Dev Interview

এক কালে মিঠুনদার সেটে বাবা খাবার দিতেন, এখন তাঁর ছবির প্রযোজক, যাত্রাটা স্বপ্নের মতো: দেব

জন্মদিন মানে এখন দেবের কাছে বক্স অফিসের সাফল্য। না কি এখনও পুরনো দীপককে মিস করেন নায়ক? জন্মদিনে আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি অভিনেতা দেব।

Advertisement

উৎসা হাজরা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:০০
Share:

দক্ষিণ কলকাতার ছাদখোলা রেস্তরাঁয় জন্মদিনে খোলামেলা আড্ডায় দেব। ছবি: দেবর্ষি সরকার।

২৫ ডিসেম্বর সারা বিশ্ব যখন জিশুর জন্মদিন উদ্‌যাপনে মাতে, তখন অধিকারী পরিবারে জোড়া উদ্‌যাপন। বাড়ির ছেলের জন্মদিন যে। তবে এখন তো তাঁর পরিচয় শুধুই বাড়ির ছেলে নয়, এখন তিনি সাংসদ-অভিনেতা। নতুন ছবি ‘প্রজাপতি’ মুক্তি পেয়েছে। ব্যস্ততার ফাঁকে দক্ষিণ কলকাতার ছাদখোলা বারান্দায় আনন্দবাজার অনলাইনের সঙ্গে অন্য দেব।

Advertisement

প্রশ্ন: প্রথমে কোনও প্রশ্ন নয়, শুধুই শুভেচ্ছা। শুভ জন্মদিন।

দেব: ধন্যবাদ ধন্যবাদ (গালভরা হাসি)।

Advertisement

প্রশ্ন: প্রতিটা জন্মদিনের আগে আপনার ছবি মুক্তি পায়, কোনও জ্যোতিষীর পরামর্শ নিয়েছেন?

দেব: না না। আমি এ সবে বিশ্বাসই করি না। আমার হাতে কোনও আংটি দেখতে পাবেন না। পরিশ্রমে বিশ্বাসী। মানুষের সঙ্গে ভাল ব্যবহারে বিশ্বাসী। একটা সময় ছিল, মানুষের জুতো দেখে তাঁর বিচার করা হত। তার পর বিচার করা হত, কাদের সঙ্গে তাঁদের ওঠাবসা। এখন দেখা হয় ব্যবহার। আমার পরিচয় হল, আমার ব্যবহার। হাতে পাথর পরে নিলে তো মানুষটা বদলে যাবে না। ভাল সময়, খারাপ সময় আছে।

প্রশ্ন: জন্মদিনে পাওয়া মনে রাখার মতো উপহার কী?

দেব: এখন ওই উপহার নিয়ে মাতামাতি করার মতো বয়সটা চলে গিয়েছে।

প্রশ্ন: বয়স বাড়ছে ভাল লাগছে, না কি আফসোস হচ্ছে?

দেব: বয়স বাড়া নয়, এটাকে অভিজ্ঞতা বাড়া বলে। ‘ওল্ড ম্যান’। যত বয়স বাড়বে তত ভাল।

প্রশ্ন: বিয়ের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে ‘প্রজাপতি’। দেবের উপর তো তা হলে বিয়ে করার চাপ আরও বেড়ে গিয়েছে?

দেব: সেটা এখন বলে না। প্রতিটা সাক্ষাৎকারের শেষে এই প্রশ্ন থাকে, ‘দেব কবে বিয়ে করবে?’

প্রশ্ন: এই প্রশ্নতে কি আপনি বিরক্ত?

দেব: আমি তো বিরক্ত হই না। আমার তো কাজই এটা। এটা নিয়েই আমায় চলতে হবে।

মিঠুন চক্রবর্তীর সঙ্গে বন্ধুত্বের গল্প শোনালেন দেব। ছবি: দেবর্ষি সরকার।

প্রশ্ন: মিঠুন চক্রবর্তীকে আপনি মুম্বই থেকে চেনেন। আপনাদের বন্ধুত্বের গল্পটা একটু বলুন।

দেব: আমার বাবা তখন মুম্বইয়ে ক্যাটারিংয়ের ব্যবসা করেন। সিনেমার সেটেই প্রথম দেখা মিঠুনদার সঙ্গে। তখন থেকেই আমায় স্নেহ করতেন, গল্প করতেন। তখনকার সিনেমার সেটের গল্প, ওঁর প্রেমের গল্প। আমায় অনেক স্পেস দিয়েছেন। বুম্বাদাও (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) কিন্তু আমায় স্পেস দিয়েছেন। তাই তো সব সিনিয়রদের সঙ্গেই আমার ভাল সম্পর্ক।

প্রশ্ন: অনুজদের সেই স্পেস কি দেব দেন?

দেব: এ বাবা, সেটা আমি বললে তো ঠিক হবে না। আমার জুনিয়র যাঁরা আছেন, তাঁদের জিজ্ঞেস করলে সঠিক উত্তরটা পাওয়া যাবে। তবে আমি যেটা পেয়েছি সেটাই তো আমি দেব। বড়দের থেকে আমি প্রচুর ভালবাসা পেয়েছি।

প্রশ্ন: সে কথা ভেবেই কি শ্বেতাকে সুযোগ দেওয়া?

দেব: অনেক দিন ধরেই খোঁজা হচ্ছিল। অতনুদা (অতনু রায়চৌধুরী, ছবির প্রযোজক) বেশ কয়েক জনের সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। তার পর শ্বেতাকে পছন্দ করা হয়। খুব ভাল অভিনেত্রী। আর সিরিয়াল-থিয়েটারের অভিনেতাদের কিছু শিখিয়ে দিতে হয় না। এটা আরও একটা ভাল দিক।

নিজেকে এখন অভিজ্ঞ প্রযোজক বলে কি মনে করেন তিনি? ছবি: দেবর্ষি সরকার।

প্রশ্ন: সিরিয়ালের অভিনেতাদের অভিযোগ, তাঁদের বড় পর্দায় সুযোগ দেওয়া নিয়ে অনেক ছুঁৎমার্গ আছে...

দেব: আমার তো নেই। তা হলে কি শ্বেতাকে সুযোগ দিতাম? ধীরে ধীরে কিন্তু বদল আসছে। এই অভিযোগটা মনে হয় আমার বিরুদ্ধে নয়। আমরা এমন প্রযোজক যাঁরা প্রতিভার কদর করি।

প্রশ্ন: আপনি তা হলে এখন অভিজ্ঞ প্রযোজক?

দেব: এটা কেউ বলতে পারে না। যাঁরা অভিজ্ঞ প্রযোজক, তাঁরাও বলতে পারেন না, তাঁদের পরের ছবি হিট হবে কি না। টিকিট কেটে যাঁরা ছবি দেখেন, এটা সম্পূর্ণ তাঁদের হাতে।

প্রশ্ন: মিঠুন চক্রবর্তী এককালীন সুপারস্টার। আপনি এই যুগের। দুই যুগের হিরো একসঙ্গে বসলে কী গল্প হয়?

দেব: এটা খুবই ব্যক্তিগত, কী ভাবে বোঝাব। আমাদের যাত্রাপথটা একদম অন্য। মিঠুনদার সেটে খাবার দিত আমার বাবা। সেখানে এখন, তাঁর ছবির প্রযোজক সেই মানুষটা! সেটা কি ভাবা যায়? এককালে যে তাঁকে খাবার দিয়েছে, সে আজ বস। আমরা একটি পরিবারের মতো হয়ে গিয়েছি।

প্রশ্ন: আপনাদের রাজনৈতিক মতাদর্শ আলাদা। বাড়িতে গল্পের মাঝে ঝামেলা হয়েছে?

দেব: দু’জনেই আমরা বিচক্ষণ মানুষ। তাই এমন কোনও বিষয়ে ঢুকিই না যেখানে ঝামেলা হতে পারে।

প্রশ্ন: কিছুটা সেফ থাকার চেষ্টা করেন, তাই তো?

দেব: সেফ না ব্যাপারটা। দেখুন, মিঠুনদা তো বাচ্চা নন, যে তাঁকে বোঝাবো। ঝামেলা তখনই হবে যখন তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করব যে, তিনি ভুল, আমি ঠিক। সেই জায়গাটাতে পৌঁছতেই দিই না। আমরা কখনও নিজেদের পছন্দে হস্তক্ষেপ করি না। মিঠুনদা সকালে তৃণমূলকে গাল দিয়ে সন্ধেবেলা আমার বাড়িতে খেতে এসেছেন। বলেছি, মাংস খাবে? খাওয়াদাওয়া হয়েছে। আড্ডা জমেছে। এটাই আমাদের সম্পর্ক। আমি কখনও অন্য দলের কাউকে নিয়ে কটূক্তি করিনি। সেই জন্যই হয় তো মিঠুনদা আমায় ভালবাসেন। তাই জন্য আমার প্রতি এই ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌজন্যবোধ হয়তো।

প্রশ্ন: ভ্রাতৃত্ববোধ, সৌজন্যবোধ— কত কঠিন বাংলা শব্দ বলছেন। এখনও বলবেন, আপনি ভাল বাংলা বলেন না?

দেব: (অনেকটা লজ্জা পেয়ে) এটা নিয়ে আমি কিছু বলব না। এটা আমার একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।

স্থান সৌজন্য: হোয়্যাটস্‌ আপ ক্যাফে

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন