ছবি : সংগৃহীত।
গাড়ির যেমন ইঞ্জিন, বাড়ির ক্ষেত্রে খানিকটা তেমনই ভূমিকা রান্নাঘরের। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সকাল থেকে রাতের চালিকাশক্তির জোগান মেলে এই রান্নাঘর থেকেই। আবার ছোটখাটো অসুস্থতার সমাধানও মেলে রান্নাঘর থেকেই। ঠান্ডা লাগলে আদা দেওয়া চা, ফুসফুসে সর্দি বসে গেলে সকালে খালি পেটে রসুন চিবিয়ে খাওয়া, সকালে উঠে লেবু দিয়ে জল খেতে হলেও রান্নাঘরই ভরসা। এমনই দৈনন্দিন ব্যবহারের পাঁচ মশলা রান্নাঘরে রাখলে তা নানা কাজে লাগতে পারে। সেগুলি কী কী? তেমনই পাঁচ মশলার সন্ধান দিয়েছেন গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট সৌরভ শেঠি। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করা একটি ভিডিয়োয় তিনি বলছেন, ‘‘উপকারী মশলা হিসাবে আদা-রসুনও রাখা জরুরি। তার পাশাপাশি পাঁচটি শুকনো মশলাও প্রতি রান্নাঘরে থাকা উচিত।’’
হলুদ
ভারতীয় রান্নাঘরে সবচেয়ে উপকারী মশলা হিসাবে হলুদের কথাই বলতে হয়। এই একটি উপকরণেরই অজস্র গুণ। আর তার পুরোটাই হলুদে থাকা কারকিউমিনের দৌলতে।
১. প্রদাহ থেকে হওয়া যে কোনও অসুখ ঠেকাতে উপকারী। সেই তালিকায় আর্থ্রাইটিস থেকে শুরু করে ক্যানসারও রয়েছে।
২. রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ছোটখাটো অসুখ ঠেকাতে যা উপকারী।
৩. অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টে ভরপুর। শরীরকে ফ্রি র্যাডিক্যাল থেকে বাঁচায়। পাশাপাশি, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সাহায্য করে কারকিউমিন।
গোলমরিচ
দেশি, বিদেশি যে রান্নাতেই দিন, খাবারের স্বাদে অন্য মাত্রা জোগায় গোলমরিচ। আর এতে থাকা পিপারিনও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
১. এতেও রয়েছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা নানা ধরনের রোগ দূরে রাখতে সাহায্য করে। ক্যানসার, ডায়াবিটিস, হার্টের রোগের ঝুঁকি কমায়।
২. গোলমরিচ বিভিন্ন হজমে সহায়ক এনজ়াইমের উৎসেচক হিসাবে কাজ করে। অ্যাসিড, গ্যাস, বদহজমের সমস্যা মোকাবিলা করতে পারে।
৩. বিপাকের হার বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে ফলে এটি ওজন কমাতে সহায়ক।
জিরে
নিরামিষ হোক বা আমিষ, মাংস হোক বা ধোঁকার ডালনা, ভারতীয় রান্নায় ফোড়ন হিসাবে জিরের গুরুত্ব অশেষ। শুধু জিরে আর আদাবাটা দিয়েই বহু রান্না হয়ে যায়, অন্য মশলার দরকার পড়ে না। সেই জিরের ঔষধি গুণও অনেক।
১. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে জিরে। ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্যও তা উপকারী।
২. হজমের সমস্যার ওষুধ হিসাবে জিরের ব্যবহার হয়ে আসছে যুগ যুগ ধরে। কারণ, জিরে অগ্ন্যাশয় থেকে হজমে সহায়ক এনজ়াইম ক্ষরণে সাহায্য করে।
৩. এ ছাড়া বিপাকের হার বৃদ্ধি করে ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে জিরে। ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী। আবার জিরে খেলে ঘুমও ভাল হয় বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক।
দারচিনি
অধিকাংশ ভারতীয় রান্নায় গরমমশলা লাগে। দারচিনি সেই গরমমশলারই গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কফির সঙ্গে দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে খাওয়া হয় বহু দেশে। আবার অনেক জায়গায় দারচিনি ব্যবহার করা হয় বেকিংয়ে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যের জন্যও দারচিনির উপকারী।
১. দারচিনিতে রয়েছে জোরালো অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট পলিফেনল এবং বিভিন্ন ধরনের ফ্ল্যাভোনয়েড। যা শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে মুক্ত করে। ফলে বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি কমে। লিভার, কিডনি, হার্ট সুস্থ থাকে।
২. দারচিনিতে থাকা সিনামালডিহাইড বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়াকে নষ্ট করতে পারে। ই কোলাই, সালমোনেল্লার মতো ব্যাক্টেরিয়া, আবার ক্যান্ডিডার মতো ছত্রাক (যা ত্বকে, গোপনাঙ্গের আশপাশে, মুখের ভিতরে এবং মাথার ত্বকে সংক্রমণের জন্য দায়ী)-ও ধ্বংস করতে পারে।
৩. স্নায়ুর স্বাস্থ্যের জন্যও ভাল দারচিনি। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এবং মেধা বৃদ্ধির জন্য সহায়ক।
ধনে
খাবারে স্বাদ বৃদ্ধিতে গোটা ধনের ভূমিকা কী, তা রাঁধুনি মাত্রেই জানেন। খাবারে মাখো মাখো ব্যাপার আনতে এর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু ধনের স্বাস্থ্যগুণ কী?
১. হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল ধনে। এতে ক্যালশিয়াম ছাড়াও অন্য নানা খনিজ রয়েছে। যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখে।
২. চিকিৎসক বলছেন, ধনের বীজে রয়েছে বর্নিওল এবং লিনালুল নামে দু’টি উপাদান। যা হজমের জন্য উপকারী। অন্ত্র স্বাস্থ্য ভাল রাখতেও সাহায্য করে। খাবার ভাঙতে সাহায্য করে ধনে। ফলে গ্যাস্ট্রিক, পেট ফাঁপার মতো সমস্যা দূরে থাকে।
৩. কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, ধনের বীজ কিছু ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সক্ষম। এ ছাড়া ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ধনে উপকারী। মুখের দুর্গন্ধ দূর করতেও সাহায্য করতে পারে ধনে।