ছবি: সংগৃহীত।
তাঁর গানের ছন্দ বহু আগেই এসে পৌঁছেছিল মার্কিন মুলুক থেকে ভারতে। তবে তাঁকে এ দেশের মানুষ ভাল ভাবে চিনল গত বছর। যখন তিনি বন্ধু অরিজিৎ সিংহের বাড়ি, বাংলার মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জে এসে রাস্তায় বেড়াতে বেরিয়ে হইচই ফেলে দিলেন। সেই থেকে মার্কিন পপ তারকা এড শিরান খানিক ঘরের ছেলে হয়ে উঠেছেন। তাঁর নানা খবরাখবর এ দেশের মানুষেরও নজর কাড়ে। সম্প্রতি সেই তিনিই নিজের স্বাস্থ্যোদ্ধারের সফরের কাহিনি শুনিয়েছেন। এড জানিয়েছেন, ধূমপান ছাড়ার পরে তাঁর জীবন বদলে গেছে। নিজের ওজন ২০ কেজি ঝরিয়ে ফেলেছেন । আর এড মনে করেন তাঁর জীবনে সেরা চেহারাটি এখনই পেয়েছেন তিনি।
জিয়াগঞ্জের রাস্তায় অরিজিৎ সিংহের সঙ্গে এড শিরানের বাইক ভ্রমণ।
স্থূলত্ব যেখানে আমেরিকার মতোই ধীরে ধীরে ভারতেরও স্বাস্থ্য়ক্ষেত্রের মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেখানে এডের কথায় আশা দেখেছেন অনেকেই। তাই তাঁর ওই বার্তা ছড়িয়েছে। এড সবিস্তার বলেছেন, কী ভাবে ধূমপান ছাড়ার ফলে ওজন কমানোর বিষয়টা অনেক সহজ হয়ে গিয়েছে তাঁর কাছে।
ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর— এই সতর্কবার্তা জেনে এবং বুঝেই সিগারেটে আসক্ত এ দেশের বহু মানুষ। সৃষ্টিশীল পেশার সঙ্গে জড়িতরা এ নেশায় আরও বেশি করে ডুবে থাকেন বলেও অনেকে জানেন। এড নিজেও জানিয়েছেন, তিনি চেন স্মোকার ছিলেন। তবে ক্রমশই বুঝতে পারছিলেন, তাঁর শরীরটা ক্রমশ ভারী হয়ে যাচ্ছে। তিনি দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। নিজেকে সুস্থ করতেই ২০১৯ সালে একটি সিদ্ধান্ত নেন এড। ঠিক করেন ধূমপান ছেড়ে দেবেন। এক সাক্ষাৎকারে এড বলেছেন, ‘‘ফুসফুস পরিষ্কার রাখতে হবে, এই ভাবনা থেকে সিগারেট ছেড়েছিলাম। আর ওই একটা সিদ্ধান্তই আমার জীবন বদলে দিতে শুরু করল।’’
তিনি তাঁর জীবনের সেরা চেহারাটি পেয়েছেন এখন, বলছেন এড শিরান।
এড জানিয়েছেন, ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অনেক দিন ধরেই শরীরচর্চা করার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু নিজেকে সেই নিয়মে বাঁধতে পারছিলেন না। সিগারেট ছাড়ার পর থেকে নিয়মিত শরীরচর্চা করার রুটিন বজায় রাখা অনেক সহজ হয়ে উঠল। এড বলছেন, ‘‘সিগারেট খাওয়ার ইচ্ছে হলে আমি দৌড়তে চলে যেতাম। ফুসফুস পরিচ্ছন্ন করার সফরে নেমেছিলাম। আর তাজা হাওয়ার থেকে ভাল বিকল্প কী হতে পারত!’’
শরীরে বদল আসছিল। সেই পরিবর্তন অনুভব করতে পারছিলেন এড। ক্রমশই ফিটনেসের প্রতি আকৃষ্ট হতে শুরু করলেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলছেন, ‘‘ধীরে ধীরে আমার অন্য অভ্যাসগুলোও বদলাতে শুরু করল।’’
বাকি তারকাদের মতো জিমে যাওয়া বা ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক নিয়ে শরীরচর্চা কোনওদিনই করেননি এড। তিনি বলছেন, ‘‘আমার ওই দৌড়নোটাই ভাল লাগত। অনেক মুক্ত, স্বাধীন লাগত নিজেকে।’’
ধীরে ধীরে খাওয়া দাওয়ার অভ্যাসও বদলাতে শুরু করল। এড জানাচ্ছেন, একটা সময়ে রুটিন মেনে খাওয়া দাওয়া করতেন না। যখন যেমন ইচ্ছে হত খেতেন। কখনও সখনও বেশি খাওয়াও হয়ে যেত। কিন্তু দৌড়নো শুরু করার পরে সেই অভ্যাসও বদলাল। এডের কথায়, ‘‘বাইরের খাবার ছাড়া খেতাম না। আর এখন বাইরের খাবার খেতে ইচ্ছে করে না। যেটুকু খাই বাড়িতে বানানো খাবার খাই।’’ তা বলে প্রিয় খাবারও বন্ধ? নাহ। এড বলছেন, ‘‘ইচ্ছে হলে কখনও সখনও প্রিয় খাবার খাই না তা নয়। তবে খেলে তার পরের দিন বেশি দৌড়ই আরও বেশি করে শরীরচর্চা করি। কাউকে বলতে হয় না। নিজে থেকেই এটা করি।’’
এড মনে করেন তাঁর এখন যা চেহারা তা তাঁর ৩৪ বছরের জীবনে সেরা চেহারা। আর এই প্রাপ্তির পুরো কৃতিত্বই তিনি দিতে চান ওই একটি সিদ্ধান্তকে। যে দিন তিনি ঠিক করেছিলেন সিগারেট আর খাবেন না।