Buddhadeb Dasgupta

সামান্য কিছু পাওয়ার জন্যে মৃণালদা কারও কাছে মাথা নত করেননি

একেবারে অনাড়ম্বর জীবন কাটাতেন মৃণালদা, ওঁর স্ত্রী গীতাদি। গীতাদি একজন অসামান্য মহিলা। এরকমও দিন মনে আছে, মৃণালদার স্ত্রী উনুনে জল বসিয়েছেন, মৃণালদা চাল আনলে তবে ভাত বসবে। ওই স্ট্রাগল করার সময়ে মানুষটা যেমন ছিলেন, কয়েকদিন আগে পর্যন্ত তাই।

Advertisement

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত

শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৮:৪৪
Share:

বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। ইনসেটে মৃণাল সেন।

খুব কাছের মানুষ চলে গেল। অত্যন্ত ভাল সম্পর্ক ছিল আমাদের। ওঁর ছবির এডিট চলার সময় আমি গিয়েছি। উনিও এসেছেন আমার ছবির কাজ চলাকালীন।

Advertisement

খুব স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ। আদর্শবাদী একজন মানুষ ছিলেন মৃণালদা।

এখন যেমন দেখতে পাই, খুব তাড়াতাড়ি সামান্য কিছু পাওয়ার লোভে মানুষ "সাবমিশন" এ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। মৃণালদা কিন্তু মাথা নত করেননি কখনও।

Advertisement

রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকে সরে আসেননি। ওঁর থেকে শিখেছি একেবারে সাধারণ জীবনযাপন কাকে বলে। খ্যাতির শীর্ষে থাকলেও মাটির মানুষ ছিলেন।

একেবারে অনাড়ম্বর জীবন কাটাতেন মৃণালদা, ওঁর স্ত্রী গীতাদি। গীতাদি একজন অসামান্য মহিলা। এরকমও দিন মনে আছে, মৃণালদার স্ত্রী উনুনে জল বসিয়েছেন, মৃণালদা চাল আনলে তবে ভাত বসবে। ওই স্ট্রাগল করার সময়ে মানুষটা যেমন ছিলেন, কয়েকদিন আগে পর্যন্ত তাই।

আরও পড়ুন, আমাদের রাজপথগুলো আরও মলিন হল, শহর হারাল তার প্রণয়ীকে

এই সাধারণ জীবন কিন্তু মৃণালদার দীর্ঘ আয়ুর একটা কারণ। এ ছাড়াও টেনশন করতেন না একেবারেই। ভাবনা আর টেনশন এক নয়। সেটাও শেখার মত।

মনে হয় গত বছরে গীতাদির চলে যাওয়াই মৃণালদাকে অনেক বেশি কষ্ট দিয়েছিল। কারণ ওঁর স্ত্রীর সঙ্গে ওঁর সম্পর্ক ছিল অনবদ্য।

ওই যে বললাম, সবসময়ের সঙ্গী।

আরও একটা কথা বলি, সবার আগে আমি মৃণালদাকে শ্রদ্ধা করতাম কারণ উনি অসম্ভব পড়াশোনা করতেন। যেটা আজকাল প্রায় উঠে গেছে। আর মৃণাল দার মত রসিক মানুষ আর দেখিনি। একবার মনে আছে, আমরা দুজনে বার্লিন ফিল্ম উৎসবে গিয়েছি, ১৯৭৯ বা ১৯৮০ সাল নাগাদ, সেখানে মৃণালদা কী ভাবে যেন সবার সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেললেন।

আরও পড়ুন, আদর্শ থেকে কখনও সরেননি মৃণালবাবু, বললেন মাধবী

শুধু তাই নয়, গোপাল ভাঁড়ের গল্প শুনিয়ে জার্মানদের মুগ্ধ করছেন, এটাও স্পষ্ট মনে আছে।

ওঁর ছবির কথা যদি বলতে হয়, প্রথমেই বলব ওকা ওড়ি কথা, একদিন প্রতিদিন, ২২ শ্রাবণ কিংবা খারিজের কথা। মাটির মানুষ নামে ওড়িয়া ছবিটির কথাও মনে থাকবেই।

তবে সত্যজিৎ রায়, ঋত্বিক ঘটকের সমসাময়িক বা কাছাকাছি সময়ের এই মানুষটির ছবির সঠিক মূল্যায়ন হয়নি। আমি বারবার বলব, পড়াশোনা করছেন যাঁরা ছবি নিয়ে, সেই পড়ুয়াদের কাছে মৃণালের রেট্রোস্পেক্টিভ একটা বড় শিক্ষা। ওঁর ছবি বড় পর্দায় দেখাতে হবে সবাইকে। মানুষ তো জানতেও পারবে না নইলে।

আরও পড়ুন, আমাকে হনুমান বলে ডাকার লোকটা চলে গেল…

তবে মৃণালদাকে আমি বারবার মনে রাখব এই জন্যে, কখনও কিছু পাওয়ার লোভ ওঁর মধ্যে ছিল না। একটা মানুষ কখনও নিজের রাজনৈতিক আদর্শের সঙ্গে আপস করেননি।

(হলিউড, বলিউড বা টলিউড - টিনসেল টাউনের টাটকা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন