বিক্রম ঘোষের ‘মহামন্ত্র’ অস্কার দৌড়ে। ছবি: সংগৃহীত।
প্রায় ৪০ বছরের সঙ্গীতজীবন। এখনও পর্যন্ত বাবা শঙ্কর ঘোষের একটি কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন, তাঁর পাঞ্জাবির দাম যেন বাজনার থেকে বেশি না হয়। সমাজমাধ্যমে জনপ্রিয়তার তোয়াক্কা করেন না, বরং নিজের কাজের ছাপ রেখে যেতে চান। এই নিয়ে তৃতীয় বার অস্কারের দৌড়ে বিক্রম ঘোষের ছবি। ইংরেজি ‘মহামন্ত্র: দ্য গ্রেট চ্যান্ট’ ছবি রয়েছে প্রতিযোগিতায়। ছবির পরিচালক গিরীশ মালিক।
তাঁর ছবি যে অস্কারের দৌড়ে রয়েছে, তা নিয়ে খুব বেশি জাহির করার পক্ষপাতী নন বিক্রম। তাঁর কথায়, ‘‘লোকে চার আনার কাজ করে ফুলিয়েফাঁপিয়ে ১৫০ টাকার দেখায়। আমার পদ্ধতি ঠিক উল্টো।’’ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক বাছাইয়ের ধাপ পেরিয়েছে ছবিটি। এর পরেও বাছাই প্রক্রিয়া চলবে। তার পরে চূড়ান্ত হবে মনোনয়নের তালিকা।
এর আগে, দু’বারই ‘ফিচার’ বিভাগের দৌড়ে ছিল তাঁর ছবি। এর আগে প্রতিযোগিতায় ছিল ‘জল’ ও ‘ব্যান্ড অফ মহারাজা’ ছবি দু’টি। এ বছর ‘ডকু ফিচার’ বিভাগে রয়েছে ‘মহামন্ত্র’ ছবিটি। বিক্রম বলেন, ‘‘গত দু’বারই আশাবাদী ছিলাম। তবে প্রতিযোগিতা বেশ কঠিন ছিল। ছিটকে গিয়েছি, তবে তাতে আক্ষেপ নেই। ‘জল’-এর সঙ্গে মনোনয়নে ছিল ‘ইন্টারস্টেলার’। অত দূর গিয়েছি, সেটাও কম নয়। এ বছর অবশ্য বিভাগটা আলাদা। প্রতিযোগিতা সেখানেও আছে, তবে আশাটা গত বারের তুলনায় বেশি।’’
আন্তর্জাতিক মঞ্চে সমাদৃত হলেও বাংলার নিরিখে বাছা কাজ সুরকার-সঙ্গীতশিল্পীর হাতে। যদিও সম্প্রতি ‘ডিয়ার মা’ ও ‘দেবী চৌধুরানী’ ছবির সুর করেছেন। বাংলা ভাষার ছবিতে তুলনায় কম কাজ করছেন কেন? কাজের বিষয়ে তিনি খুঁতখুঁতে। সুরকার জীবনের শুরুর দিকে বন্ধুবান্ধবের হয়ে বেশ কিছু কাজ করেছেন, যেগুলোর জন্য পরে আক্ষেপ করেছেন। বিক্রমের কথায়, ‘‘প্রথমত, হিন্দি হোক বা বাংলা, নাচগানের ছবিতে কাজ করতে পারব না। বিক্রম ঘোষকে কোনও ছবিতে নিলে, তাঁকে বিক্রম ঘোষ হয়ে উঠতে দিতে হবে। আর আমি সব সময়ে চিত্রনাট্যের উপর জোর দিই। সেই কারণে ‘ডিয়ার মা’ ও ‘দেবী চৌধুরানি’র কাজ করা। একটা সুর করার জন্য যথেষ্ট সময় দিতে হবে। আর প্রকৃত অর্থে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা প্রচার করেন না।’’ যদিও সুরকার আশাবাদী বাংলা সিনেমা নিয়ে। এই ভাষার সিনেমার মধ্যে ষথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে অস্কারের মঞ্চে পৌঁছোনোর, মত শিল্পীর।
বিক্রম আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচিতি পেয়েছেন, গ্র্যামির মনোনয়ন পেয়েছেন, তবু কলকাতা ছেড়ে যাননি। কেন? বিক্রমের কথায়, ‘‘সঞ্জয় লীলা ভন্সালী তিনটি ছবির প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ফিরিয়ে দিই। প্রথমত, এখানকার সব কাজ ছেড়ে মুম্বইয়ে থাকতে হবে। আর আমি কলকাতায় নিজস্ব ধরনের কাজ করি। তা ছাড়া, আমি খানিকটা ঘরকুনো। মুম্বইয়ের একটা নিজস্ব দৌড় আছে, সেটার মধ্যে জড়াতে চাইনি। দ্বিতীয়ত, আমি কলকাতায় যেন ‘শ্রীলঙ্কার রাজা’র হালে থাকি। আমি ভাল গানবাজনা করে যেতে চাই। জীবনে আমি কী করতে চাই, সেটা নিয়ে খুব পরিষ্কার ছিলাম প্রথম থেকে। বাংলা সিনেমা করে তেমন টাকাপয়সা পাওয়া যায় না, তা-ও করি। কারণ এটা ভালবাসা।’’ বিক্রম এ-ও জানান, সারাজীবন বিভিন্ন ধরনের কাজ করেছেন তিনি। ফলে কখনওই নিজেকে শুধু সিনেমার গণ্ডিতে আটকে রাখতে চাননি।