Mukesh Chhabra

টলিউডে কাজের পরিসর কমছে! বাঙালি অভিনেতারা মুম্বইমুখী? প্রশ্ন তুলছে মুকেশ ছাবড়ার কর্মশালা

সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে খুঁজে বের করেছিলেন তিনি। বলিউডে অসংখ্য নাম, যাঁদের তারকা বানিয়েছেন। এ বার নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীর খোঁজে মুকেশ আসছেন কলকাতায়।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২৫ ১৫:২৩
Share:

মুকেশ ছাবড়ার কর্মশালা নিয়ে কী ভাবছে টলিপাড়া? গ্রাফিক-আনন্দবাজার ডট কম।

টলিপাড়া ছেড়ে মুম্বই পাড়ি দেওয়ার ঝোঁক বাড়ছে বাঙালি অভিনেতাদের মধ্যে! গত কয়েক বছরে শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতাদের দেখা গিয়েছে একের পর এক বলিউডের ছবি বা ওয়েব সিরিজ়ে। এ পথে পা বাড়িয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, জিৎ-ও। এমনকি ছোট পর্দার বহু অভিনেতা-অভিনেত্রীও হিন্দি টেলিভিশনে কাজের সুযোগ খুঁজছেন, মুম্বই পাড়ি দিচ্ছেন ভাগ্যান্বেষণে।

Advertisement

বলিউডে এক সময় নায়ক-নায়িকা জনপ্রিয়তার শেষ কথা ছিলেন। দর্শকের উৎসাহ ছিল ক্যামেরার সামনে থাকা মানুষগুলিকে নিয়ে। নেপথ্যের মানুষগুলি থেকে যেতেন অন্তরালে। কিন্তু এখন ভার্চুয়াল মাধ্যমের রমরমায় সাধারণ দর্শকও খুঁজে নিতে চায় প্রিয় ছবির নেপথ্য মানুষগুলিকে। কারা তৈরি করলেন নায়ক-নায়িকাকে— জানতে চায় তারা। সমাজমাধ্যম তাদের হাতে তুলে দিয়েছে সেই সুযোগ।

তেমনই একজন মানুষ মুকেশ ছাবড়া, বলিউডের অন্যতম সফল ‘কাস্টিং ডিরেক্টর’। তাঁর নাকি জহুরির চোখ। সুশান্ত সিংহ রাজপুতকে খুঁজে বের করেছিলেন তিনি। তারকা তৈরিতে তাঁর হাত পাকা। শোনা যাচ্ছে, তিনি নাকি নতুন অভিনেতা-অভিনেত্রীর খোঁজে আসছেন কলকাতায়। সাধারণ মানুষও উৎসাহী তাঁর কর্মশালা নিয়ে।

Advertisement

মাস কয়েক আগে ‘রক্তবীজ ২’-এর শুটিং সেটে হাজির ছিলেন মুকেশ। কানাঘুষোয় শোনা গিয়েছে, ওই সেট থেকেই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনীচিত্রে ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের চরিত্রের জন্য মিমি চক্রবর্তীকে পছন্দ করেছেন। তিনি কি কলকাতা থেকে আরও অভিনেতা চাইছেন?

শোনা যাচ্ছে, কলকাতার এক স্টুডিয়োয় কর্মশালা করাচ্ছেন চলতি মাসে। আগামী ১২ জুলাই তিন ঘণ্টার সেই ক্লাসে যোগ দিতে পারবেন যে কোনও মানুষ। আর সেই কর্মশালায় বিশেষ আগ্রহ প্রকাশ করেছেন টলিপাড়ার অভিনেতারা। সেই তালিকায় টোটা রায়চৌধুরী থেকে দেবদূত ঘোষ, দেবলীনা দত্ত বা সদ্য ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় পা রাখা দিব্যজ্যোতি দত্তও রয়েছেন।

কলকাতার ওই স্টুডিয়োর কর্ণধার প্রীতিময় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কলকাতার অভিনেতাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলাই তাঁদের লক্ষ্য। তাঁর কথায়, “টলিউড থেকে প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী মুম্বই গিয়ে কাজ করতে চান। কিন্তু বাঙালি অভিনেতাদের উচ্চারণ নিয়ে সমস্যা থাকে। তাই অত বড় ইন্ডাস্ট্রিতে কী ভাবে নিজেকে তুলে ধরতে হবে, দিনের পর দিন লড়াই করতে গেলে মানসিক জোর রাখতে হবে, কী ভাবে অডিশন দিতে হবে— সে সব বিষয় কর্মশালায় থাকবে।’’

জানা গিয়েছে শুধু কলকাতা নয়। ইটানগরের এসআরএফটিআই থেকেও ছাত্রছাত্রীরা আসছেন মুকেশের ক্লাস করতে।

বাংলা ছেড়ে মুম্বই গিয়ে অভিনয় প্রসঙ্গে দেবলীনা বলেন, “কলকাতার কাজের পরিসর যে কমছে তা পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। কলকাতায় যে ভাবে চরিত্রাভিনেতা নির্বাচন করা হয়, সেখানে স্বজনপোষণ হয় বলেই আমি মনে করি। অথচ, নবাগতদের তৈরি করার কোনও চেষ্টা, সে ভাবে করা হয় না। আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন কলকাতার পরিস্থিতি এমন ছিল না যে মুম্বইয়ে গিয়ে কাজের চেষ্টা করতে হবে। কিন্তু নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের জন্য সেটা প্রয়োজনীয় হয়ে যাচ্ছে।” তা ছাড়া, অভিনেত্রী মনে করেন, যে কোনও পেশাতেই উন্নতির চেষ্টা থাকে। অভিনেতারাও চান, বাংলায় কাজ করার পর অন্য ভাষার ছবিতে কাজ করতে। বলিউডে কাজ করার ক্ষেত্রে ভাষাগত সমস্যার কথাও স্বীকার করে নেন তিনি। দেবলীনা বলেন, “কলকাতার প্রতিভাবান অভিনেতাদের বলিউডের এক নম্বর কাস্টিং ডিরেক্টরের কাছ থেকে শেখার সুযোগ পাওয়া উচিত। কারণ আমাদের শহরে এমন কেউ নেই, যিনি এ বিষয়ে তাঁদের পথপ্রদর্শন করতে পারেন।”

প্রায় একই সুরে দেবদূত বলেন, “আগে কলকাতায় মেগা ধারাবাহিকের সংখ্যা ছিল ৪০ থেকে ৫০টি,এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে ২০-র ঘরে। একই ভাবে ৭০-১০০টি ছবি হত এক সময়। এখন সংখ্যাটা সেই ২০-তেই ঠেকেছে। বোঝাই যাচ্ছে কলকাতায় কাজ কমেছে । টালিগঞ্জে বিনিয়োগ কমে গিয়েছে। এক সময় প্রায় ১২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হত শুধু টেলিভিশনে। এখন তা অর্ধেক। ফলে মুম্বইয়ে কাজ তো খুঁজবেই নতুন প্রজন্ম।” বাংলা চলচ্চিত্রের পরিসর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে দেবদূত চান অন্য ভাষার চলচ্চিত্র জগতের সঙ্গে জোট বাঁধতে। তিনি বলেন, “শুধু মুম্বই নয়, এমন কর্মশালা হোক দক্ষিণী চলচ্চিত্র জগতের খ্যাতনামীদের নিয়েও। বাংলা ছবির বাজারের প্রসার ঘটুক। রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে বাংলাদেশের সঙ্গে আদানপ্রদান বৃদ্ধি পাক, তবেই তো উন্নতি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement