Air India Plane Crash

দুর্ঘটনার পরে বিমানে উঠতে ভয়! আতঙ্কে দুর্বিষহ হচ্ছে জীবন, বেরিয়ে আসার পথ দেখালেন মনোবিদেরা

ভয়, আশঙ্কা থেকে মানুষের জীবনে একটা ক্ষণিকের পরিবর্তন আসে। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বিমান-আতঙ্ক চেপে বসেছে বহু জনের মনে। এমন অনেকেই রয়েছেন, যাঁরা দুর্ঘটনার পরে বিমানের টিকিট বাতিল করছেন।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৫ ১৫:৪৮
Share:

কেন দুর্ঘটনার স্মৃতি তাড়া করছে, অজানা আতঙ্ক চেপে বসছে মনে? গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

‘ট্রমা’ শব্দটির আয়তন ছোট হলেও, এর অভিঘাত ঠিক ততটাই বড়। জীবনে নানা রকম ঘটনা ঘটে। কোনওটি খুব আনন্দের, কোনওটির স্মৃতি আবার বিপন্নতার, বিভীষিকার। তার সঙ্গে যদি জড়িয়ে থাকে মৃত্যু, হাহাকার, তা হলে এর রেশ থেকে যায় বহু দিন। ভয় তৈরি হয় মনে। ঠিক যেমনটা হয়েছে অহমদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান দুর্ঘটনার পরে। ভয়, আশঙ্কা থেকে মানুষের জীবনে একটা ক্ষণিকের পরিবর্তন আসে। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। বিমান-আতঙ্ক চেপে বসেছে বহু জনের মনে। অনেকেই দুর্ঘটনার পরে বিমানের টিকিট বাতিল করছেন। কেউ আকাশে বিমান উড়তে দেখলে ভয় পাচ্ছেন, যদি সেটিও ভেঙে পড়ে মাথার উপর! কেন এই ভয়? এর থেকে উত্তরণের উপায় কী?

Advertisement

বহুজাতিক সংস্থার কর্মী মিতালি বিশ্বাস। কর্মসূত্রে বিমানে চড়ে প্রায়ই যাতায়াত করতে হয়। মাঝেমধ্যে নিজের মেয়েকেও নিয়ে যান বিদেশ ভ্রমণে। অহমদাবাদের দুর্ঘটনার পরে, তিনিও বিমানে উঠতে ভয় পাচ্ছেন। মেয়েকে নিয়ে তো কিছুতেই উঠতে রাজি নন। অজানা ভয়ের কারণে অফিসের প্রজেক্টও হাতে নিচ্ছেন না, যদি বাইরে যেতে হয়। মিতালি একা নন, অপ্রীতিকর এই ঘটনার স্মৃতি মনে গেঁথে গিয়েছে অনেকেরই। বার বার দুঃস্বপ্নের মতো তা ফিরে ফিরে আসছে। এর নেপথ্যে ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা যেমন কারণ, তেমনই আরও একটি কারণ হল সেই খবরটিকে বার বার পড়া ও খবরটি নিয়ে আলোচনা করা। এমনটাই মত মনোবিদ অনসূয়া ঘোষের। প্রায় সারা দিনই সমাজমাধ্যমে বা টিভির পর্দায় চোখ রাখা থেকে রাত জেগে দুর্ঘটনার খবর পড়া, চোখের সামনে বিমান দুর্ঘটনার দৃশ্য ‘লাইভ’ দেখা উদ্বেগ বহু গুণে বাড়িয়ে দিতে পারে। এর থেকে রেহাই পেতে হলে দু’টি কাজ করতে হবে— ১) দুর্ঘটনা সম্পর্কিত কোনও খবর পড়া ও দেখা বন্ধ করতে হবে, ২) ট্রমা মনের মধ্যে চেপে না রেখে পেশাদার কারও সঙ্গে তা ভাগ করে নিলেই ভাল। না হলে যে বিষয়টি নিয়ে ভয় হচ্ছে, তার মুখোমুখি হতে হবে। বিমানে চড়তে যিনি ভয় পাচ্ছেন, তিনি সাহস করে চেপেই দেখুন। মনকে বোঝাতে হবে, দুর্ঘটনা বার বার ঘটবে না। সুরক্ষিত ভাবে গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়ার পরে ‘ট্রমা’ অনেক কমে যাবে।

আকস্মিক যে দুর্ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তার স্মৃতির পুনরাবৃত্তি হয়। মন আগে থেকে তার কোনও প্রস্তুতি পায়নি। সবই ঠিক ছিল। হঠাৎ এমন কিছু হয়ে গেল, যে তার আকস্মিকতায় বিহ্বল হয়ে যেতে হয়। এর থেকে যে ভয় বা উদ্বেগ হয়, তাকে বলে ‘পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডার’ (পিটিএসডি)। বেশির ভাগ মানুষই এই মানসিক টানাপড়েনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন বলেই জানালেন মনোরোগ চিকিৎসক কেদাররঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ট্রেন দুর্ঘটনার পরে, সুনামি আসার পরে বা তেমনই কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পরে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজ়অর্ডারে ভোগেন অনেকে। এটা তাঁদেরই হয়, যাঁরা সেই সময়ে দুর্ঘটনাস্থলে ছিলেন, নিজেরা ভুক্তভোগী বা বার বার সেই খবর নিয়ে চর্চা করছেন। টানা এক মাসের বেশি এমন ভয় মনে চেপে বসে থাকলে, চিকিৎসকের কাছে যাওয়া খুব জরুরি।”

Advertisement

পিটিএসডি-র নানা ধরন

পিটিএসডি-র ক্ষেত্রে নানা রকম লক্ষণ দেখা দেয়। কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার প্রভাব সকলের উপরেই পড়ে। এক মাসের মধ্যে সেটা সাধারণত কেটে যায়। কিন্তু কারও যদি এই ধরনের লক্ষণগুলি এক মাসের বেশি সময় ধরে হতে থাকে এবং সেগুলি তাঁর স্বাভাবিক জীবনযাপনকে ব্যাহত করে, তা হলে বুঝতে হবে সমস্যা গুরুতর। তখন সেটি রোগের পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে।

বার বার দুর্ঘটনার স্মৃতি ফিরে এলে, যদি মনে হয় চোখের সামনেই ঘটনাটি আবার ঘটতে পারে, হৃৎস্পন্দনের হার বেড়ে যায়, হাত-পা ঘামতে থাকে, তা হলে সেটি ‘রিএক্সপিরিয়েন্সিং সিম্পটম’।

আরও একটি ধরন আছে, যার নাম ‘অ্যারাউজ়াল অ্যান্ড রিঅ্যাক্টিভিটি সিম্পটম’। এ ক্ষেত্রে ঘুমোতে, খেতে, মনঃসংযোগ করতে কিংবা সাধারণ কাজকর্মেও অসুবিধে হয়। হঠাৎ করে চমকে উঠবেন রোগী, ঘুমোতে পারবেন না অথবা আকস্মিক রাগে ফেটে পড়বেন।

‘কগনিশন অ্যান্ড মুড সিম্পটম’ আরও একটি লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে নিজের প্রতি এঁরা ভ্রান্ত ও নেতিবাচক ধারণা হতে শুরু করেন। তাঁরা মনে করেন, জীবনে কিছুই ভাল হবে না। সব খারাপ তাঁর সঙ্গেই ঘটবে। এই ভাবনা থেকেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলেন অনেকে, একাকিত্বে ভুগতে শুরু করেন। পছন্দের কাজ করার আগ্রহও হারিয়ে ফেলেন।

মনের এই ধরনের সমস্যার সমাধান হতে পারে ওষুধ ও সাইকোথেরাপিতে। সাইকোথেরাপির ক্ষেত্রে সাধারণত কগনিটিভ বিহেভিয়র থেরাপি (সিবিটি) করা হয়। রোগীর ‘কগনিটিভ রিস্ট্রাকচারিং’ করা হয়। অর্থাৎ, রোগীর যে চিন্তাভাবনাগুলি অবিন্যস্ত হয়ে গিয়েছে সেগুলিকে যুক্তি দিয়ে গুছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন মনোবিদ। অনেক ক্ষেত্রে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট কিংবা অ্যান্টি-অ্যাংজ়াইটির ওষুধও খেতে হয়। যেহেতু প্রত্যেক মানুষের মন আলাদা, তাই পিটিএসডি সকলের ক্ষেত্রে একই রকম প্রভাব ফেলবে না। ফলে সকলের ক্ষেত্রে চিকিৎসাও এক রকম হবে না।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement