(বাঁ দিকে) দিলীপ কুমারের পাশে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু, পাশে দেব আনন্দ এবং রাজ কপূর । ছবি: সংগৃহীত।
রাজনীতি আর রুপোলি পর্দা দীর্ঘ দিন ধরেই চলেছে পাশাপাশি। কখনও কখনও হাত ধরাধরি করেও। তবে সূক্ষ্ম একটি দূরত্ব ছিল সব সময়ই। এখন যেমন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে প্রায়ই দেখা যায় বলিউড তারকাদের সঙ্গে, দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক ছিল তৎকালীন তারকাদের। সেই সম্পর্কের স্মৃতিচারণ ধরা রয়েছে ঋতু নন্দের লেখা রাজ কপূরের জীবনীগ্রন্থ ‘রাজ কপূর: দ্য ওয়ান অ্যান্ড ওনলি শো ম্যান’-এ।
পঞ্চাশের দশকে বলিউডে রাজত্ব করতেন দেব আনন্দ, দিলীপ কুমার, আর সঙ্গী ছিলেন রাজ কপূর। আসমুদ্রহিমাচল হিল্লোল তুলতেন তাঁরা। তিন তারকার বন্ধুত্বও ছিল সর্বজনবিদিত। জীবনীগ্রন্থে রাজ কপূর জানিয়েছিলেন, এক বার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে নেহরু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। খানিক সুস্থ হওয়ার পর তাঁরা তিনমূর্তি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দেখা করতে গিয়েছিলেন। রাজ বলেছেন, “তত দিনে নেহরু খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন, তবে বিমর্ষ ছিলেন। কিন্তু আমাদের তিন জনকে দেখে উৎফুল্ল হয়ে উঠলেন।”
সে দিন তাঁরা চার জন প্রচুর গল্প করেছিলেন। সকলে যেন একই বয়সি। রাজের মনে হয়েছিল যেন তাঁরা অনেক দিনের হারানো বন্ধুকে খুঁজে পেয়েছেন। তিন তারকা খানিকটা যেন অবাকও হয়েছিলেন। রাজ বলেছেন, “আমরা সকলে মন খুলে কথা বলছিলাম। শিশুর মতো আনন্দে ফুটছিলাম আমরা। মনে হচ্ছিল পণ্ডিত নেহরুও তাঁর রাজনৈতিক চাপ, ব্যস্ত জীবন থেকে পালিয়ে এসেছেন”।
ঠিক এই সময় রাজ তাঁকে জিজ্ঞাসা করে বসেন, “আমরা শুনেছি, আপনি যেখানেই গিয়েছেন, মহিলামহলে খুবই জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।” সপ্রতিভ প্রধানমন্ত্রী তাঁর মুখে অনাবিল হাসিটি নিয়ে ঝটিতি জবাব দিয়েছিলেন, “আপনাদের মতো নয়!” আর এতেই যেন আরও সাহস বেড়ে যায় অভিনেতাদের। ফের প্রশ্ন করেন, “আপনার এই বিধ্বংসী হাসি নাকি লেডি মাউন্টব্যাটেনের মন চুরি করেছিল... এ কথা কি সত্যি?”
রাজ তাঁর স্মৃতিচারণে জানিয়েছেন, এ প্রশ্ন শুনেই আরক্তিম হয়ে উঠেছিলেন জওহরলাল নেহরু। বুঝিয়ে দিয়েছিলেন প্রশ্ন শুনে তিনি মোটেও বিরক্ত হননি। তিনি বলেছিলেন, “আমার সম্পর্কে ছড়ানো এ ধরনের গল্প শুনতে আমি ভালবাসি।” এর পর দিলীপ কুমার রসিকতা করে জিজ্ঞাসা করে বসেন, “...কিন্তু শোনা যায় লেডি মাউন্টব্যাটেন নিজে আপনার প্রতি তাঁর দুর্বলতার কথা স্বীকার করেছেন!”
এতেও বিরক্ত হননি নেহরু। বরং তিনিও সুরসিকের মতোই জবাব দেন, “মানুষ আমাকে এ সব বিশ্বাস করতে বাধ্য করেছে।”