ছবি : সংগৃহীত।
দুপুরের ভাত হোক বা রাতের রুটি-পরোটা— খাবার খেয়ে ওঠার পরেই একটু মিষ্টির জন্য ছোঁকছোঁক করে মন! খুঁজলে যে কোনও বাড়িতেই অন্তত এমন এক জনকে খুঁজে পাওয়া যাবে। যাঁঁরা খাওয়ার পরেই কিছু না কিছু মিষ্টি খাওয়ার জন্য আকুলিবিকুলি করেন। হয় ফ্রিজে রাখা চকোলেটের এক টুকরো ভেঙে খেলেন। নয়তো মিষ্টির বাক্স থেকে বার করে নিলেন একটি সন্দেশ বা একখানি পান্তুয়া-গুলাবজামুন। কিছু না পেলে চায়ের জন্য রাখা গুঁড়ো দুধ খেতেও দেখা যায় অনেককে। কিংবা সামান্য চিনি বা একখানি প্রসাদী নকুলদানা, বাতাসা, শীতকাল হলে পাটালি গুড়ের টুকরো, এমনকি, মিষ্টি স্বাদের চাহিদা মেটাতে খাবার খাওয়ার পরে বেশি চিনি দিয়ে চা-ও খান কেউ কেউ!
মোট কথা, সে খাবার বা পানীয়ের স্বাদ মিষ্টি হওয়া চাই। খাওয়ার পরে সেই মিষ্টি খেয়ে তবেই মনের শান্তি, প্রাণের আরাম! কিন্তু এই ‘অস্বাভাবিক’ মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কেন হয়, তা কখনও ভেবে দেখেছেন কি? তারকা পুষ্টিবিদ রুজুতা দ্বিবেকর বলছেন, ‘‘এর রহস্য লুকিয়ে আছে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যভ্যাসে। সারা দিনে কে কী খাচ্ছেন এবং কী খাচ্ছেন না, তার উপরেই নির্ভর করছে সবটা। তাই চাইলে এই মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে নিয়ন্ত্রণ করাও সম্ভব।’’
কেন খাওয়ার পরে মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে?
১। হজমের জন্য শক্তি আহরণ: খাবার খাওয়ার পরে তা হজম করার জন্য শক্তির প্রয়োজন হয়। এক পডকাস্টে এ ব্যাপার কথা বলতে গিয়ে পুষ্টিবিদ অঞ্জু সুদ বলছেন, ‘‘প্রতি বার খাওয়ার পরে শরীর খাবার হজম করার জন্য কিছু বাড়তি শক্তি চায়। যা চিনি বা যে কোনও মিষ্টি জাতীয় খাবার থেকে সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া যায়।’’
২। রক্তে শর্করার ভারসাম্য নষ্ট হওয়া: খাবারে যদি প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন, খনিজ এবং শর্করার ভারসাম্য না থাকে, তা হলেও এমন হতে পারে। অর্থাৎ থালায় যদি শর্করা জাতীয় খাবারই থাকে বেশি এবং তাতে যথেষ্ট ফাইবার এবং প্রোটিন যদি না থাকে, তবে রক্তে শর্করার মাত্রা আচমকা বেড়ে যেতে পারে। আর ওই ধরনের ব্লাড সুগার স্পাইকের কারণেও মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হতে পারে বলে জানাচ্ছেন রুজুতা।
৩। মস্তিষ্কেরও ভূমিকা আছে: মিষ্টি খেলে শরীরে খুশির হরমোন যেমন সেরোটোনিন এবং ডোপামিন নিঃসৃত হয়। যা মন ভাল করে দেয়। কারও যদি নিয়মিত খাওয়ার পরে মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস থাকে, তবে মস্তিষ্কই খাবার খাওয়ার পরে মিষ্টি খাওয়ার কথা মনে করিয়ে দেবে। চাইবে, ওই সময়ে শরীর তার প্রাপ্য সুখী হরমোনের ভাগ পাক।
কী ভাবে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছেয় রাশ টানবেন?
১। থালায় নানা রকম ভিটামিন, খনিজ, প্রোটিন এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। যেমন এক কাপ ভাতের সঙ্গে, অনেকটা সব্জি, ডাল, মাছ-ডিম-মাংসের কোনও একটি রাখুন। এতে শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি পাবে। তাতে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে কমবে বলে জানাচ্ছেন পুষ্টিবিদ অঞ্জু।
২। বেশি করে জল খান। তেষ্টাকেও অনেকে খিদে ভেবে গুলিয়ে ফেলেন। আর্দ্রতার অভাবে আসা ক্লান্তিবোধ কাটাতে প্রথম মিষ্টি খেতেই ইচ্ছে হয়।
৩। সারা দিনে এক বার মিষ্টি খাবার খেতেই পারেন, তবে স্বাস্থ্যকর মিষ্টি বেছে নিন যেমন গুড় বাদাম, চিনি ছাড়া অল্প গুড় দিয়ে তৈরি সুজির হালুয়া বা গাজরের হালুয়া, চিনি না ব্যবহার করে মধু দিয়ে তৈরি মিষ্টি স্বাদের খাবার বা খেজুর দিয়ে মিষ্টি স্বাদ আনা খাবার খেলে, তা স্বাস্থ্য়ের জন্য ততটা ক্ষতিকর হবে না বলছেন রুজুতা।
৪। সন্দেশ-রসগোল্লা-পেস্ট্রির বদলে মিষ্টি স্বাদের একটি ফল, পরিমিত খেজুর বা ডার্ক চকোলেট খেতে বলছেন পুষ্টিবিদ রুজুতা।
,৫। খাবার খাওয়ার পরে মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে হলেও অন্তত ১০ মিনিট অপেক্ষা করুন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ইচ্ছেটা আর ততটা জোরালো থাকে না তখন।