Koel Mallick's Lakshmi Puja 2025

একটা করে লক্ষ্মীর পা আঁকছি আর বার বার পিছন ফিরে দেখছি, দাদারা কোথায়? আলপনা মুছে দিতে আসছে না তো!

লক্ষ্মীপুজো মানেই হাজার রঙিন স্মৃতি। এখনও বাড়ির আনাচেকানাচে সেই গল্প যেন জমা রয়েছে। শুধু ফিরে দেখার অপেক্ষা।

Advertisement

কোয়েল মল্লিক

শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০২৫ ১৪:৩৯
Share:

দেবী আরাধনায় ব্যস্ত কোয়েল মল্লিক। ছবি: ফেসবুক।

আমি ‘লক্ষ্মীমন্ত’? বাড়ির লোকেদের একবার জিজ্ঞেস করে দেখুন! দুষ্টুমি নেহাত কম করতাম না! বনেদি বাড়ির যৌথ পরিবার। কাকা-জ্যেঠা, পিসি মিলিয়ে অনেক সদস্য। তাঁদের ছেলেপুলের সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। দুষ্টুমি করব না!

Advertisement

লক্ষ্মীপুজো বললেই মনে পড়ে মা-কাকিমাদের আঁকা লক্ষ্মীর পা। ওটাই মল্লিকবাড়িতে আলপনার মতো করে আঁকা হয়। খুব অবাক হয়ে দেখতাম, আঙুলের টানে দেবীর পা নিখুঁত ভাবে ফুটে উঠত। বাড়ির কোথাও লাল মেঝে, কোথাও শ্বেতপাথরের। লাল মেঝেয় কী সুন্দর যে ছোট্ট ছোট্ট সাদা পা ফুটে উঠত! একটু বড় হওয়ার পর সেই দায়িত্ব এসে বর্তাল আমাদের কাঁধে। আমরা বোনেরা মিলে সারা বাড়িতে আলপনা দিতাম। অনেক বড় বাড়ি। তাতে অনেক সিঁড়ি। তাই প্রতিযোগিতার কোনও সুযোগ পেতাম না। ভাগাভাগি করে সকলে আলপনা দেওয়ার সুযোগ পেত।

কিন্তু দাদাদের দুষ্টুমি। আমরা আলপনা আঁকছি। ওরা কানের কাছে মজা করে ফিসফিসিয়ে বলে যাচ্ছে, “তোরা আঁক। এক্ষুণি পা দিয়ে দেব!” ব্যস, আলপনা দিতে দিতে মায়েদের উদ্দেশে চিৎকার, “ও মা, দেখো না। দাদাভাইরা কী বলছে।” একটা করে লক্ষ্মীর পা আঁকতাম আর পিছন ফিরে দেখতাম, দাদারা কোথায়? আলপনা মুছে দিতে আসছে না তো!

Advertisement

দুর্গাপুজোয় কত ঢাকঢোলের শব্দ। লক্ষ্মীপুজো নীরবে। মল্লিকবাড়ির লক্ষ্মীপুজোর এটা আর একটি বৈশিষ্ট্য। শব্দ বলতে মা-কাকিমাদের লক্ষ্মীর ব্রতকথা পাঠের মৃদু গুঞ্জন। এ বার আমাদের দুষ্টুমির পালা। মা-কাকিমারা তো ভীষণ মনোযোগ দিয়ে ব্রতকথা শুনছে। ছোটদের কি এ সবে মন থাকে? আমরা ওখানে বসেই গল্পে মেতেছি। এ বার সবাই মিলে গল্প করলে যা হয়। ফিসফিসানি ক্রমশ গুঞ্জনে পরিণত। তার পর সেটা আরও জোরে! পাঠে ব্যাঘাত ঘটলেই টনক নড়ত বাড়ির বড়দের। কষে ধমক সঙ্গে সঙ্গে।

এ ভাবে কি আর ছোটদের কলকলানি রোখা যায়? ছেলেবেলা পেরিয়ে আমরা এখন সবাই বড়। সকলের সংসার হয়েছে। সেখানে শ্বশুরবাড়ির নিয়ম মেনে পুজো করি, আলপনা আঁকি। আলপনা মুছে দেওয়ার ভয় দেখাতে দাদারা সেখানে আসে না! সব মিটিয়ে যখন মল্লিকবাড়িতে পা রাখি, তখন হয়তো সন্ধ্যা নেমেছে। বাড়ির সিঁড়ির কোণে জমে থাকা অন্ধকারে ছেলেবেলা হাতছানি দিয়ে ডাকে। কোমরে আঁচল গুঁজে ফের বসে যাই দেবীর পা আঁকতে। তবেই না মা লক্ষ্মী ঘরে এসে বসবেন!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement