Cannes 2025 Updates

কখনও গাঢ় সিঁদুর, গায়ে গীতার শ্লোক, কণ্ঠহারে মোদী! কানে সিনেমা না সংস্কারের বাড়াবাড়ি?

“এতটা সংস্কারপন্থী হয়ে কোনও উৎসবমঞ্চে যাওয়া বোধহয় কাম্য নয়। এই ধরনের প্রচারও অভিপ্রেত নয়”, উৎসবপ্রাঙ্গণ ঘুরে কলম ধরলেন গৌতম ঘোষ

Advertisement

গৌতম ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২৫ ১৫:২৬
Share:

কান উৎসবে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন, গৌতম ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত।

এ বছরেও কান চলচ্চিত্র উৎসবে গিয়েছিলাম। এর আগে আমার ছবি পাঁচ বার আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণ পেয়েছে। ‘দখল’, ‘অন্তর্জলী যাত্রা’, ‘পদ্মানদীর মাঝি’, বিসমিল্লা খানের উপরে তথ্যচিত্র, ‘গুড়িয়া’ ছবির দৌলতে। প্রথম বার গিয়েছিলাম ১৯৮২ সালে। মৃণাল সেন, সত্যজিৎ রায় ছিলেন সে বার। ১৯৮২ সালের কান উৎসবপ্রাঙ্গণে শিল্প এবং ব্যবসার অদ্ভুত সমন্বয় দেখেছি। এখন সেটা আরও বড়সড় আকার নিয়েছে। এ বছর আমার ‘পরিক্রমা’ ছবিটির মার্কেট স্ক্রিনিং ছিল। আরও নানা বিষয় ছিল। এ বছর কান-এর ফিল্ম বাজারের কলেবর বৃদ্ধিই বেশি চোখ টেনেছে। বাজারের জন্য আলাদা বিভাগ তৈরি হয়েছে ওখানে। নইলে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারবে কেন?

Advertisement

বিপণনের জায়গা ধরে রাখতে এ বছর বিভিন্ন দেশ তাদের স্টল দিয়েছে। আগেও ছিল, এ বছর সেটিরও রমরমা। তার জন্য কান-এর শিল্পের দিকটি ক্ষুণ্ণ হয়েছে, তা বলব না। সে দিকে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি। আরও একটা দিক আকর্ষণীয়। কান হঠাৎ করে রাজনীতির এক একটি দিক প্রাঙ্গণে তুলে ধরে। যেমন, এ বছর প্যালেস্তাইনের একটি ছবিকে ওরা বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। আমি তো ওখানে এ বছর প্রচুর ভাল ভাল ছবি দেখলাম। সে সব দেখে যেমন শেখা যায়, তেমনি মনও ভরে ওঠে।

আরও একটি দিকের বাড়বাড়ন্ত দেখলাম এ বছর। ওখানে ইন্ডিয়ান প্যাভিলিয়নে ভারতীয় তারকা-আমন্ত্রিতদের সাজগোজ। আমি যদিও সে সব স্বচক্ষে দেখিনি। শুনেছি, দেশে নাকি সে বিষয়ে খুবই চর্চা হয়েছে। কান-এ শুরু থেকেই এই দিকটা চালু করেছিলেন উৎসব কর্তৃপক্ষ। অর্থের বিনিময়ে এখানে লাল গালিচায় কেতাদুরস্ত ভাবে পা ডোবানোর সুযোগ প্রথম থেকেই রয়েছে। এতে উৎসব কর্তৃপক্ষের কিছু আয় হয়। এবং আমার বিবেচনায় কিছু খারাপও নয়। কিন্তু এ বছর ভারতীয় সংস্কারের (পড়ুন কুসংস্কার) নাকি বেশি বাড়াবাড়ি দেখা গিয়েছে! যেমন, ঐশ্বর্যা রাই বচ্চন সিঁথিতে চওড়া সিঁদুর দিয়ে হেঁটেছেন। আবার তাঁর গায়ে নাকি ছিল গীতার শ্লোক লেখা উত্তরীয়। এক জন তো বক্ষভাঁজে প্রধানমন্ত্রীর মুখওয়ালা লকেট নিয়ে ঘুরেছেন! যাঁর রুচি যে রকম, ভারতীয় প্যাভিলিয়নে দেশকে তুলে ধরতে তিনি সে ভাবেই সেজেছেন।

Advertisement

এ সব দেখে দেশের অন্দরে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, বিশ্ব সিনেমার মঞ্চে এই সাজ কতটা কাম্য?

আবারও বলছি, এই দিকটা আমি দেখিনি। দেখার কথাও নয়। তার পরেও বলব, এতটা ‘সংস্কারপন্থী’ হয়ে কোনও উৎসবমঞ্চে যাওয়া বোধহয় কাম্য নয়। এই ধরনের প্রচারও অভিপ্রেত নয়। এতে নিজের দেশের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হতে পারে। যাঁদের হয়ে এঁরা এই ধরনের সেজেছেন তাঁরাও সম্ভবত সেটা চান না বলেই আমার ধারণা। কান কর্তৃপক্ষও এই ধরনের মানসিকতা প্রশ্রয় দেন না। এই প্রাঙ্গণ উদার, সংস্কৃতিমনস্ক। কান ফেস্টিভ্যাল কখনও আলাদা করে ফ্যাশন করতে ডাকে না। যাঁরা যান এটা তাঁদের সংস্কৃতি-রুচির ব্যাপার। এর সঙ্গে কান-এর মূল সংস্কৃতিকে মিশিয়ে না ফেলাই মনে হয় ভাল।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement