বাড়ছে সুস্থভাবে থাকার সচেতনতা। এর অনেকটা চিকিৎসকের পরামর্শে। সাথে পত্রপত্রিকার প্রচার। কিছুটা ফ্যাশন অবশ্যই আছে। যেটাই হোক সচেতনতায় আখেরে লাভ নিজের আর সমাজের। মনে রাখবেন, চারদিকে শরীরচর্চার মেগাবাইটে দুম করে ওয়ার্ক-আউট শুরু করে দেবেন না। হাঁটা-জগিং মানছি সহজতম ব্যায়াম। কিন্তু হৃদযন্ত্রের সমস্যা, উচ্চ রক্তচাপে ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওয়ার্ক-আউট একদম নয়। না বুঝে দীর্ঘক্ষণ হাঁটা বা জগিং-এর ধকল ভালোর বদলে শরীরে বিপদ ডেকে আনতে পারে। সুতরাং, ওয়ার্ক-আউটের মোট সময় আর তীব্রতা জেনেবুঝে নামুন।
ট্রেডমিল মানে না
শতকরা ৯০% মানুষ জিমে ওয়ার্ক-আউট বলতে বোঝেন হাঁটা-দৌড়। অথবা মেঝেতে হাই-নী বা জাম্পিং জ্যাক। বিজ্ঞানের ভাষায় কার্ডিও-ভাস্কুলার ব্যায়াম। ব্যায়ামে কোনো ভুল নেই। কিন্তু কে করতে পারবে বা পারবে না সেটার বোঝাতেই ভুল। ধরুন, হাঁটু বা কোমরে ব্যাথা। এক্ষেত্রে ট্রেডমিল একদম নয়। অন্ততঃ ব্যাথা না কমা পর্যন্ত। স্পষ্ট করে বলা যাক যেকোনো রকমের ব্যায়ামে ব্যাথা হলে সেটা একদম নয়।
হৃদয় কাঁপছে সামলান
এবার আপনার হার্ট-লাঙের ক্ষমতাটা বোঝার পালা। হার্টরেট অনুযায়ী কার্ডিও ক্ষমতা বোঝার একটা সহজ ফর্মুলা জেনে নিন। ২২০ – আপনার বয়স = আপনার প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ হার্টরেট। ধরুন আপনার বয়স ৪০। সুতরাং ফর্মুলা অনুযায়ী ২২০ – ৪০ = ১৮০ আপনার প্রতি মিনিটে সর্বোচ্চ হার্টরেট। আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন বলছে শিক্ষানবীশদের সর্বোচ্চ হার্টরেটের ৫০% দিয়ে শুরু করা উচিত। ধরুন আপনি পার্কে হাঁটছেন বা জগিং করছেন। মিনিট পাঁচেক পরে দাঁড়িয়ে কব্জির কাছে ধমনীতে ১০ সেকেণ্ড হার্টরেট নিন। এবার ৬ দিয়ে গুণ করুন। গুণফলটা যদি ৯০-এর বেশি হয় তবে আপনার ৪০ বছর বয়সের পক্ষে একটু বেশি তীব্র ওয়ার্ক-আউট। হাঁটা বা জগিং-এর গতি কমান। গোড়ার দিকে বয়স আন্দাজে কার্ডিও-র তীব্রতা মেপে ব্যায়াম করলে ঝুঁকি থাকবে না। মোট সময়কালটা ১৫ মিনিটে বাঁধুন। সপ্তাহ তিনেক বাদে তীব্রতা বাড়ান, সাথে সময়টা বাড়িয়ে করুন ২০ মিনিট।
শক্তি মে শক্তি
যাঁরা শুধুই কার্ডিও ওয়ার্ক-আউটে বিশ্বাসী তাঁদের একটা তথ্য জানাই। এক্সারসাইজ সায়েন্স বলছে ব্যাথা থাকুক বা না থাকুক সবসময় জোর দেওয়া উচিত পেশী আড় বন্ধনীর শক্তির দিকে। এককথায় শক্তি বাড়ানোর ব্যায়ামই আপনার শক্তি।
কোমরের কামাল
ধরুন আপনার কোমর। এটা কতটা শক্তিশালী তা বুঝতে করুন প্ল্যাঙ্ক। মেঝেতে উপুড় হয়ে কনুই আর পায়ের পাতায় ভর রেখে শরীরটা এক মিনিট ঠিক পশ্চারে শূন্যে ধরে রাখতে পারলে বোঝা যাবে আপনার কোমরের সামনের অংশ বেশ শক্তিশালী। ১০-২০ সেকেণ্ডে কাত হওয়া মানে আপনি শিক্ষানবিশ। এভাবেই পাশপাশি প্ল্যাঙ্ক আর পায়ের পাতায় ভর রেখে চিত হয়ে শুয়ে ব্রিজ দিয়ে কোমরের পাশের আর পিছনের পেশীর জোর পরীক্ষা করুন। পরীক্ষার ফল অনুযায়ী বেছে নিন ব্যায়াম। যেমন প্ল্যাঙ্ক ১ মিনিটের বেশি করতে পারলে আপনি প্ল্যাঙ্ক আর আর্ম রিচ – অর্থাৎ মাঝারি কঠিন ব্যায়াম বাছতে পারেন। ১০ সেকেন্ডে কাত হওয়া মানে ঐ প্ল্যাঙ্কই আপনাকে করতে হবে।
হাঁটতে হলেই হাঁটু
হাঁটা-জগিং সবেতেই দরকার ব্যাথামুক্ত শক্তিশালী হাঁটু। সুতরাং হাঁটুর জোর বাড়ানো একান্ত জরুরী। ব্যাথা না থাকলে দিন স্কোয়াট টেস্ট। দেখুন হাঁটু পায়ের পাতার পিছনে রেখে, মেরুদণ্ড টানটান করে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত বসতে পারেন কিনা। মেরুদণ্ড টানটান আছে কিনা সেটা বুঝতে একটা ৩ ফুটের কাঠের দণ্ড নিন। দণ্ডটা হাতে করে পিঠের পেছনে ধরুন। আপনি স্কোয়াটের সময় মাথা, পিঠের উপরের অংশ আর কোমর যেন দণ্ড স্পর্শ করে থাকে। পশ্চার ঠিক রাখার এই পদ্ধতিটাকে বলে হিপ হিঞ্জ। পরীক্ষায় পাশ করলে ওজন নিয়ে ব্যায়াম করুন। ফেল হলে একটা চেয়ার টেনে নিন। চেয়ারটা পিছনে রেখে বডি ওয়েট স্কোয়াট করুন। চেষ্টা করুন হিপ যেন চেয়ার স্পর্শ করে। স্কোয়াট, লাঞ্জ, স্টেপ আপ – এগুলো হল হাঁটুর জোর বাড়ানোর অব্যর্থ ব্যায়াম। হাঁটুতে জোর বাড়িয়ে হাঁটলে বা দৌড়লে দেখবেন কাজটা অনেক সহজ লাগছে। স্কোয়াট-লাঞ্জের সময় হাঁটুতে ব্যাথা লাগলে ব্যায়ামগুলো একদম নয়। আপনি লেগ এক্সটেনশন, হ্যামস্ট্রিং কার্লের মত ব্যায়াম করে আগে ব্যাথাটা কমান। তারপর দেখুন স্কোয়াট পারছেন কিনা।
শরীরের উপরের অংশের জন্য পুশ আপ, ডাম্বেল দিয়ে ঝুঁকে রোয়িং, পুল আপ – এগুলো হল শক্তি যাচাইয়ের ব্যায়াম। ফেল হওয়া মানেই আপনি শিক্ষানবীশ। সুতরাং, ব্যায়ামের কায়দা আর পশ্চারের প্রাথমিক পাঠ আপনাকে নিতেই হবে।
শিক্ষানবীশ ধরে নিয়ে ওয়ার্ক-আউটের একটা সাপ্তাহিক সূচী বানানো যাক। প্রথম ৩ সপ্তাহে ৪ দিন জোর বাড়ানোর ব্যায়াম আর ২ দিন কার্ডিও। চতুর্থ সপ্তাহ থেকে ৩ দিন জোর বাড়ানোর ব্যায়াম আর ৩ দিন কার্ডিও।
মরাল অব দ্য স্টোরি – গাড়ি স্টার্ট করেই চট করে থার্ড গিয়ারে গিয়ে এক্সেলারেটর দাবানো নয়। প্রথম প্রথম ফার্স্ট গিয়ারেই চলুন।