জন্মদিনের গল্পে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি: ফেসবুক।
ছোটবেলায় আমার জন্মদিন কেমন ছিল? সারা বছর ডাল, বেগুনভাজা আর ভাত। আমি ডিম খেতে খুব ভালবাসি। এ দিন তাই আমার পাতে ডিম। আলুসেদ্ধ, ডিমসেদ্ধ আর ভাত। মায়ের রাঁধা এই বিশেষ মেনু আমার জন্মদিন স্পেশ্যাল।
এ ভাবেই বড় হয়েছি। পাশের বাড়ির ছোট্ট মেয়ে বনি। তথাকথিত বন্ধু নয়। তবু এ দিন ও আসত আমাদের বাড়ি। মা অল্প দুধে ছোট এক বাটি পায়েস রাঁধত। খুব কাছের হাতেগোনা দু’চার জন এক চামচ করে সেই পায়েস পেত। যেন প্রসাদ!
নিজের জন্মদিন নিয়ে কোনও দিনই হেলদোল নেই, মাথাব্যথাও নেই। একটা নতুন জামা? ও তো আকাশকুসুম কল্পনা!
একটু বড় হওয়ার পর আমি জেঠুর বাড়িতে। যৌথ পরিবার। অনেক মানুষ। জেঠু তাঁর সামর্থ্য অনুযায়ী আমার জন্মদিন পালন করার চেষ্টা করেছেন। তাই প্রতি বছর নিয়ম করে জন্মদিন পালন হয়েছে, তা নয়। যে বছর হয়েছে, সব ভাই-বোন মিলে হুল্লোড়, হুটোপাটি। এ ভাবেই বড় হলাম। অভিনয়ে এলাম। নামডাক হল। আমার জন্মদিনের জৌলুস বাড়ল। তা বলে বন্ধুসংখ্যা যে খুব বাড়ল, তেমনটা নয়। কিছু জনকে নিয়ে ক্ষমতা অনুযায়ী উদ্যাপনে মেতেছি বইকি!
মায়ের পায়েস কিন্তু তখনও ছিল। আর ছিল ডিমের কোনও না কোনও পদ। বোন সোনা এলে ছোটবেলার মতো আলু সেদ্ধ, ডিম সেদ্ধ আর ভাত। বাকি ভাইবোন এলে রুমালি রুটি আর ডিম তড়কা।
আবার এমনও দিন গিয়েছে, আমার নামডাক হয়েছে। নতুন বাড়ি কিনেছি। শুটিং করছি নিয়মিত। খরচের কারণে হাতে টাকা নেই। জন্মদিনের পার্টি করতে পারিনি। তাতেও উদ্যাপন আটকায়নি। কুণাল মিত্র কেক নিয়ে হাজির। অভিজিৎ দাশগুপ্ত কিছু আনল। আমাদের আড্ডা জমে গেল।
জানেন, দুনিয়া ওলটপালট হয়ে গেলেও আর একজন এ দিন আসবেই। আমার ছেলে। আমার শক্তি। বড্ড ভালবাসে। যখনতখন চলে আসে আমার কাছে। জন্মদিন কখনও মিস করে না। আজও আসবে নিশ্চয়ই।
এ বছর আমার জন্মদিনের আগাম উদ্যাপন হয়েছে। আমার আর আমার বোন সোনার জন্মদিন গায়ে গায়ে। দু’জনের জন্মদিন একসঙ্গে উদ্যাপন করবে বলে দাদা মাঝের একটা তারিখ বেছেছিল। সে দিন সকলে মিলে খুব আনন্দ করলাম।
জীবন আমাকে নানা পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে নিয়ে গিয়েছে। জীবন নিয়ে তাই কোনও অভিযোগ নেই। ঠিক যেমন অভিযোগ নেই, বয়স বাড়ছে বলে। জন্মদিনের দিন তাই কোনও প্রতিজ্ঞাও করি না। জানি, রাখতে পারব না।
এ বছর মা নেই। এ বছর হয়তো তাই পায়েস নেই। জানি, অনেকে আসবেন। সকলের সঙ্গে মিলে সময় কাটাব। রাত বাড়বে। একে একে বিদায় নেবেন সবাই। বাড়িতে শুধুই আমি। তখন মা আসবে আমার কাছে। আমরা কথা বলব রোজের মতো। কিংবা আমি দাঁড়াব ব্যালকনিতে গিয়ে। দূর আকাশের বুকে তখন একটা তারা একটু বেশিই জ্বলজ্বল করছে। ওটাই তো আমার মা।
আমি তাকিয়ে থাকব একদৃষ্টিতে। মা-ও দেখবে আমায়। আর হাসবে মিটিমিটি।