লোকেশন সৌজন্য: রয়্যাল বেঙ্গল ক্যাফে; ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল।
সকাল দশটা। গল্ফ ক্লাব রোডের ক্যাফেতে সবে এসি চালানো হয়েছে। তিনি এলেন আধ ঘণ্টা পরে। ‘‘সরি, সরি। কাল রাত তিনটে অবধি এডিটিংয়ের কাজ চলেছে। শুরু করি?’’ বলে সিগারেট বার করলেন। শুরু হল আড্ডা...
এত রাত অবধি শুধু এডিটিং?
(হেসে) না, এডিটিংয়ের পর একটু পার্টিও করেছি টিমের সঙ্গে। ‘গ্যাংস্টার’ নিয়ে ইউটিউবে হিটের সেলিব্রেশন।
সেটায় পরে আসছি। একটা জিনিস কি জানেন, আজকের বিরসা দাশগুপ্তর সঙ্গে আগের বিরসার খুব একটা মিল নেই।
সেটা বুঝি। দেড় বছরে অনেক ঠান্ডা হয়ে গেছি। আগে দুম করে রেগে যেতাম। অন্যদের হিংসে করতাম। পাবলিক ফোরামে যাকে বলে ‘কাঠি করা’, সেগুলো করে মজা পেতাম। দুর্ব্যবহার করতাম, ঝগড়া করতাম। লাস্ট দু’বছরে সেটা কমে গেছে। এটা বুঝেছি, নিজের কাজটা মন দিয়ে করাটাই সবচেয়ে ইম্পর্ট্যান্ট।
এই শান্ত হওয়াটা কি সাফল্যের জন্য? শেষ যখন ইন্টারভিউ দিয়েছিলেন, আপনার হাতে হিট ছিল না। আজকে আপনি ‘মহানায়ক’ সিরিয়ালের ডিরেক্টর। গত বছর পুজোতে ‘শুধু তোমারই জন্য’ হিট...
এগুলো ছাড়া আরও কয়েকটা জিনিস হয়েছিল। শেষ যখন ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম, তখন আমার বাবা রাজা দাশগুপ্তর কথা বলেছিলাম। তখনও বাবা কোনও ছবি ডিরেক্ট করেনি। একটা বিরাট ফ্রাস্ট্রেশন ছিল। সেটা নিয়ে বাড়িতে অশান্তি চলত।
তারপর তো রাজা দাশগুপ্ত ছবি পরিচালনা করলেন?
হ্যাঁ, বাবা ডিরেক্ট করল। তখন আমার ভাইয়ের ছবিও তৈরি হয়ে রিলিজ হচ্ছিল না। তারপর ঋভু ‘তিন’ বানাল অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে। আমার ছবি পুজোতে হিট হল। মেয়ে এখন অভিনয় করছে। বিদীপ্তার কেরিয়ার ভাল চলছে। আজকে আমরা একটা হ্যাপি স্পেসে রয়েছি। ‘শুধু তোমারই জন্য’র সাকসেসটা এর জন্য দায়ী।
একটা সময় তো রিমেকের বিরোধী ছিলেন। রিমেকই তো সাকসেস দিল?
হ্যাঁ, রিমেক সাকসেস দিল। আমি কিন্তু মৌলিক ছবি দিয়েই কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। ‘০৩৩’, ‘জানি দেখা হবে’। কিন্তু ছবিগুলো চলেনি। তারপর যখন রিমেক করতে হল, সত্যি বলছি, আই ওয়াজ স্যাড। আমি রিমেককে ছোট করছি না। তবে রিমেক না করলে ‘গ্যাংস্টার’য়ের মতো অরিজিনাল কমার্শিয়াল ছবি করার সাহস পেতাম না। আর রিমেক বা ‘অ্যাডাপ্টেশন’ কে করছে না? বিভূতিভূষণকে অ্যাডপ্ট করা হচ্ছে না? শেক্সপিয়র হচ্ছে না?
এটা কি কমলেশ্বর বা সৃজিতকে খোঁচা দিলেন?
যেটা সত্যি সেটাই বলেছি।
গত বছর পুজোতে ‘শুধু তোমারই জন্য’ বক্স অফিসে সৃজিতের ‘রাজকাহিনী’কেও হারিয়ে দিয়েছিল।
(হেসে) শুধু সৃজিতের ‘রাজকাহিনী’ বলছেন কেন? বাকি সব ছবিকেও হারিয়ে দিয়েছিল। ‘রাজকাহিনী’ তাদের মধ্যে অন্যতম।
সৃজিত কিন্তু বলেন পার্সেন্টেজ অনুযায়ী ‘রাজকাহিনী’ বিগার হিট।
পার্সেন্টেজ-টার্সেন্টেজগুলো ইকোনমিক্সের ভাষা। আমি ইকোনমিক্স পড়াতে আসিনি। এসেছি ছবি করতে। আর ইকোনমিক্সের চশমা দিয়ে ফিল্ম মেকিংটাকে দেখিও না। ছবি করেছি। প্রোডিউসর খুশি। ব্যস।
‘মহানায়ক’ নিয়ে কয়েকটা প্রশ্ন আছে। এই সিরিয়ালটা নিয়ে অডিয়েন্স তো দ্বিধাবিভক্ত। সেটার ডিরেক্টরও তো আপনি।
হ্যাঁ, এটা টেলিভিশনে আমার প্রথম কাজ। আজও ফোন পাই প্রচুর। দর্শকের ‘মহানায়ক’ দারুণ লেগেছে।
সেটা সংখ্যায় খুব বেশি মনে হয় না। তা হলে টিআরপি বাড়ত। সন্ধে ৭টার প্রাইম টাইম থেকে রাত ১১টায় নিয়ে যেতে হত না!
তাও বলছি, লোকে কিন্তু দেখছে। জানি না কেন ‘মহানায়ক’ আরও বড় হিট হল না। আমরা কোনও ত্রুটি রাখিনি।
আপনি তো শুরুর দিকে থাকলেও তারপর আর থাকেননি। তুরস্ক চলে গেলেন।
আমার তো রোজ ডিরেকশন দেওয়ার কথাও ছিল না। এপিসোড ডিরেক্টর ছিল। তাও আমি শেষ চারটে এপিসোড ছাড়া পুরোটা সময় ছিলাম। এডিটেও বসতাম। এটা আমার কাছেও মিস্ট্রি, ‘মহানায়ক’ চলল না কেন! বুম্বাদা অসম্ভব খেটে কাজটা করেছিল। বাকিরাও দারুণ। পাওলি আউটস্ট্যান্ডিং। মিশকা দারুণ। প্রিয়াঙ্কা ভাল...
প্রিয়াঙ্কাকে নিয়ে আপনার সঙ্গে কথা বলছি একটু পরে।
কেন?
শুনেছিলাম, প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে নাকি আপনার প্রেম?
এটা জানি না। অন্য গসিপ আছে। তবে প্রিয়াঙ্কা নয়।
মিশকা হালিম?
(হাসি) হ্যাঁ, আমিও শুনেছি গসিপটা। দেখুন গসিপ হবেই। আমাদের এখানে সেটে বেশিক্ষণ কথা বললেই গসিপ হয়। কিন্তু আই হ্যাভ আ ক্লিন ফ্যামিলি লাইফ। আমি যদি কোনও দিন কারও সঙ্গে প্রেম করি তা হলে সেটা সবার আগে বিদীপ্তাকে বলে দেব। আসলে সেটে আমি আমার হিরোইনদের প্যাম্পার করি। সেটা পায়েল হতে পারে, শ্রাবন্তী হতে পারে, মিমি হতে পারে। আমি প্রেম করি না, আমার ক্যামেরা ওদের সঙ্গে প্রেম করে।
আপনি প্রেম না করতেই পারেন, কিন্তু আপনার সেটে তো লোকে প্রেম করছে।
কে করল?
‘গ্যাংস্টার’য়ে যশ
কেন মিমি আর মিলি?
প্রেম নেই। ভাল বন্ধুত্ব আছে।
রাজ চক্রবর্তীর খুব খারাপ লেগেছিল, আপনি রাজের বন্ধু হয়েও এই প্রেমটাকে এনকারেজ করেছেন শুনে।
আমি ডিরেক্টর। এটা রাজ আর মিমির পার্সোনাল ব্যাপার। আমি একদিন এটার ভেতর ঢুকেছিলাম। সে দিন মিমি আমার সঙ্গে কথা বলেছিল। রাজের সঙ্গেও কথা হয়েছিল। এটাতে আমার দোষ হচ্ছে কেন? আমি তো মিমির বাড়ির লোক নই। তোমাদের লাইফ, তোমাদের ব্যাপার। কল টাইম টু প্যাক আপ — এটুকু সময় আমার। বাকি সময়ে কে কী করল, সেটা দেখা আমার কাজ নয়। আমার কাজ, ‘গ্যাংস্টার’ ভাল করে ডিরেক্ট করা। মৌলিক একটা গল্প...
মৌলিক মৌলিক করছেন, কিন্তু আপনার মিউজিক ডিরেক্টর অরিন্দম চট্টোপাধ্যায় তো ‘ঠিক এমন এভাবে’ গানটা কপি করেছেন...
ইন্সপায়ার্ড হয়েছে। শুরুর দু’টো ‘রিফ’য়ের মিল আছে...
সেটা কপি না?
ও রকম ‘ইন্সপিরেশন’ সবার আছে। রবীন্দ্রনাথ থেকে আরডি থেকে প্রীতম। প্রবলেমটা কী হচ্ছে, অরিন্দম বাচ্চা ছেলে। লাস্ট তিন বছর যা ছুঁয়েছে তা-ই সোনা হয়েছে...
সোনা হয়তো হয়েছে, কিন্তু গত বছর ‘এগিয়ে দাও’টাও তো কপি ছিল।
তাতে কি দর্শকের খারাপ লেগেছিল? গত বছর অনেক বড় ছবির গানকে হারিয়ে দিয়েছিল ‘এগিয়ে দাও’। বদনামটা করছে কিছু সঙ্গীত পরিচালক, যারা হিংসে করে।
অনুপম রায় বা ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত অরিন্দমকে হিংসে করেন?
উচিত নয় করা। কিন্তু করছে হিংসে। জেলাসি কাজ করছে ভীষণ ভাবে।
গান সৃজিতের স্ট্রং পয়েন্ট ছিল। পুজোতে সৃজিতের গান নিয়ে হইচই হত। গত দু’বছর পালের হাওয়া কেড়ে নিয়েছেন, এটা মানেন তো?
গান সব সময় আমার ছবিরও স্ট্রং পয়েন্ট । সেটা চন্দ্রবিন্দুর সঙ্গে হোক, কী নীল দত্ত কিংবা ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত। আর অরিন্দমের ব্যাপারটা নিয়ে অনুপমের টুইট করাটা ওয়াজ ইন ব্যাড টেস্ট। একই দিনে ওর একই প্রোডিউসরের ছবি রিলিজ করছে। ও তো অপমান করল প্রোডিউসরকে। তবে একটা কথা, সৃজিত ফোন করে অনুপমের ‘চিট’ টুইট-টার জন্য ক্ষমা চেয়েছিল। আমি শুনলাম সৃজিত অনুপমকে টুইটটা ডিলিট করতে বলেছিল। বাট অনুপম বিয়িং অনুপম, ডিলিট করেনি।
আর ইন্দ্রদীপ?
সে দিন দশটায় গানটা আপলোড হওয়ার পর দশটা বেজে পাঁচে আমাকে ফোন করে আইডি বলল, কী ভাল হয়েছে। তারপর নিজেই রিটুইট করল! এ বার তা হলে আমাকেও হিসেব করতে বসতে হবে। কোনও সিনেমার সঙ্গে ‘গডফাদার’য়ের মিল পেলেই টুইট করব তো তা হলে?
অনুপম বা ইন্দ্রদীপ দোষটা কী করলেন? চুরি হয়েছে, বলেছেন...
হ্যাঁ, তা হলে অনুপম যেন সব ছবি, যেখানে কপির ছায়া রয়েছে তা নিয়েও টুইট করে। সেই ছবিগুলো নিয়েও, যেখানে নিজে কাজ করেছে। আইডি-ও তাই। দম থাকলে প্রীতমকে নিয়ে বলুক অনুপম। অরিন্দম নরম মাটি বলে বুলি করব, তা হতে পারে না।
এ সব বলার পর আপনার মনে হয় সৃজিত চুপ থাকবেন? ওঁরও ছবি রয়েছে ‘জুলফিকার’।
একটা কথা বলি। আমরা ডিরেক্টররা আজকাল বড্ড বেশি নিজেদের নিয়ে কথা বলছি। সৃজিতের একটা ছবি রিলিজ হচ্ছে। আমার একটা। আমাদের ছবিগুলো নিজেদের মধ্যে লড়ুক না। আমরা কেন লড়ছি? সেই ‘কোবরা গ্যাং’ তৈরি হয়েছিল ডিরেক্টরদের নিয়ে। গ্যাং থাকল না। আমরা কোবরা হয়ে গেলাম। আমার মনে হয় এখানে কৌশিকদা বা কমলেশ্বরদার লিড নেওয়া উচিত। কৌশিকদার কথা আমরা শুনব। না হলে এটা ন্যাস্টি পর্যায়ে পৌঁছবে।
আপনি আর সৃজিত তো টুইটারে লেখালিখিও করছেন।
যদি দু’পক্ষ ভদ্রভাবে টুইট করে, তা হলে খারাপ কী? টেনশন আছে তো বটেই। কিন্তু তা বলে অসভ্য হব কেন? এত কথা হচ্ছে, কেউ বলছে না কী করে আমি, ক্যামেরাম্যান শুভঙ্কর ভড় আর সম্পাদক শুভ প্রামাণিক কোনও কোরিওগ্রাফার ছাড়াই গান শ্যুট করলাম তুরস্কে? দেখিয়ে দিলাম তো কোরিওগ্রাফার না হলেও শ্যুট করা যায় কমার্শিয়াল ছবি। কোরিওগ্রাফার নিয়ে, জিমি জিব লাগিয়ে, পাগলের মতো ঢোলা প্যান্ট পরে গাড়ি থেকে নামাটা লোকের ভাল লাগছে না।
রাজ আর জিতকে খোঁচা দিলেন?
কাউকে খোঁচা দিতে চাই না।
শুনেছি, সৃজিত আর আপনার টেনশনটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ইউটিউবে হিটের সংখ্যাটা। ষেখানে আপনার একটা গান ১৪ লাখ, সৃজিতের দু’টো মিলিয়ে ৬ লাখ। তাই জন্যই কি সৃজিত রাফল্ড?
ইয়েস। সেটাই সবচেয়ে বড় কারণ। আর এত দিন তো অনেকে কোনও তর্ক হলেই সংখ্যা সামনে নিয়ে আসত। এখন যখন সংখ্যা সামনে আসছে, আমি হাসছি।
সৃজিত তো বলছেন, ওঁর গান কম চালানো হচ্ছে চ্যানেল ও রেডিয়োতে।
এ সব বলে কী লাভ? জানি না, সৃজিত কেন এত টেনশন করছে? ওর অত বড় স্টার কাস্ট। বুম্বাদা, দেব, সৃজিত নিজে, পরম, যিশু, নুসরত, অঙ্কুশ, পাওলি, কৌশিক সেন... সবার টুইটার ফলোয়ার্স জোগাড় করলেই ৫০ লাখ। সেখানে আমার শুধু যশ আর মিমি। আমি তাই নিয়েই খুশি। কমপ্লেন করছি না তো। তবে এত ঝগড়া-টগড়া নেই আমাদের। ‘ঠিক এমন এভাবে’ গান দেখে সৃজিত ফোন করে বলল, অন্য কোনও সিনেমায় মিমিকে ওর এত ভাল লাগেনি। বলল, ‘‘মিমির প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।’’
এটা সৃজিত বললেন?
(হাসি) হ্যাঁ, বলল।
এটাও শুনছিলাম, ‘গ্যাংস্টার’ ছবির পুরো শ্যুটিংটাই নাকি যশের ‘বিশেষ বন্ধু’ পুনম ঝা ডিরেক্ট করেছেন?
পুনম এই ছবির ক্রিয়েটিভ প্রোডিউসর। ও ইনপুটস দিয়েছে। কিন্তু সেটে ফাইনাল কলটা আমার। পাঁচটা ছবির পর আমার সেটে অন্য কারওর ডিরেক্ট করার সাহস নেই।
এক দিকে সৃজিতের ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের টিম। আপনার লেস্টার সিটি। পুজোয় কে জিতবে?
চাইব দু’জনেই জিতুক। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক দিন পর যশের মতো হিরো লঞ্চ হচ্ছে। সেটা ইন্ডাস্ট্রির পক্ষে ভাল।
বাকি হিরোরা ইনসিকিওর্ড হবেন?
ইনসিকিওর্ড হবে না। কিন্তু নতুন প্লেয়ার আসছে। দু’ওভার তো সবাই একটু সামলে খেলবে। এখানে আর একজনের নাম বলতে পারি?
হ্যাঁ।
আমাদের লাইন প্রোডিউসার ইলহান। ও সাহায্য না করলে তুরস্কে ওই অভ্যুত্থানের মধ্যে শ্যুটিং করা যেত না। ইলহান না থাকলে ছবিটাই হত না...
ইলহান না থাকলে তো মিলিও থাকত না। মিলি না থাকলে তো মিমির প্রেমও হত না...
এই, এ বার আমি আসি কেমন...
আনাচে কানাচে
ফুলের বাগানে.... বাড়ির জন্য ফুলের গাছ কিনতে নার্সারিতে রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল