ওজন কমালে ত্বকে কেমন প্রভাব পড়ে? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
ওজন কমানো, মেদ ঝরানো, ছিপছিপে হওয়ার অর্থ কি কেবলই তন্বী বা সুঠাম হওয়া? অথবা স্থূলত্বের সমস্যা মিটিয়ে স্বাস্থ্য ফিরে পাওয়া? তার ঊর্ধ্বেও রয়েছে এর গুরুত্ব। অতিরিক্ত চর্বি ঝরলে শরীরের পাশাপাশি ত্বকেও প্রভাব পড়ে। ওজন কমানোর ফলাফলের তালিকায় যোগ হওয়া উচিত ত্বকের উপকারের বিষয়টিও। তবে উপকারের পাশাপাশি অপকারও হতে পারে। আপনি কী ভাবে ওজন কমাচ্ছেন, তার উপর নির্ভর করে ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল হচ্ছে, না কি খারাপ। কত দ্রুত এবং কতটা স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমাচ্ছেন, সেটি এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
কী ভাবে ওজন কমানো উচিত? ছবি: সংগৃহীত।
মেদ ঝরানোর প্রভাব পৌঁছে যায় ত্বক ও চুল পর্যন্ত। শরীরের বাড়তি চর্বি ঝরতে শুরু করলে হরমোন, রক্তসঞ্চালন, প্রদাহ— সব কিছুতেই পরিবর্তন নজর করা যায়। ফলে চামড়া ও চুলের গঠনও পালটে যায়। ওজন কমলে শরীরে প্রদাহ অনেকটাই কমে যায়। ত্বকের কোষে প্রদাহ তৈরির জন্য দায়ী উপাদানগুলি জমে থাকে। সে কারণে নানা সমস্যার জন্ম হয়। ওজন কমলে সেগুলির পরিমাণও হ্রাস পায়। এর ফলে সোরিয়াসিস, এগ্জ়িমা, অ্যাকান্থোসিস নিগ্রিক্যান্স (শরীরের বিভিন্ন ভাঁজ ও খাঁজে যেমন, বাহুমূল, ঘাড়, গলা, কুঁচকিতে পুরু কালো ছোপ পড়ার প্রবণতা) বা হাইড্রাডিনাইটিস সুপারেটাইভার (এই অবস্থায় ত্বকের নীচে প্রদাহজনিত পিণ্ড, ফোঁড়া তৈরি হয়। প্রায়শই এমন জায়গায় তা দেখা যায়, যেখানে চামড়ায় চামড়ায় ঘর্ষণ হয়, যেমন বাহুমূল এবং কুঁচকি) মতো ত্বকের রোগের উপসর্গ ধীরে ধীরে কমে আসে। চর্বি কমার সঙ্গে সঙ্গে ইনসুলিনের কাজও স্বাভাবিক হয়। রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় থাকলে ঘাড় বা বাহুমূলের মতো জায়গায় দেখা দেওয়া গাঢ় ছোপ কমে যায়। একই সঙ্গে ত্বকের ভাঁজে ছত্রাক সংক্রমণের সম্ভাবনাও কম থাকে। কারণ, রক্তে শর্করার মাত্রা কমে গেলে ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাকের বংশবিস্তার রোধ হয়।
কিন্তু সেই ওজনহ্রাসই যদি দ্রুত গতিতে হয়, তা হলে ত্বকের ক্ষেত্রে হিতে বিপরীত হতে পারে বলে মত চর্মরোগ চিকিৎসকদের। দ্রুত ওজন কমে গেলে আকস্মিক ভাবে চুল পড়া বেড়ে যেতে পারে। এই রোগের নাম, টেলোজেন এফ্লুভিয়াম। তা ছাড়া, ত্বকের নীচের চর্বির স্তর কমে গিয়ে মুখের চামড়া শিথিল হয়ে যেতে পারে। পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে, নখ দুর্বল হয়, এমনকি ত্বকে স্ট্রেচ মার্ক তৈরি হয়।
তাই বলা হচ্ছে, নিয়ম মেনে স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমালে বা নিয়ন্ত্রণে রাখলে তা ত্বক ও চুলের জন্যও ভাল, এমনকি সামগ্রিক স্বাস্থ্যের জন্যও তা বাঞ্ছনীয়। শরীরে তৈরি হওয়া প্রদাহ কমানোই আসল। আর তার জন্য বিশেষ যাপন পদ্ধতি অনুসরণের প্রয়োজন। চটজলদি কোনও লক্ষ্যপূরণই আদপে কাম্য নয়।