প্রতীকী চিত্র। ছবি: এআই।
চেষ্টা করেও অনেক সময়ে অতিরিক্ত ওজন কমানো যায় না। ওজন যদি নিয়ন্ত্রণে থাকে, তা হলে সুগার, উচ্চ রক্তচাপ-সহ একাধিক সমস্যাকে কাবু করা সম্ভব। কিন্তু যাঁরা মোটা, তাঁদের ক্ষেত্রে ওজন না কমিয়েও কি রোগের ঝুঁকি কমানো সম্ভব? সম্প্রতি একটি নতুন গবেষণায় এই প্রসঙ্গে নতুন তথ্য প্রকাশ্যে এসেছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানতে চেয়েছিলেন, ওজন না কমলে সুষম আহার মানবদেহে রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে কি না। গবেষণাটি সম্প্রতি ‘ইউরোপিয়ান জার্নাল অফ প্রিভেন্টিভ কার্ডিয়োলজি’তে প্রকাশিত হয়েছে।
কী ভাবে করা হয়
গবেষকেরা অতীতের তিনটি পুষ্টি সংক্রান্ত পর্যবেক্ষণ থেকে তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রায় ৭৬১ জনকে ১৮ থেকে ২৪ মাস পর্যন্ত বিভিন্ন ডায়েটের মধ্যে রাখা হয়। কম ফ্যাট যুক্ত এবং কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত ডায়েট যেমন ছিল, তারই পাশাপাশি কেউ কেউ মেডিটেরিনিয়ান (এই ধরনের ডায়েটে দানাশস্য, ফাইবার এবং ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বেশি থাকে) ডায়েটও অনুসরণ করেন। পরীক্ষার জৈবিক সূচক হিসেবে শরীরে মেদের পরিমাণ, কোমরের মাপ, রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, ইনসুলিন এবং হরমোনের তারতম্যকে বিচার করা হয়।
কী জানা গিয়েছে
পরীক্ষালব্ধ ফলাফলকে মূলত তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়—
১) যাঁরা তাঁদের দেহের ৫ শতাংশের বেশি ওজন কমিয়েছেন। এই বিভাগে প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ ছিলেন।
২) যাঁরা তাঁদের দেহের ওজনের ৫ শতাংশ পর্যন্ত ওজন কমিয়েছেন। এই বিভাগেও প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ ছিলেন।
৩) যাঁদের ক্ষেত্রে ওজন কমেনি বা ওজন বৃদ্ধি পেয়েছে। এই বিভাগে ছিলেন প্রায় ২৮ শতাংশ মানুষ। এই বিভাগটিকে গবেষকেরা ‘ওয়েট লস রেজ়িস্ট্যান্স’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
গবেষকেরা জানতে পেরেছেন, যাঁদের ওজন কমেছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ট্রাইগ্লিসারাইড (১.৩৭ শতাংশ), ইনসুলিন (২.৪৬ শতাংশ), লেপটিন (২.৭৯ শতাংশ) এবং যকৃতের মেদ (০.৫ ইউনিট) কমেছে। পাশাপাশি দেহে এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা ১.৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
যাঁদের ওজন কমেনি
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। যাঁদের ওজন কমেনি, তাঁদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও গবেষকেরা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন। যাঁদের ওজন কমেনি, তাঁদের কারও ক্ষেত্রে পেটের মেদের অংশ কমেছে। আবার এইচডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে লেপটিনের পরিমাণ। কী ভাবে তা সম্ভব হয়েছে? গবেষক অ্যানাট ইয়াসকোল্কা মেইর বলেছেন, ‘‘আমরা জানতে পেরেছি, ওজন না কমলেও সুষম আহার রোগ দূর করতে কার্যকরী হতে পারে।’’ অর্থাৎ, ওজন না কমা মানেই ‘ব্যর্থতা’ নয়। মেইর আরও বলেছেন, ‘‘যাঁরা ওজন কমাতে পারছেন না, তাঁরা ডায়েটের মাধ্যমে মেটাবলিজ়মের উন্নতি ঘটিয়ে রোগের সুদূরপ্রসারী ঝুঁকি কমাতেই পারেন।’’
সীমাবদ্ধতা
এই গবেষণায় যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই ছিলেন পুরুষ। তাই অনেকের প্রশ্ন, নারীদের ক্ষেত্রে এই গবেষণার ফলাফল স্পষ্ট নয়। পাশাপাশি পুরুষ এবং মহিলারা দীর্ঘ সময় ধরে ডায়েট অনুসরণ করেছিলেন কি না, বা তাঁদের মধ্যে কারা শরীরচর্চা করেছিলেন, তা নিয়েও সুস্পষ্ট ধারণা এই গবেষণায় অধরা রয়েছে।
বাস্তবে কি সম্ভব
সাধারণত নিয়মিত সুষম আহার ওজন কমাতে সাহায্য করে। তবুও যাঁদের ক্ষেত্রে ওজন কমছে না, তাঁদের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর খাবার দেহের বিভিন্ন জৈবিক সূচককে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করছে। ফলে রোগের ঝুঁকি কমতে পারে। তবে ওজন কমানোর জন্য কোনও চিকিৎসক বা ফিটনেস এক্সপার্টের সঙ্গে পরামর্শ করা যেতে পারে।