শীতে অ্যালার্জি বাড়ে ছোটদের, মা-বাবারা জেনে নিন কী করণীয়? ছবি: ফ্রিপিক।
লালচে র্যাশ, ফুস্কুড়িতে ভরে গিয়েছে ত্বক। সেখানে চুলকানিও হচ্ছে। কিছু ক্ষণ পর পরই হেঁচে চলেছে শিশু। কথা বলতেও সমস্যা হচ্ছে তার। এমন রোগের নাম অ্যালার্জি। শীতের সময়ে যা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট তো বটেই, সঙ্গে ত্বকে র্যাশ, ফুস্কুড়ির সমস্যাও দেখা দেয়। দেশের ‘অ্যাজমা অ্যান্ড অ্যালার্জি ফাউন্ডেশন’-এর রিপোর্ট বলছে, ২০১১ সালের পর থেকে বিশ্ব জুড়ে শিশুদের মধ্যে অ্যালার্জি সংক্রান্ত নানা সমস্যা বেড়ে গিয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ। এর নেপথ্যে যেমন রয়েছে দূষণ, তেমনই ঘরের ভিতরের পরিবেশও অ্যালার্জির সমস্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে। শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিই হচ্ছে না।
কী ধরনের অ্যালার্জি থেকে সতর্ক হবেন?
অ্যালার্জির রকমফের রয়েছে। মূলত দুই ধরনের অ্যালার্জির সন্ধান দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। একটি অ্যালার্জির উৎস ঘরের ভিতরেই রয়েছে, অন্যটি বাইরে। সারা বছরই ঘরে জমা ধুলো, কোনও বিশেষ খাবার, ঘরের ভিতরে ধূমপান করলে বা পোকামাকড়ের কারণে অ্যালার্জি আক্রান্ত হতে পারে শিশু। তার প্রিয় পোষ্যের লোম থেকেও ছড়াতে পারে অ্যালার্জি। বাতাসে ভাসমান ফুলের রেণু, ধূলিকণা থেকেও অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
শীতের সময়ে যে ধরনের অ্যালার্জি বেশি হয়, তার নাম ‘অ্যালার্জিক রাইনাইটিস’। মাথা ব্যথা, হাঁচি ও সর্দির সমস্যা যদি লেগেই থাকে, হাঁচি থামতে না চায়, সেই সঙ্গে নাক দিয়ে অনবরত জল পড়া, চোখ জ্বালা, চোখ থেকে জল পড়া, চোখের চারপাশে চুলকানি রাইনাইটিসের লক্ষণ।
এগ্জ়িমার মতো চর্মরোগও দেখা দেয় এই সময়ে। শিশুর ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে গিয়ে র্যাশ বেরোতে থাকলে সাবধান হতে হবে মা-বাবাকে। অনেক সময়েই দেখা যায়, কোনও খাবার বা ধাতব জিনিস থেকে অ্যালার্জি হচ্ছে শিশুর। কিন্তু যদি দেখা যায়, ত্বক সব সময়েই শুষ্ক হয়ে মাছের আঁশের মতো খসখসে হয়ে যাচ্ছে বা ত্বকে লালচে র্যাশ বেরোচ্ছে, তা হলে বুঝতে হবে ত্বকেরই কোনও অসুখ বাসা বেঁধেছে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস’। দু’বছর বা তার কম বয়সি শিশুদের ত্বকের এই সমস্যা বেশি হয়। পাঁচ বছর অবধি এটি ভোগাতে পারে।
মা-বাবাদের জন্য কিছু পরামর্শ
শিশুকে সব সময়ে হালকা সুতির পোশাক পরান। সিন্থেটিক জাতীয় পোশাক পরাবেন না। উল থেকেও অ্যালার্জি হচ্ছে কি না, তা খেয়াল রাখতে হবে।
বাইরে বেরোলে অতি অবশ্যই মাস্ক পরাতে হবে শিশুকে। ছোটরা যে ঘরে আছে, তার আশপাশে ধূমপান করা যাবে না।
কোনও রকম জাঙ্ক ফুড খাওয়ানো চলবে না। রাস্তায় বিক্রি হওয়া রোল-চাউমিন, শরবত, আইসক্রিম, লস্যি অ্যালার্জির সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।
বাড়িতে বানানো কম তেলে রান্না করা খাবারই খাওয়াতে হবে ছোটদের। বেশি করে সব্জি, ফল, দানাশস্য খাওয়াতে হবে। বাড়িতেই বানিয়ে দিন শরবত, ফলের রস। শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে টক দইয়ের মতো প্রোবায়োটিকও দরকার। ছোট মাছ, চিকেন স্ট্যু, সব্জি, তাজা ফল খাওয়াতে হবে।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জামাকাপড় পরাতে হবে। বিছানার চাদর, বালিশ যেন পরিষ্কার থাকে। শিশুর ব্যবহার করার জিনিসপত্র আলাদাই রাখুন।
ঘন ঘন ত্বকে ফুস্কুড়ি, র্যাশ হলে নিজে থেকে ওষুধ না খাইয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
শিশুর ত্বকে এগ্জ়িমা যদি বার বার দেখা দেয়, তা হলে ধাতব কোনও গয়না না পরানোই ভাল। ঘামের সোডিয়াম ক্লোরাইডের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ত্বক লালচে র্যাশে ভরে যায়। এর থেকেও সাবধান থাকতে হবে। নখে ময়লা জমলে নখ কেটে দিন, কান ও নাক পরিষ্কার রাখুন। ধুলোময়লার থেকেও দূরে রাখার চেষ্টা করতে হবে।