Coronavirus

করোনা-পরবর্তী সময়ে সিনেমা হলে দর্শক টানা কি চ্যালেঞ্জ?

কী বলছেন পরিচালকেরা?ওটিটি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া দর্শক কি এর পরে সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখবেন?

Advertisement

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ০০:২৯
Share:

রাজ, অতনু ও অরিন্দম

করোনার দাপটে মার্চ মাসে দেশে প্রথম সিনেমা হল বন্ধ হয়েছিল। আগামী মাসেও যে প্রেক্ষাগৃহ খুলবে, এমন নিশ্চয়তা এখনও অবধি নেই। এ দিকে গত তিন-চার বছর ধরে ডিজিটালে ছবি রিলিজ়ের যে ট্রেন্ড শুরু হয়েছিল, অতিমারি ও লকডাউন সেই বুনিয়াদ বেশ মজবুত করে দিয়েছে। বড় তারকার ছবি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট ছবি, দেশজ ও আন্তর্জাতিক সিরিজ়... ডিজিটালে আয়োজনের খামতি নেই।

Advertisement

বাংলা ছবির মার্কেট ছোট। মূলত উৎসব বা ছুটির মরসুমকে কেন্দ্র করে একাধিক ছবি আসে সিনেমা হলে। কিন্তু ওটিটি দেখতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া দর্শক কি এর পরে সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখবেন? কী এমন ছবিতে থাকতে হবে, যা দর্শককে হলে যেতে বাধ্য করবে? টলিউডের অনেক পরিচালক আশাবাদী। তবে দুশ্চিন্তার মেঘ যে একেবারে নেই, তা-ও নয়।

গুপ্তধন সিরিজ়ের পরিচালক ধ্রুব বন্দ্যোপাধ্যায় এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিলেন বাংলা ছবির সাংস্কৃতিক মূল্য। ‘‘হিন্দি ছবির পাশাপাশি বাংলা, মরাঠি ও দক্ষিণের আঞ্চলিক ভাষার ছবিগুলি বরাবরই স্বকীয়তা ধরে রেখেছে। ছবি বাঙালির কাছে বিনোদন নয়, তার চেয়ে বেশি কিছু। আগামী দশ-পনেরো বছরে সিনেমা হলে গিয়ে বাংলা ছবি দেখার ট্রেন্ড অন্তত বদলাবে না।’’

Advertisement

অতিমারিকে বাংলা ছবির ক্ষেত্রে ‘আশীর্বাদ’ বলেই মনে করছেন পরিচালক অরিন্দম শীল। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা বরাবরই তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পছন্দ করি। সেটা আমাদের জাজমেন্টাল স্বভাবের জন্য। ওটিটির পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই যে ‘গেল গেল রব’ উঠেছে, তা মানতে একদম প্রস্তুত নই। বড় পর্দার জন্য বিপদ নয় ওটিটি। বরং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে যে ভাবে ছবির চাহিদা বেড়েছে, সেটা চলচ্চিত্র শিল্পকে ‘ডিফাইন’ করেছে।’’ একই সুর পাভেলের কণ্ঠেও। ‘‘হল বন্ধ থাকা সাময়িক চিন্তার কারণ। আগামী বছর গোড়ার দিকেই সব ঠিক হয়ে যাবে। মিটিং, মিছিল, র‌্যালিতে মানুষের যেমন আগ্রহ, বাংলা ছবি দেখতেও দর্শক হলে আসবেন। আর আগে সাই-ফাই মুভি মানেই ধরা হত হলিউড, বাংলায় তেমন কাজ গ্রাহ্য হত না। কিন্তু সারা শহর মাস্ক পরে হাঁটছে... এমন দৃশ্য তো দু’বছর আগেও লোকের কল্পনায় ছিল না। তাই এর পরে বাংলায় অনেক নতুন কাজ হবে,’’ বললেন পরিচালক।

ওটিটি নিয়ে উৎসাহ শুধুমাত্র শহরাঞ্চলেই সীমাবদ্ধ, বিশ্বাস রাজ চক্রবর্তীর। ‘‘শহরতলি বা মফ্ফসলে ওটিটির ধারণা এখনও স্পষ্ট নয়। ওরা দেখে ঠিকই, কিন্তু যে পরিমাণ ফ্রি-নেট একটি ছবি দেখার জন্য লাগে, সেই আর্থিক সঙ্গতি ওদের সব সময়ে থাকে না।’’ তবে আগামী দিনে বাংলা ছবির জন্য হলে দর্শক টেনে আনা যে বড়সড় চ্যালেঞ্জ, তা মেনে নিলেন রাজ।

বাকিদের মতো অতটাও আশাবাদী নন পরিচালক অতনু ঘোষ। ‘‘ওটিটি প্ল্যাটফর্মে বাংলা ছবি বিক্রি করে যে টাকা আসে, তাতে খরচ ওঠে না। উপরন্তু পাইরেটেড ভার্সন সহজেই পাওয়া যায়। তাই এই ট্রেন্ড বহাল থাকলে, তা বাংলা ছবির ক্ষেত্রে বড় ধাক্কা হবে। একটা সময়ে হলে বাংলা ছবি দেখতে দর্শক যেতেন না। হালে সেই ট্রেন্ড বদলেছিল। কিন্তু দর্শক আবার হলে ভিড় করবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থাকছে।’’

রাজ, ধ্রুব এবং অরিন্দম সকলেই একটি বিষয়ে সহমত, ছবির ক্ষেত্রে বিভাজন আগামী দিনে আরও স্পষ্ট হবে। কিছু ছবি ওটিটির জন্যই তৈরি হবে। কিছু ছবি আবার বড় পর্দার জন্য। বিষয়ের সঙ্গে বদলে যাবে ট্রিটমেন্ট। কিন্তু ওটিটির জন্য বড় পর্দার মান ক্ষুণ্ণ হবে, সেটা মানতে নারাজ তাঁরা।

আগে ভেবে রাখা বিষয় কি আর প্রাসঙ্গিক থাকবে?

‘নিউ নর্মাল’ বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও যে কার্যকর হবে, তা শুধু সময়ের অপেক্ষা। তাই পরিচালকদের ভেবে রাখা স্ক্রিপ্ট আগামী দিনে কি আদৌ বাস্তবায়িত হবে? পাভেল বললেন, ‘‘বছরে গল্প লিখি সাত-আটটা। তার মধ্যে দু’টি গল্প এই মুহূর্তে করা সম্ভব নয়। কারণ একটি ছোটদের নিয়ে, অন্যটি প্রবীণদের নিয়ে।’’

রাজের কথায়, ‘‘সুন্দরবন নিয়ে একটা ছবি করার কথা। সেখানে আয়লার রেফারেন্স ছিল। এ বারে ঢুকবে আমপানের প্রসঙ্গ। তবে সুন্দরবনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শুট করা যাবে না। বাকি যা গল্প ভাবা রয়েছে, তা করতে পারব।’’ অরিন্দমের কথায়, ‘‘আমার স্থগিত হয়ে যাওয়া প্রজেক্ট ‘বালিঘর’ নিয়ে আবার ভাবছি। কারণ সম্পর্ক, আবেগের মতো বিষয়গুলিকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে অতিমারি।’’

ধ্রুব বলছেন বাস্তবতার কথা। ‘‘ছবির বাজেট এখন গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রযোজকের ধার্য করা বাজেটে যে ছবি করা যায়, সেটাই করব।’’ অতনুর মতে, ‘‘প্রাক-করোনা জীবনের ধারার চেয়ে করোনা-পরবর্তী সময় দর্শক বেশি দেখতে চাইবেন।’’

কঠিন সময়, কঠিন পরিস্থিতি। কঠিন দায়িত্ব বাংলার পরিচালকদেরও হাতে। দর্শককে হলে আনার জন্য তাঁদের রণকৌশল বদলাতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement