Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Entertainment News

আমাকে হনুমান বলে ডাকার লোকটা চলে গেল…

আগেরকার দিনে নেমন্তন্ন বাড়িতে কাঠের বেঞ্চির মধ্যে কাগজ পেতে পরিবেশন করা হত। শুটিংয়ের সময় পরিবেশনের লোক ছাড়া সকলেই এক সারিতে বসে খেতেন। ডিরেক্টর, টেকনিশিয়ান সবাই। জীবনে প্রথম অমল পালেকরকে দেখি এক সারিতে বসে খাচ্ছেন। উনি শুটিং দেখতে গিয়েছিলেন। পাশে মৃণাল জেঠু, আমরা সবাই।

দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত। ইনসেটে মৃণাল সেন।

দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত। ইনসেটে মৃণাল সেন।

দেবপ্রতিম দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ ১৪:৩৮
Share: Save:

মোহিত চট্টোপাধ্যায় একটা ছবি করেছিলেন ‘মেঘের খেলা’। সেটা ১৯৮২। আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ উপলক্ষে তৈরি হয়েছিল সে ছবি। সেই ছবির শুটিং দেখতে আসেন মৃণাল সেন। সেই প্রথম তাঁকে কাছ থেকে দেখা। এর পর মৃণাল জেঠু একটা ছবি করেন ‘চালচিত্র’। মোহিতকাকু লিখেছিলেন সম্ভবত। ওই ছবিতে একটা দু’দিনের পার্ট দেন আমায়। পারব কি না দেখতে সোজা আমার ভাঙা বাড়িতে এসেছিলেন। ছবিতে ছিলেন, অঞ্জন দত্ত আমার পেটে একটা খোঁচা দেবেন, আর আমি ‘আইক’ করে উঠব। আমার বাড়ির সামনে অ্যাম্বাসেডর গাড়ি থেকে নেমে মৃণাল জেঠু পেটে মারলেন খোঁচা। আমি ‘আইক’ করে উঠলাম। বললেন, ‘‘সিলেক্টেড।’’ খোঁচা খেয়ে সিলেক্ট হয়েছিলাম ওঁর ছবিতে।

আর একটা ছবিতে আমি অভিনয় করিনি। কিন্তু সেখানে কৌশিক সেন ডাবিং করতে পারেননি কোনও কারণে। তখন সোজা আমার স্কুল টালিগঞ্জ বাঙুর স্কুলে এসে হাজির হয়েছিলেন জেঠু। আমায় বললেন, ডাবিং করে দিতে। স্কুলে সেই প্রথম আমার খ্যাতি বাড়ল। কারণ আমার জন্য এসেছেন মৃণাল সেন।

এর পর ‘খারিজ’ শুরু হবে। সে ছবিতে আমাকে নেওয়া হয় ‘হরি’র চরিত্রে। যে চরিত্র আগাপাশতলা ছবিতে ছিল। নারকেলডাঙা নর্থ রোড শীতলাতলা লেনে ছিল পুরনো অরোরা স্টুডিও। আমার মনে আছে প্রতিদিন সকালে কল টাইমে গাড়ি এসে আমাকে তুলত। তার পর মমতাশঙ্করতে তুলত। আমরা যেতাম। সেখানে প্রায় টানা ২০-২৫দিন একসঙ্গে কাজ করেছিলাম। সেখানে প্রথম দেখেছিলাম, কোনও দিন প্রেশার দিয়ে অভিনয় করানো, সংলাপ বলানো নয়। স্বাভাবিক ভাবে ছেড়ে দিতেন। আর একটা জিনিস দেখেছিলাম। আগেরকার দিনে নেমন্তন্ন বাড়িতে কাঠের বেঞ্চির মধ্যে কাগজ পেতে পরিবেশন করা হত। শুটিংয়ের সময় পরিবেশনের লোক ছাড়া সকলেই এক সারিতে বসে খেতেন। ডিরেক্টর, টেকনিশিয়ান সবাই। জীবনে প্রথম অমল পালেকরকে দেখি এক সারিতে বসে খাচ্ছেন। উনি শুটিং দেখতে গিয়েছিলেন। পাশে মৃণাল জেঠু, আমরা সবাই।


মৃণাল পরিচালিত ‘খারিজ’-এর দৃশ্যে দেবপ্রতিম (ডানদিকে)।

শিয়ালদহর দিকে মর্গে শুটিং হয়েছিল। আমি আবার সবেতেই খাই-খাই করি। বলেছিলাম, আমাকে এখানে দাঁড়িয়ে মিষ্টি খেতে দিলেও খেয়ে নেব। তখনও কিন্তু এত আধুনিক হয়নি মর্গ। আমাকে বলেছিলেন, বাজি তো? এই রসগোল্লা নিয়ে আয়। যথারীতি ওখানে খেতে পারিনি। মৃণাল জেঠু খেয়েছিলেন একটা রসগোল্লা। বলেছিলেন, দেখলি তে এই বাজিটা জিতে গেলাম আমি। তার পর আমার অটোগ্রাফের খাতায় লিখে দিয়েছিলেন, ‘হনুমান দাশগুপ্তকে মৃণাল সেন’।

আরও পড়ুন,৬০ বছরের সম্পর্ক আমাদের, কথা আটকে গেল সৌমিত্রর

আমি যখন ক্লাস ইলেভেন। সদ্য কলেজে ঢুকেছি। ‘হোপ ৮৬’ আয়োজন করেছিল বাম সরকার। আমাদের বলা হয়েছিল, তোমার অঞ্চলের বিশিষ্ট মানুষদের কাছ থেকে এই অনুষ্ঠানের সম্পর্কে তাঁদের ভাবনা লিপিবদ্ধ করে জমা দাও। আমরা মৃণাল সেনের বাড়িতে য়াই। আমিই গিয়ে কথা বলি। ‘হোপ ৮৬’-এর বিরুদ্ধে এমন স্পষ্ট বক্তব্য খুব কম মানুষকে বলতে শুনেছি। সেই কথা এখনও আমার কানে লেগে আছে।

প্রত্যেকবার দেখা হলে বলত, কীরে হনুমান কেমন আছিস? আমাকে হনুমান বলে ডাকার লোকটা চলে গেল।

(হলিউড, বলিউড বা টলিউড - টিনসেল টাউনের টাটকা বাংলা খবর পড়তে চোখ রাখুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mrinal Sen Tollywood Celebrities Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE