রাতুলশঙ্করের ভূত দর্শন! গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
বাঙালিদের উৎসবের তালিকায় আছে ভূত চতুর্দশী। এই সময়ে অশুভ শক্তির (দেবতার) আরাধনা করা হয়। তার কয়েক দিন পরেই একই বাবে বিশ্বের অনেক দেশেই পালিত হয় হ্যালউইন উৎসব, যেখানে মৃতদের স্মরণ করা হয়, উৎসবের আয়োজন করা হয়। ভূত চতুর্দশী নিয়ে অনেকেরই নানা অভিজ্ঞতা আছে। এমনই এক অভিজ্ঞতা শোনালেন বাঙালি সঙ্গীতশিল্পী তথা বাদ্যযন্ত্র শিল্পী রাতুলশঙ্কর।
রাতুল তাঁর মা মমতাশঙ্করের সঙ্গে এক বার গিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরে একটি অনুষ্ঠানে। সেখানে গিয়ে হাড়হিম করা অভিজ্ঞতা হয়েছিল তাঁদের। কুয়ালা লামপুরে পৌঁছে হোটেলে অশরীরী অস্তিত্ব টের পেয়েছিলেন। দু’রাত চোখের পাতা এক করতে পারেননি রাতুল। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের অস্তিত্বের কথা বিশ্বাস করতাম না আগে। কিন্তু মালয়েশিয়ায় যা ঘটেছিল, তার পর থেকে অশুভ আত্মার অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারি না।’’
মমতাশঙ্করের নাচের দলের অনুষ্ঠান। সারা বিশ্বের বিভিন্ন নাচের দলের জমায়েত সেখানে। মালয়েশিয়ায় সেই সময় আরও একটি উৎসবের কারণে প্রায় সব হোটেলই ভর্তি। তবে সেখানকার নামী একটি হোটেলে থাকতে দেওয়া হয় তাঁদের। হোটেলে ঢোকার পরেই কী যেন একটা খটকা লেগেছিল রাতুলের। তাঁর কথায়, ‘‘২৭ তলার হোটেল। লবি থেকে যখন উপরে নিয়ে গেল তখনই খটকা লাগছিল। লিফ্টে এক থেকে আট পর্যন্ত বোতাম আছে। তার পর ১০ থেকে ২৭। আর আমরা ছিলাম ৯ নম্বর ফ্লোরে। আটতলায় সবটাই খুব ঝকঝকে তকতকে ব্যাপার। কিন্তু ন’তলায় নিয়ে গেল সার্ভিস লিফ্টে। বেশ অন্ধকার আর অপরিষ্কার ছিল ওই লিফ্টটা। যাই হোক, আমাদের ঘরগুলো রাজকীয়। মা-বাবা একটা ঘরে ছিলেন, সেটা অন্য ফ্লোরে। ট্রুপের ছেলেমেয়েদের জন্য অ্যাপার্টমেন্ট সুইট ছিল। শেষে আমি ট্রুপের ছেলেদের সঙ্গে গিয়ে থাকি।’’
প্রায় ১০-১২ দিন সেখানে ছিলেন তাঁরা। প্রতিদিনই রিহার্সাল ওয়ার্কশপ সেরে হোটেলে ফিরে একরাশ ক্লান্তি। যার ফলে সকলেই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তেন। তবে শেষের একটা দিন ধরা ছিল আশপাশটা ঘুরে দেখা, কেনাকাটার জন্য। তার আগেই শুরু হল এক অন্য জ্বালাতন। দু’রাত চোখের পাতা এক করতে পারেননি রাতুল, তাঁর স্ত্রী-সহ গোটা ট্রুপ। কখনও লন্ডভন্ড হয়ে আছে ঠাকুরের পুজোর আসন। কেউ যেন হেঁটে বেড়াচ্ছে। কখনও আবার ঘরের কলিং বেল বাজিয়ে ছুটে চলেছে কেউ। দরজা খুলতেই কেউ নেই। রাতুলের কথায়, ‘‘আসলে আমরা কিছু দেখিনি। কিন্তু অস্তিত্ব অনুভব করেছি। আসলে শুধু সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান নয়, মালয়েশিয়ার ভূতেরা একটু আলাপ-পরিচয় সারতে চাইছিল আমাদের সঙ্গে।’’
রাতুল বললেন, ‘‘শেষের দুটো রাতের মধ্যে একটা রাতের কথা। প্রতি রাতে আসলে আমরা খাওয়ার পর সকলে মিলে একটু ‘ইনডোর গেম’ খেলতাম। রাতে শুতে যাব। ঘরে ফিরে দেখি, ঘরে যে জায়গায় ঠাকুরের মূর্তি রাখা, মূলত ধুপ রাখার জায়গাটা লন্ডভন্ড হয়ে আছে। বিষয়টায় অতটা গুরুত্ব দিইনি। আমাদের গ্রুপের একটা মেয়ে জানাল, ও কিছু একটা দেখেছে, অবয়বের মতো। আগেও বলেছিল এটা। পাত্তা দিইনি। কিন্তু সেই রাত থেকেই যেন শুরু হল। হঠাৎই বাথরুমে ফ্লাশের শব্দ। এদিকে ভিতরে কেউ নেই। আমরা তখন সবাই মিলে বড় একটা ঘরে শুতে এলাম। তার পর ক্ষণে ক্ষণে ফ্লাশের শব্দ। বাইরে বেল বাজছে। গোটা ফ্লোরে কেউ নেই, কেউ যেন দৌড়ে বেড়াচ্ছে। সেই রাতটা এ ভাবেই কেটে গেল।’’
শেষ রাতটা ভেবেছিলেন কেনাকাটা সেরে ফিরে ঘুমিয়ে পড়বেন সকলে। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায় তাঁদের। রাতুল বলেন,‘‘শেষ রাতেই শুরু আসল উপদ্রব। প্রথমে ঘর থেকে পোড়া গন্ধ। তার পর হঠাৎ তীব্র ঠান্ডা অনুভব করি। যেন একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে যাচ্ছে। অন্য রকমের শীত। তার পর শুরু হল বেল বাজানো। এর পর আমরা বলছিলাম, ফের হয়তো বাথরুমে ফ্লাশের খেলা শুরু হবে। কিন্তু, এ বার শুনি, ফ্লাশের লিভারটা ওঠানামা করছে। ক্রমাগত হয়েই যাচ্ছে এটা। আসলে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছিল। পরিস্থিতি এমন হল যে, কেউ ঘরে একা থাকতে পারছে না। যার ফলে সবাই এক ঘরে ঢালাও বিছানা করে মেঝেয় শুয়ে আছি। তার পর শুনছি কেউ একটা হাঁটছে, কার্পেটে পা ঘষে হাঁটার শব্দ। খুব কাছ থেকে। এ ভাবেই রাত কাটল। ভূত না দেখলেও এ রকম যে একটা শক্তি আছে, তাতে বিশ্বাস করছি।’’ তবে এত কিছুর পরেও রাতুল বলেন, ‘‘আসলে ও ক্ষতি করতে চায়নি। আমার মনে হয়, সুদূর কলকাতা থেকে গিয়েছি। তাই হয়তো আলাপ জমাতে চেয়েছিল।’’