শাঁখ বাজালে ঘুমের সমস্যা দূর হবে? ছবি: এআই।
তুলসীতলায় সন্ধ্যাবাতি দিয়ে শাঁখ বাজানোর রীতি হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িত। সময়ের বদলে, জায়গার অভাবে ব্যস্ত শহরের বেশির ভাগ বাড়িতে তুলসিমঞ্চ না থাকলেও সকাল-সন্ধ্যায় পুজোর সময়ে শাঁখ বাজানোর রীতিটুকু আজও আছে। পুজো বা কোনও শুভ অনুষ্ঠান, শঙ্খধ্বনি ছাড়া তা সম্পূর্ণ হয় না। প্রাচীন এই রীতি যে শুধু আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে সংযুক্ত তা কিন্তু নয়, স্বাস্থ্যের দিক থেকেও এর অনেক উপকারিতাই আছে। শাঁখে ফুঁ দিলে দূর হতে পারে হাজারো রোগ, এমনই দাবি গবেষকদের। সম্প্রতি জয়পুরের ইটারনাল হার্ট কেয়ার সেন্টার অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের গবেষকেরা দাবি করেছেন, শাঁখ বাজালে অনিদ্রার সমস্যা দূর হতে পারে। শুধু তা-ই নয়, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ থেকে রেহাই দিতে পারে শঙ্খধ্বনি।
কী ভাবে তা সম্ভব?
‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’ এখন বিশ্ব জুড়েই মাথাব্যথার কারণ। ঘুমের সময়ে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের পথ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ঘুমের মধ্যেই শ্বাসকষ্ট হয়। নাক ডাকার সমস্যা বাড়ে। সকালে উঠে মাথার যন্ত্রণা, দিনের বেলা ঘুম পাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। সময় মতো চিকিৎসা না করালে এর ফলে হার্টের সমস্যা, হাইপারটেনশন দেখা দিতে পারে। এই সমস্যার কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’-র সমস্যা থেকে রেহাই পেতে জীবনযাপনে বদল আনার কথাই বলেন চিকিৎসকেরা। স্থূলত্ব কমানো, সুষম ডায়েট ও শরীরচর্চা করারই পরামর্শ দেওয়া হয়।
গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ঘুমের সমস্যা হোক বা ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’, তা দূর হতে পারে নিয়মিত শাঁখ বাজালে। এর কারণও আছে। শাঁখ বাজানোকে একধরনের প্রাণায়াম বলেই মনে করা হয়। শঙ্খ বাজাতে গেলে গভীর ভাবে শ্বাস নিতে হয়। সেই শ্বাস দীর্ঘ ক্ষণ ধরে ছাড়তেও হয়। এতে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। শ্বাসযন্ত্রের ব্যয়াম হয়। নিয়মিত শাঁখ বাজালে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার ঠিক থাকে, শ্বাসকষ্টে সমস্যাও কমে। শাঁখ বাজানোর ফলে যে কম্পন উৎপন্ন হয়, তা মস্তিষ্কেও পৌঁছয়। শাঁখ বাজালে মন শান্ত হয়, কখনও কখনও উদ্বেগও কমে। স্নায়ুতন্ত্রের উপর এর বড় প্রভাব পড়ে। স্নায়ুর কার্যকারিতা বাড়ে। মনের দুশ্চিন্তা কমে এবং ঘুম ভাল হয়।
শাঁখ বাজানোর এই সুফল প্রমাণ করার জন্য ৩০ জন স্লিপ অ্যাপনিয়ার রোগীকে শাঁখ বাজানোর প্রশিক্ষণ দেন গবেষকেরা। তাঁদের মধ্যে ১৬ জনকে রোজ দু’বেলা শাঁখ বাজাতে বলা হয়, আর বাকিদের শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যায়াম করতে বলা হয়। দেখা যায়, যাঁরা দু’বেলা শাঁখ বাজিয়েছিলেন, ৬ মাস পরে তাঁদের ঘুমের সমস্যা ও নাক ডাকার সমস্যা উধাও হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, শরীরের ক্লান্তি ভাবও কমেছে, রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে শাঁখ বাজালেই যে স্লিপ অ্যাপনিয়া সেরে যাবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। গবেষণা চলছে। আরও বহু জনের উপর পরীক্ষা করেই নিশ্চিত তথ্য দিতে পারবেন গবেষকেরা।