Heart Transplant

হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপনে চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতি নিয়ে কলম ধরলেন চিকিৎসক ললিত কপূর

হৃদ্‌রোগ সংক্রান্ত জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সারা বিশ্ব জুড়ে ৩ অগস্ট পালিত হয় জাতীয় হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন দিবস। এই দিন নিঃস্বার্থ অঙ্গদাতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানানো হয় তাঁদেরকেও, যাঁদের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হবে।

Advertisement

ললিত কপূর

শেষ আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৭
Share:

প্রতীকী চিত্র

বর্তমানে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। প্রায়ই শোনা যায়, হৃদ্‌রোগের ফলে মৃত্যু। এমনকি তরুণদের মধ্যেও হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ার সমস্যা দেখা যাচ্ছে। তাই হৃদ্‌রোগ সংক্রান্ত জনসচেতনতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে সারা বিশ্ব জুড়ে ৩ অগস্ট পালিত হয় জাতীয় হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন দিবস। এই দিন নিঃস্বার্থ অঙ্গদাতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানানো হয় তাঁদেরকেও, যাঁদের হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হবে।

Advertisement

সমাজমাধ্যমে আমরা প্রায়শই দেখে থাকি, তরুণ বা তরুণীরা শরীরচর্চা করতে গিয়ে, এমনকি নাচতে গিয়েও হঠাৎ মাটিতে পড়ে তৎক্ষণাৎ মারা যাচ্ছেন। যার মূল কারণ, হৃদ্‌যন্ত্র বিকল হয়ে যাওয়া। হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যা খারাপ পর্যায়ে চলে গেলে সেটি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। তবে এটি খুবই ব্যয়বহুল একটি ব্যবস্থা। যা সাধারণ মানুষের জন্যে অসম্ভব বললেই চলে।

শোনা যায়, ১৯৯৪ সালের ৩ অগষ্ট, নিউ দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সেস -এ (AIIMS) বিখ্যাত ভারতীয় কার্ডিয়াক সার্জন চিকিৎসক পি. ভেনুগোপাল ভারতে প্রথম সফল হদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করেছিলেন। এই অস্ত্রোপচারটিতে তাঁর একটি যুগান্তকারী কৃতিত্ব ছিল। চিকিৎসক পি. ভেনুগোপাল উত্তরপ্রদেশের ৫২ বছর বয়সি রবিশঙ্কর নামে এক কৃষকের হৃদ্‌পিণ্ড সফল ভাবে প্রতিস্থাপন করেছিলেন। এই অস্ত্রোপচারটি চিকিৎসা বিজ্ঞানে হৃদ্‌পিণ্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে।

Advertisement

চিকিৎসক পি. ভেনুগোপালের তাঁর এই যুগান্তকারী কৃতিত্বের জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর কাছ থেকেও চূড়ান্ত প্রশংসা পেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী তাঁকে প্রশংসিত করার পাশাপাশি তাঁর দলের প্রচেষ্টাকেও অত্যন্ত সমর্থন জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি তিনি ভারতের চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং জীবন বাঁচাতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের গুরুত্বকেও তুলে ধরেছিলেন।

এই ঘটনাটি দেশে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের উন্নয়নের ওপর নিবিড় ভাবে প্রভাব ফেলেছিল। এই দৃষ্টান্তমূলক অস্ত্রোপচার অঙ্গদান এবং অঙ্গ প্রতিস্থাপন পরিকাঠামোর ওপর জরুরি মনোনিবেশ আনতে যথেষ্ট সক্রিয় হয়েছে।

এই ঘটনারও বেশ কিছু বছর আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্রিশ্চিয়ান বার্নার্ডের প্রথম সাফল্যের পর পরই, ১৯৬৮ সালে চিকিৎসক এ কে বসু, মুম্বইয়ের কিং এডওয়ার্ড মেমোরিয়াল (কেইএম) হৃদ্‌যন্ত্র প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও এই অস্ত্রোপচার পদ্ধতিটি সফল হয়নি। কিন্তু চিকিৎসক বসুর এই প্রাথমিক প্রচেষ্টা ভারতে হৃদ্‌পিণ্ড প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ অগ্রগতির ভিত্তি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিল।

এই মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপনের আইনকে অনুসরণ করে, চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ মেডিক্যাল মিশনে চিকিৎসক কে. এম. চেরিয়ান এবং তার দল এম. বালাসুব্রমন্নিয়ম নামে ২৩ বছর বয়সি এক যুবকের ওপর হৃদ্‌পিণ্ড ট্রান্সপ্লান্ট করেন। যিনি একজন ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া মহিলা ললিতা ভেনুগোপালের কাছ থেকে হৃদপিণ্ড গ্রহণ করেছিলেন। ললিতা ভেনুগোপাল অঙ্গদানে পূর্ণ সম্মতি দিয়েছিলেন।

চিকিৎসা বিজ্ঞানে হৃদ্‌পিণ্ড প্রতিস্থাপনের এই সকল অগ্রণী প্রচেষ্টা এবং চিকিৎসা পদ্ধতির ওপর বিচার বিবেচনা করে ১৯৯৪ সালে সংসদকে মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন প্রণয়ন কার্যকরী করার জন্য জোর দেওয়া হয়। ঠিক তার পরের বছর ১৯৯৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সেই আইন কার্যকর করা হয়

এই আইনটি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের জন্য একটি শক্তিশালী আইনি পরিকাঠামো প্রদান করার পাশাপাশি অঙ্গদাতাদের এবং প্রাপকদের অধিকারের সুরক্ষাও নিশ্চিত করে। এই আইনটি ভারতে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রসর এবং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই আইনের সাহায্যে জীবনরক্ষার পদ্ধতিগুলিকে আরও সুনিশ্চিত করা সক্ষম হয়েছে।

এই আইন কার্যকরী হওয়ার পর থেকেই ট্যাক্রোলিমাস (প্রোগ্রাফ), মাইকোফেনোলেট মোফেটিল (সেলসেপ্ট), বেলাটাসেপ্ট (নুলোজিক্স) এবং এভারোলিমা (জোরট্রেস)য়ের এর মতো ‘ইমিউনোসপ্রেসিভ থেরাপি’তে সক্রিয় অগ্রগতি অঙ্গ প্রতিস্থাপনকে ভারতীয়দের জন্য একটি গ্রহণযোগ্য এবং সাশ্রয়ী বিকল্পে পরিণত করেছে। ইমিউনোসপ্রেসিভ থেরাপির এই সক্রিয় অগ্রগতি, উন্নত অস্ত্রোপচারের কৌশল এবং অঙ্গদানের সচেতনতা বৃদ্ধি সফল হার্ট ট্রান্সপ্লান্টের বৃদ্ধিতেও অনস্বীকার্য অবদান রেখেছে। যা শেষ পর্যায়ের হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্যেও নতুন আশার আলো দেখিয়েছে।

হৃদযন্ত্রে প্রতিস্থাপনে, অঙ্গদাতা এবং তাঁর পরিবারের ভূমিকা সত্যিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রিয়জনকে হারানোর শোক নিয়েও অন্য কারও জীবন দানে অগ্রণী হওয়া ব্যক্তিরাই অঙ্গদানে এগিয়ে আসেন। ৩ অগস্ট জাতীয় হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট দিবস হল সেই সব মহৎ মানুষদের কৃতজ্ঞতা ও আশা দেখানোর দিন।

অন্যকে নতুন জীবন দিন। এগিয়ে আসুন এবং অঙ্গীকার করুন অঙ্গদানের। ক্লিক করুন পাশের লিঙ্কে — bit.ly/47a6kLV

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন