সকালের এক কাপ কফির অনেক উপকারিতা। ছবি: সংগৃহীত।
আপনি কি কফিপ্রেমী? কিন্তু বেশি কফি খেলেই প্রিয়জনেরা বলেন, ‘‘এত বেশি কফি খেলে শরীর খারাপ করবে, ঘুম আসবে না, ক্যাফিন শরীরে প্রবেশ করা ভাল নয়।’’ অস্বাস্থ্যকর পানীয়ের তকমা পাওয়া কফিতে চুমুক না দিলেও চলে না। এ বার কফিপ্রেমী মধ্যবয়স্ক মহিলাদের জন্য বড় সুখবর! সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেল, কফি খেলে স্বাস্থ্যে উপকার হচ্ছে। আর সে উপকার দীর্ঘমেয়াদি। চলতি সপ্তাহে ওরল্যান্ডোর ‘আমেরিকান সোসাইটি ফর নিউট্রিশন’-এ সেই গবেষণা নিয়ে আলোচনা হয়। মূল গবেষক সারা মাহদভি বর্তমানে টোরোন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিনের অধ্যাপক।
কী জানা গেল গবেষণা থেকে?
গত ৩০ বছর ধরে প্রায় ৫০ হাজার মহিলাকে পর্যবেক্ষণ করা হয়। তাতে জানা যায়, রোজ সকালের এক কাপ কফি শক্তিবৃদ্ধি ছাড়াও আরও অনেক ভাবে শরীর সুস্থ করে। মস্তিষ্কের তীক্ষ্ণতা বাড়ে, মনের জোর বাড়ে, এমনকি দীর্ঘস্থায়ী জটিল রোগ থেকে দূরে রাখে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে মহিলারা তাঁদের মধ্যবয়সে ক্যাফিনযুক্ত কফি খেয়েছেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য আরও ভাল হয়েছে। গবেষকেরা এই ফলাফলের সঙ্গে চা বা ডিক্যাফ (ক্যাফিনহীন) কফির কোনও সম্পর্ক খুঁজে পাননি। উল্টোদিকে, কোলা বা সোডাজাতীয় পানীয়ের প্রভাব ঠিক উল্টো। বয়স বাড়ার সঙ্গে স্বাস্থ্যের অবনতি হয়েছে যাঁরা সোডার উপর নির্ভরশীল।
গবেষণায় দেখা গিয়েছে, যে মহিলারা তাঁদের মধ্যবয়সে ক্যাফিনযুক্ত কফি খেয়েছেন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য আরও ভাল হয়েছে। ছবি: সংগৃহীত।
১৯৮৬ সালে শুরু করা হয়েছিল এই গবেষণা। ২০১৬ সালে ৩,৭০৬ জন মহিলা গবেষকদের সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ করেন। তখন তাঁদের বয়স, ৪৫ থেকে ৬০ বছর। তাঁরা রোজ গড়ে ৩১৫ মিলিগ্রাম ক্যাফিন গ্রহণ করছিলেন। আজকের হিসেবে তিনটি ছোট কাপ বা একটি বড় কাপের দেড় কাপ কফি। শরীরে যতখানি ক্যাফিন প্রবেশ করেছিল, তার ৮০ শতাংশই কেবল কফি থেকে। এই গবেষণার মাধ্যমে মহিলাদের স্বাস্থ্যে কয়েকটি বৈশিষ্ট্য দেখতে চাইছিলেন গবেষকেরা। যেমন, মস্তিষ্কের উন্নতি, সচল শরীর, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, ১১টি জটিল রোগ থেকে মুক্তি, যেগুলির মধ্যে রয়েছে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক, টাইপ ২ ডায়াবিটিস, ক্যানসার ইত্যাদি।
গবেষক মাহদভি বলেন, ‘‘কফি আসলে বায়োঅ্যাক্টিভ কম্পাউন্ডে ভরা। ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টসের মতো উপাদান বয়সের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্যর উন্নতিতে ভূমিকা পালন করে। প্রদাহ, ধমনীর কার্যকারিতা, হজমপ্রক্রিয়া ইত্যাদিকে সুস্থ রাখার চেষ্টা করে। চা এবং ডিক্যাফ কফিতেও এই ধরনের উপাদান কিছু পরিমাণ রয়েছে বটে, কিন্তু ভিন্ন অনুপাতে। তবে গবেষণায় ভাল ফল করেছে ক্যাফিনযুক্ত কফি, কেবল ক্যাফিন নয়। তাই ক্যাফিনযুক্ত অন্য পানীয় যেমন, কোলা কিন্তু আদৌ শরীরের পক্ষে ভাল নয়।’’
সতর্কতা কী?
এই গবেষণা কিন্তু এ কথা বলছে না যে, কফি সব কিছুর ওষুধ। তা একেবারেই সঠিক নয়। সাধারণত দৈনিক দু’কাপ থেকে চার কাপ পর্যন্ত কফি খাওয়া নিরাপদ। এর বেশি হয়ে গেলে অনেকের পক্ষেই কফি অস্বাস্থ্যকর। তা ছাড়া, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে যে শারীরিক পরিবর্তনগুলি আসে, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সক্ষম নয় কফি। যাঁদের অন্যান্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে বা ক্যাফিন সহ্য করতে পারেন না, তাঁদের কফি এড়িয়ে যাওয়া উচিত। যে মহিলারা তাঁদের মধ্যবয়সে কফি খেয়ে সুস্থ ছিলেন, এবং এখনও আছেন, তাঁদের জন্য এই গবেষণা খুবই ইতিবাচক।