‘ও নেগেটিভ’ রক্তের খোঁজ শুরু হয়েছে অহমদাবাদে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
সময় যত গড়াচ্ছে, ততই ‘ও নেগেটিভ’ রক্তের চাহিদা বেড়ে চলেছে। খোঁজ শুরু হয়েছে হাসপাতালে, ব্লাড ব্ল্যাঙ্কগুলিতে। মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন যে রোগীরা, তাঁদের বাঁচাতে পারে এই গ্রুপের রক্তই।
গুজরাতের অহমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরুর পাঁচ মিনিট পরেই ভেঙে পড়েছে লন্ডনগামী বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমানটি। অসামরিক বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (ডিজিসিএ) জানিয়েছে, বিমানটিতে ২৪২ জন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২৩০ জন যাত্রী এবং ১২ জন বিমানকর্মী। এক জন ছাড়া সকল আরোহীই নিহত দুর্ঘটনায়। অন্য দিকে, বিমানটি যে বহুতলে ভেঙে পড়েছে, সেটি ছিল বিজে মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক-পড়ুয়াদের হস্টেল। সেখানেও মৃত্যু হয়েছে অনেকের। অহমদাবাদ পুলিশ সূত্রে খবর, এখনও অবধি দু’শোর বেশি দেহ উদ্ধার হয়েছে। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালগুলিতে ভর্তি অন্তত ৫০ জন। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে। সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় যাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তাঁদের প্রাথমিক ভাবে ‘ও নেগেটিভ’ রক্ত দিয়েই স্থিতিশীল অবস্থায় নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে। সে কারণে এই রক্তের গ্রুপের চাহিদা এখন খুবই বেশি।
কেন ‘ও নেগেটিভ’ রক্তের খোঁজ বাড়ছে?
রক্তের চারটি গ্রুপ— এ, বি, এবি এবং ও। এর মধ্যে ‘ও’ গ্রুপের রক্তকে বলা হয় সার্বজনীন দাতা। তবে আপৎকালীন সময়ে খুব দ্রুত কাউকে রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হলে ‘ও নেগেটিভ’ রক্তই দেওয়া হয়। দুর্ঘটনায় রক্তাক্ত, অঙ্গহানি হয়েছে অথবা আগুনে পুড়ে দগ্ধ এমন রোগী, যাঁর রক্তের গ্রুপ জানা নেই, পরীক্ষা করে তা দেখার সময়ও নেই, সেই সব রোগীকে স্থিতিশীল অবস্থায় আনতে হলে ‘ও নেগেটিভ’ রক্তই নিশ্চিন্তে দেওয়া যায়। কারণ, এই গ্রুপের রক্তই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ। রোগীর রক্তের গ্রুপ যা-ই হোক না কেন, এই গ্রুপের রক্ত দিলে তাঁর কোনও ক্ষতি হবে না।
রক্তের গ্রুপ পজিটিভ হবে না কি নেগেটিভ, তা নির্ভর করে লোহিত রক্তকণিকায় প্রোটিনের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি। রক্তকণিকায় প্রোটিনের উপস্থিতি থাকলে রক্তের গ্রুপ হবে পজিটিভ। আর রক্তে প্রোটিন না থাকলে রক্তের গ্রুপ হবে নেগেটিভ। রক্ত দেওয়ার সময়ে কাকে কোন গ্রুপের রক্ত দেওয়া হবে, তা নির্ভর করে রক্তে উপস্থিত এই প্রোটিন ও অ্যান্টিজেনের উপরে। এ গ্রুপের রক্তে থাকে ‘এ’ অ্যান্টিজেন, বি গ্রুপের রক্তে থাকে ‘বি’ অ্যান্টিজেন, এবি গ্রুপের রক্তে থাকে ‘এ’ ও ‘বি’ অ্যান্টিজেন, ও গ্রুপের রক্তে কোনও অ্যান্টিজেন থাকে না। যদি রক্তের গ্রুপ না জেনে, যে কোনও গ্রুপের রক্ত দিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে সেই গ্রুপের অ্যান্টিজেন গ্রহীতার রক্তের গ্রুপের অ্যান্টিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অ্যান্টিবডি তৈরি করে ফেলবে, যাতে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়বে।
এই বিষয়ে মেডিসিনের চিকিৎসক রণবীর ভৌমিক বললেন, “ও নেগেটিভ গ্রুপের রক্তে এ, বি (এবিও সিস্টেম) এবং আরএইচডডি (আরএইচ সিস্টেম) অ্যান্টিজেন নেই। এই অ্যান্টিজেনগুলিই শরীরে ঢুকে গ্রহীতার রক্তে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। যেহেতু ও নেগেটিভ গ্রুপে অ্যান্টিজেন নেই, তাই এই রক্ত শরীরে গেলে অ্যান্টিবডি তৈরি করবে না। ফলে গ্রহীতার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার বা কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না। যে কোনও রক্তের গ্রুপের গ্রহীতাকেই ‘ও নেগেটিভ’ রক্ত দেওয়া নিরাপদ। ”
‘ও নেগেটিভ’ রক্তের গ্রুপের চাহিদা যে কোনও দুর্ঘটনা বা আপৎকালীন অবস্থায় বেশি প্রয়োজন হয় বলেই জানালেন চিকিৎসক। তবে এই গ্রুপের রক্ত খুব কম জনেরই আছে। দেশের জনসংখ্যার মাত্রা ৭ শতাংশের রয়েছে ‘ও নেগেটিভ’ গ্রুপের রক্ত। তাই এর চাহিদা বেশি। অহমদাবাদের দুর্ঘটনায় জখমদের প্রত্যেকের রক্ত পরীক্ষা করার মতো সময় চিকিৎসকদের কাছে নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব রোগীদের প্রাণ বাঁচাতে এখন এই রক্তই প্রয়োজন হবে।