ডায়াবিটিস হলেও নারকেল খাওয়া চলে? কী মত পুষ্টিবিদেদের? ছবি: আনন্দবাজার ডট কম
নারকেল ভালবাসতেন ভীষণ। কিন্তু ডায়াবিটিস ধরা পড়তেই অন্য অনেক কিছুর সঙ্গে সেই লোভও ত্যাগ করেছেন। ডায়াবিটিস হলে না কি আম, লিচুর মতো ফল বা নারকেল— এমন অনেক কিছুই খাওয়া চলে না, এই ধারণা মনে তৈরি হয়েছে, বা লোকে বলেন, তা কি সবটাই ঠিক? নারকেলের নরম শাঁস খেলেই কি দুম করে রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়?
সমাজমাধ্যম প্রভাবী করণ সারিন ভারতীয় খাবার খেয়ে শরীরে, বিপাকহারে তার কী প্রভাব পড়ছে সে বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। সমাজমাধ্যমে তাঁর অনুগামীর সংখ্যাও কম নয়। সেই করণই নারকেলের সুস্বাদু নরম শাঁস খেলে শরীরে কী প্রভাব হয়, রক্তে আচমকা শর্করার মাত্রা বেড়ে যায় কি না, তা নিয়ে নিজের মতো পরীক্ষা করেন।
৫০ গ্রাম নারকেল খাওয়ার পর গ্লুকোজ মনিটরিংয়ের সাহায্য নেন তিনি। ক্রমাগত দু’ঘণ্টা ধরে পরীক্ষা করার পর দেখেন, সেই অর্থে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়েনি। এই তথ্য তিনি ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে জানান অনুরাগীদের।
সমাজমাধ্যম প্রভাবী যে পরীক্ষা করেছেন তা কি যুক্তিযুক্ত? রক্তে শর্করার মাত্রা যে খাবার খেলে চট করে বাড়ে না, সেই খাবার খেতে তো ডায়াবেটিকদের সমস্যা থাকার কথা নয়। তবে কি, সুস্বাদু ফলটি নির্দ্বিধায় খেতে পারেন তাঁরাও? পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘ডায়াবিটিস হলেও নারকেল খাওয়া চলে। তা মোটেই ক্ষতিকর নয়। তবে তা যথেচ্ছ নয়। মাপ বুঝে খেলে কোনও অসুবিধাই নেই।’’
১০০ গ্রাম নারকেলের পুষ্টিগুণ
১০০ গ্রাম নারকেলে ৩৫০ থেকে ৩৭০ ক্যালোরি মেলে। কার্বোহাইড্রেট থাকে ১৫ গ্রাম, ডায়েটরি ফাইবার মেলে ৯ গ্রাম, ফ্যাট ৩৩ গ্রাম, প্রোটিন ৩ গ্রাম।
কেন চট করে শর্করার মাত্রা বাড়ে না এতে?
নারকেলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স হল এক ধরনের স্কেল, যা কোনও খাবার খাওয়ার পরে রক্তে শর্করার মাত্রা কত কমছে বা বাড়ছে, তা নির্ধারণ করে। শম্পা জানাচ্ছেন, নারকেলের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫১। ৫৫-এর নীচের যে কোনও খাবারকে ‘লো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ বলি চিহ্নিত করা হয়। ঠিক সে কারণেই ডায়াবেটিকেরা নারকেল খেতে পারেন।
প়ঞ্জাবের পুষ্টিবিদ গরিমা গয়াল। সমাজমাধ্যমে তিনি যথেষ্ট পরিচিত। গরিমা জানাচ্ছেন, নারকেলের স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং ফাইবারের জন্যই এটি খেলেও চট করে রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়তে পারে না। নারকেলে ফাইবারের কারণে কার্বোহাইড্রেট শোষণে সময় লাগে এবং বেশ ধীরে গ্লুকোজ বা শর্করা উৎপন্ন হয়। এতে থাকে ‘মিডিয়াম চেন ট্রাইগ্লিসারাইড’। যার ফলে ইনসুলিন ছাড়াই বিপাকহারের জন্য প্রয়োজনীয় শক্তি খাবার থেকে পাওয়া যায়।
কী ভাবে, কতটা খাওয়া যাবে?
ডায়াবেটিকদের জন্য সেই ফল ভাল, যাতে কার্বোহাইড্রেট এবং গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা কম থাকে। এ দিক থেকে নারকেলও খুব উপকারী। তবে শম্পা বলছেন, ‘‘নারকেলের ক্যালোরি যথেষ্ট। সে কারণে অন্য ফলের চেয়ে এটি কম পরিমাণে খাওয়া দরকার। একজন ডায়াবিটিসের রোগী যেমন ১০০ গ্রাম আপেল খেয়ে নিতে পারেন, তিনি কিন্তু ১০০ গ্রাম নারকেল খেতে পারবেন না বা তাঁর পক্ষে খাওয়া ঠিক হবে না। ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে দিনে ৩০ গ্রামের মতো খাওয়া যেতে পারে।’’