নাট্যোৎসবের আয়োজক রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
শীতের শহরে আরও একটি নাট্যোৎসব। তথাকথিত কোনও নাট্যদলের নয়। এমনকি, ঘোষিত ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলও এই উৎসবের আয়োজক নয়। এই উদ্যোগ একক ভাবে অভিনেত্রী ও রাজনীতিক রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের।
আনন্দবাজার ডট কম-কে রূপা জানিয়েছেন, সামর্থ্য কম। তাই বড় কোনও জায়গায় নয়, ভারতীয় জাদুঘরের আশুতোষ শতবার্ষিকী সভাগৃহে বুধবার, ৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে এই ‘বঙ্গীয় নাট্য উৎসব ২০২৫’। আয়োজক রূপার নিজস্ব সংস্থা ‘রূপান্তর নাট্যগোষ্ঠী’। ভারতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ সহ-আয়োজক। উৎসব চলবে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত। চার দিনের এই উৎসবে শহর ও শহরতলির মোট ১০টি নাট্যদল যোগ দিচ্ছে বলে রূপা জানালেন।
শহরে শীতকাল জুড়ে নানা শিল্প-সাংস্কৃতিক উৎসব ও অনুষ্ঠান হয়েই থাকে। যেমন, নান্দীকার-সহ একাধিক নাট্যসংস্থার উদ্যোগে নাট্যোৎসব হয় প্রতি বছর। পাশাপাশি, গত তিন দশক ধরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নন্দনে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ‘কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’। তবে রূপার দাবি, তাঁর এই উদ্যোগে কোনও সংগঠনের হাত নেই। তাঁর বক্তব্য, বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে ইদানীং যেন রাজনীতির বাড়াবাড়ি। যার জেরে অনেকেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণে সমান সুযোগ পান না। নিজের প্রতিভা সকলের সামনে তুলে ধরতে পারেন না। তাই তিনি এমন একটি পরিসর তৈরি করতে চান, যেখানে রাজনীতির হস্তক্ষেপ থাকবে না। তাই তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে এমন একটি জায়গা তৈরি করতে চান, যেখানে রাজনৈতিক রং বা নীতির কোনও ঝামেলা নেই।
রূপা যতই বলুন, তাঁর এই নাট্যোৎসবের উদ্যোগে রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন অনেকেই! প্রশ্ন উঠেছে, শাসকদলের মতো এ বার কি বিজেপিও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল তৈরি করতে চাইছে এ রাজ্যে? তারই মুখ হিসাবে কি এগিয়ে আসছেন রূপা গঙ্গোপাধ্যায়? এ সব প্রশ্ন কার্যত নস্যাৎ করে দিয়ে অভিনেত্রীর অবশ্য দাবি, তাঁর অনুষ্ঠানলিপি পড়লেই সকলে বুঝতে পারবেন, এটি সম্পূর্ণ ভাবে অরাজনৈতিক।
প্রসঙ্গত, এই নাট্যোৎসবে যোগ দিতে দেখা যাবে আরও এক বিজেপি নেত্রী পাপিয়া অধিকারীকে, তাঁর নাট্যদল অভিনেতৃ সঙ্ঘের নাটক নিয়ে। ১০টি উৎসবের নাটকের মধ্যে রয়েছে পাপিয়ার দলের নাটক ‘ঢপের চপ’, সর্বভারতীয় সাংস্কৃতিক সংস্থা সংস্কার ভারতীর রাজ্য শাখার ‘কেন চেয়ে আছ গো মা’, কলকাতা নাট্য সেনার ‘প্রীতিলতা’, মৃচ্ছকটিকের ‘আগুনের চিঠি’। এ ছাড়াও থাকছে গুণীজন সংবর্ধনা।
দীর্ঘ দিন ধরে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত রূপা। যদিও মাঝে রাজনীতির কারণে বিনোদনদুনিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। এত বছর পরে কেন এই ‘রূপান্তর নাট্যগোষ্ঠী’ গড়া ও উৎসবের প্রয়োজন অনুভব করলেন? প্রশ্ন করেছিল আনন্দবাজার ডট কম। রূপার যুক্তি, “এরকম কাজ অনেক দিন ধরেই করার স্বপ্ন দেখতাম। করে উঠতে পারছিলাম না। সেটা এত বছর পরে সম্ভব হল।”
এই প্রথম তিনি মঞ্চ বা ক্যামেরার মুখোমুখি নন, তিনি আয়োজক। ফলে, একাধারে ভয়, উত্তেজনা ও আনন্দের অনুভূতি হচ্ছে তাঁর। অভিনেত্রী-রাজনীতিবিদের কথায়, “বদল আমার খুব প্রিয়। সমসাময়িক থাকতে এই বদলের প্রয়োজন। রূপান্তর শব্দটি তারই শুদ্ধরূপ।” মৃদু হেসে এ-ও যোগ করেছেন, রূপা আছেন বলেও ‘রূপান্তর’ শব্দটি বেছে নিয়েছেন।
নাট্যোৎসব প্রসঙ্গে রূপা আরও বলেছেন, “আগামী দিনে এই উৎসব আরও বড় করে হবে। তখন সেই উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনেরও ভাবনা রয়েছে।”