কিংবদন্তি নায়িকা চলে গিয়েছেন পৃথিবী ছেড়ে। কিন্তু আ॥জও বাঙালির মনে চির অমলিন সেই হাসি। তাঁর সম্পর্কে আজও মানুষের নানা কৌতূহল। আজও যখন বিকিনিতে ট্রোলড হন নায়িকারা, তখন সেই আমলে শুধু তোয়ালেতে সমুদ্রের ধারে ক্যামেরায় পোজ দিয়েছেন রিনা ব্রাউন, জানেন কি? আজ তাঁর জন্মদিন।
১৯৩১ সালের আজকের দিনে বাংলাদেশের পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন সুচিত্রা। বাড়ির সকলে কৃষ্ণা বলে ডাকতেন, স্কুলে ভর্তির সময় তার নাম দেওয়া হয় রমা।
রমা নাম করলেন সিনেমায়, হয়ে উঠলেন সুচিত্রা। তাঁর দিদি উমাদেবী একদিন তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুই সিনেমায় নামলি, অভিনয়ের কী জানিস?’ সুচিত্রা বলেছিলেন, ‘না দিদি, টাকা খুব দরকার, সিনেমা করতেই হবে। চেষ্টা করে দেখি, কতটা পারি।’
সুচিত্রা অভিনয় ছাড়ার কথা প্রথমে জানিয়েছিলেন ছায়াসঙ্গী, মেক আপ আর্টিস্ট মহম্মদ হাসান জামানকে।
তাঁর গগনচুম্বী সাফল্যে উত্তমকুমারও নাকি ঈর্ষান্বিত হয়ে বলেছিলেন, ‘সুচিত্রা সেন মুম্বইয়ে সিনেমায় চুক্তি করার পর ‘প্রাউড’ হয়েছেন, অর্থ নিয়েও তাঁর গর্ব রয়েছে।’ যদিও উত্তমই তাঁর প্রিয় বন্ধু ছিলেন।
আঁধি ছবির সেটে সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে খুনসুটি লেগেই থাকত। গালও টিপে দিয়েছিলেন নায়কের।
স্বামী দিবানাথ সেনের ইচ্ছাতেই রমা সেনের সিনেমায় আসা। আপত্তি কম করেননি সুচিত্রা। কিন্তু তত দিনে ওঁর হয়ে অ্যাডভান্সও নেওয়া হয়ে গিয়েছে ‘উদ্যোগী’ স্বামীর।
শ্বশুর আদিনাথ সেনের থেকে অনুমতি নিয়ে এক ‘অনিচ্ছুক শিল্পী’ হিসেবে সুচিত্রার টালিগঞ্জ স্টুডিয়ো পাড়ায় প্রবেশ। পরে তিনিই হলেন ডিভা।
এরকম মোহময়ী নায়িকা কিন্তু কখনওই পাননি জাতীয় পুরষ্কারের সম্মান, ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেও তাঁর অভিনয়ে এখনও মুগ্ধ আপামর ভারতবাসী।
গুলজারের মতো পরিচালক থেকে মাধুরী দীক্ষিত, রানি মুখোপাধ্যায়ের মতো অভিনেত্রীদের কলমে তাঁর সম্পর্কে প্রশংসা উচ্চারিত হয়েছে। বন্ধু ছিলেন বলিউড অভিনেতা দেব আনন্দও। সুচিত্রা সেনকে ‘স্যর’ সম্বোধন করতেন গুলজার। ব্যক্তিত্ব মাহাত্ম্যে ব্যতিক্রম।
সুচিত্রা সেন ক্যামেরার সামনে মারাত্মক সাবলীল ছিলেন। মোহময়ী সুচিত্রাকে সমুদ্রে তোয়ালে পরিহিত অবস্থায় ক্যামেরাবন্দি করেছিলেন সেই সময়ের এক আলোকচিত্রী।
২০১৪-র ১৬ জুলাই সুচিত্রার আদি বাড়িতে সংগ্রহশালা নির্মাণের আদেশ দেয় বাংলাদেশের একটি আদালত। বাংলাদেশের পাবনার বাড়িতে তৈরি হয়েছে সংগ্রহশালাটি। মোহময়ী সুচিত্রাকে কেউই ভুলতে পারেন না।
দীর্ঘ অন্তরাল ভেঙে ভোটার কার্ডের জন্য ফের ক্যামেরার সামনে আসেন মহানায়িকা। ১৯৯৫ সালে।