীর ভূমিকায় দেখা যাবে পাওলিকে। কিছু দিন আগে শুটিং শেষ হয়েছে। দর্শক ‘জুলি’ আর ‘ত্রৈলোক্যতারিণী’কে আলাদা করবেন কী করে?
প্রশ্ন ছিল পাওলির কাছে। তাঁর কথায়, “দুটো চরিত্রই আলাদা। মিল বলতে উভয়েই যৌনকর্মী। প্রথম চরিত্রটি কাল্পনিক। দ্বিতীয়টি বাস্তব।” নায়িকার অনেক দিন ধরেই বিস্তর পড়াশোনা বাংলার প্রথম ‘সিরিয়াল কিলার’কে নিয়ে। ১৮৮০-র সমাজের সেই ‘ত্রাস’-এর জীবনের প্রামাণ্য তথ্য আছে। ‘জুলি’র থেকে স্বভাব, সাজ, আচরণ— সবেতেই তাই ফারাক। তার উপর ত্রৈলোক্যতারিণীর অপরাধী হয়ে ওঠার কারণ জানানো হবে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে।
‘গণশত্রু’ সিরিজ়ের ট্রেলারমুক্তি অনুষ্ঠানে উপর থেকে যথাক্রমে সুব্রত দত্ত, আয়ুষ দাস, দেবপ্রিয় মুখোপাধ্যায়, পাওলি দাম, রুদ্রনীল ঘোষ। নিজস্ব ছবি।
এতে কোনও ভাবে অপরাধী ‘গৌরবান্বিত’ হয়ে উঠবে না? “কোনও ভাবেই সেটা হবে না। কারণ, প্রত্যেকটি দৃশ্য ভীষণ চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আমরা শুটিং করেছি”, বক্তব্য পাওলির। তার পরেই হাসতে হাসতে দাবি করেছেন, প্রত্যেক নারীর মধ্যে কিছু অনুভূতি থাকে। লোভ, হিংসা, খ্যাতি, ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন সব নারীর। কে, কোন অনুভূতিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন সেটা তাঁর উপরে নির্ভর করছে। ২০২৫-এ এসে এ বিষয় নিয়ে কারও দ্বিধা নেই।
যে পাঁচ অপরাধীর জীবন উঠে আসতে চলেছে তারা প্রত্যেকে কোনও না কোনও ভাবে সাধারণ মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারা তাই সমাজের চোখে ‘গণশত্রু।’ ২০২৫-এর সমাজ কাদের ‘গণশত্রু’ হিসাবে চিহ্নিত করবে? প্রশ্ন শুনে দ্বিধা পাওলির চোখে। পলকের নীরবতা। তার পরেই হাসতে হাসতে পরিবেশ হাল্কা করেছেন পাওলি। বলেছেন, “খুব শক্ত প্রশ্ন। উত্তর দেওয়া আরও কঠিন!” তাঁর জবাব, “সাধারণ মানুষ এখন যথেষ্ট বুদ্ধিমান। তাঁরা হয়তো জানেন বা বোঝেন সবই। উত্তর দিচ্ছেন না।”