রাত জেগে কাজে হাঁপানি বাড়ে? কারণ চমকে দেবে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
হাঁপানি বাড়ছে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহই নেই। শ্বাসের সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। করোনার কারণে শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়েছে, এমন ধারণা আছে অনেকেরই। তবে সেটিই একমাত্র কারণ নয়। হাঁপানি, সিওপিডি বা যে কোনও শ্বাসের রোগ হওয়ার নেপথ্যে আরও একটি কারণের কথা জানিয়েছেন ব্রিটেনের ম্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা। সেটি হল রাত জেগে কাজ। গবেষকদের দাবি, যে মহিলারা নাইট শিফটে বেশি কাজ করেন, তাঁদের হাঁপানি হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি।
‘ইআরজে ওপেন রিসার্চ’ গবেষণাপত্রে এই খবর প্রকাশিত হয়েছে। ম্যাঞ্চেস্টার ইউনিভার্সিটির গবেষক রবার্ট মেডস্টোন জানিয়েছেন, ২ লক্ষ ৭০ হাজার কর্মীর উপর সমীক্ষা চালানো হয়। দেখা যায়, নাইট শিফটে কাজ করেন যে পুরুষেরা, তাঁদের এমন সমস্যা বেশি নেই। কিন্তু মহিলারাই হাঁপানিতে বেশি ভোগেন। ব্রিটিনের ‘বায়োব্যাঙ্ক’ থেকে তথ্য নিয়েও দেখা গিয়েছে, রাত জেগে কাজ করেন যে মহিলারা, তাঁদের প্রায় ৫০ শতাংশের ‘সিভিয়ার অ্যাজ়মা’ রয়েছে। তুলনায় দিনের বেলা কাজে এ ঝুঁকি কম। আবার যাঁরা মিলিয়েমিশিয়ে দিনে ও রাতে কাজ করেন, তাঁদেরও শ্বাসের সমস্যার ঝুঁকি বেশি।
বেশির ভাগ শ্বাসকষ্টের জন্য দায়ী ফুসফুসের সমস্যা। মূলত অবস্ট্রাক্টিভ লাং ডিজ়িজ়ের কারণেই শ্বাসকষ্ট হয়। এই ধরনের দু’টি বড় রোগ রয়েছে। একটা হল হাঁপানি, অন্যটি ‘ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়’ (সিওপিডি)। নাইট শিফটের কাজে এই দুই রোগ হওয়ার ঝুঁকিই বেশি বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
‘ইউরোপিয়ান রেসপিরেটরি সোসাইটি’-র গবেষকেরাও এই বিষয়টি নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, শিফটের কাজের সঙ্গে হাঁপানির কী সম্পর্ক, তা এখনও সঠিক ভাবে জানা যায়নি। তবে অনুমান করা হচ্ছে, সারা রাত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে কাজ, রাত জেগে অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস, অতিরিক্ত ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্য সেবন হাঁপানির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। শরীরের একটি নিজস্ব ঘড়ি আছে, যা সময় মেনে চলে। দিনের বেলা কাজ আর রাতে ঘুম— এই নিয়মেই সে অভ্যস্ত। এই নিয়ম যদি উল্টে যায়, তখনই নানা সমস্যা দেখা দিতে থাকবে। আর যদি রাতের বেলায় অত্যধিক ধূমপান বা তামাকজাত দ্রব্যের নেশা করেন কেউ, সে ক্ষেত্রে ফুসফুসের বিপদ ঘণ্টি বেজে যাবে।
তবে রাত জেগে কাজ করেন যে পুরুষেরা তাঁদের থেকে মহিলাদের হাঁপানির ঝুঁকি বেশি কেন, সেটি নিয়েও মাথা ঘামাচ্ছেন গবেষকরা। মনে করা হচ্ছে, এ ক্ষেত্রে টেস্টোস্টেরন হরমোনের একটি ভূমিকা রয়েছে। এর আগের কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, টেস্টোস্টেরন হরমোনটি হাঁপানি নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ভূমিকা নেয়। টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে গেলে তখন ফুসফুসের রোগের ঝুঁকি বাড়ে। মহিলাদের যেহেতু এই হরমোনটি খুব কম পরিমাণে থাকে, তাই হয়তো হাঁপানি বা শ্বাসজনিত রোগের ঝুঁকি বেশি হয়। তা ছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে। মহিলাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে ইস্ট্রোজেন হরমোন। এই হরমোনটি যেমন প্রজনন, ঋতুচক্রে বিশেষ ভূমিকা নেয়, তেমনই শরীরের গড়ন, হাড়ের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধেও এর ভূমিকা আছে। যে মহিলাদের রজোনিবৃত্তি পর্ব পেরিয়ে গিয়েছে বা নানা অসুখের কারণে শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম, তাঁদের হাঁপানির ঝুঁকি বাড়তে পারে। আবার যাঁরা ‘হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি’ করাচ্ছেন, তাঁদেরও হাঁপানিতে ভোগার আশঙ্কা বেশি।
প্যানিক ডিজ়অর্ডার, অবসাদ বা অ্যাংজ়াইটি নিউরোসিসের মতো মনোরোগ, এর থেকেও দম বন্ধ লাগে। শ্বাসের সমস্যা হয়। দেখা গিয়েছে, উৎকণ্ঠা আর ভয় পেলে প্রায় ২৫ থেকে ৮৩ শতাংশ ক্ষেত্রে শ্বাসকষ্ট অনুভূত হয়, যার কোনও শারীরিক কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। দেশের 'ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ'-থেকে প্যানিক ডিজ়অর্ডার ও তার সঙ্গে হাঁপানির যোগসূত্র নিয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে গবেষকেরা দাবি করেছেন, অতিরিক্ত উৎকণ্ঠা থেকে হাঁপানির সমস্যা হতে পারে। 'আমেরিকান লাং অ্যাসোসিয়েশন' একই দাবি করেছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, হাঁপানি রয়েছে এমন ১০ শতাংশের প্যানিক ডিজ়অর্ডারও আছে। রাতের বেলা কাজে যদি উদ্বেগ বাড়ে, তা হলেও শ্বাসের রোগ হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে বলেই দাবি গবেষকদের।